বৃহস্পতিবার ● ১৩ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » তিস্তার ভাঙনে দুই শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন
তিস্তার ভাঙনে দুই শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নে রাস্তাঘাটসহ শতাধিক বসতবাড়ি ও দুই শতাধিক একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনের কারণে পরিবারগুলো তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে চন্ডিপুর, কাপাসিয়া ও শ্রীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মূল তিস্তায় পলি জমে মূল নদী একাধিক শাখায় পরিণত হয়েছে। পানি বাড়ার সাথে সাথে ওইসব শাখা নদীতে তীব্র ¯্রােত দেখা দিয়েছে। স্্েরাতের কারনে উজানের ভাঙনে তিস্তার বালু চরের আবাদি বিভিন্ন ফসলের জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তিস্তার চরাঞ্চলে বেগুন, মরিচ,পটল, কড়লা, শষা, ঢেড়স, পাটসহ নানাবিধ ফসল রয়েছে। কিন্তু নদীর ভাঙনের কারণে সেসব ফসল কৃষকরা ঘরে তুলতে পারছে না। কথা হয়, হরিপুর ইউনিয়নের আয়নাল মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, তিস্তার ভাঙনে চরাঞ্চলের লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ সময় নদী ভাঙনের কথা নয়। অথচ গত চার মাস থেকে দফায় দফায় নদীতে ভাঙন চলছে। যার কারণে চন্ডিপুর ইউনিয়নের প্রায় হাজার বিঘা ফসলি জমি ইতিমধ্যে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। তিনি জানান, তার দুই বিঘা জমির তোষাপাট ও এক বিঘা জমির পটল ক্ষেত নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
চন্ডিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ফুল মিয়া জানান- ড্রেজিং করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ঠিক রাখা ছাড়া রোধ সম্ভব নয়। কারন দীর্ঘদিন ধরে পলি জমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। নদী ভাঙন ঠেকাতে হলে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সোলেমান আলী জানান, নদী ভাঙনের বিষয়টি তিনি জানেন। এব্যাপারে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাইবান্ধা নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, নদীভাঙন রোধ একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা। তবে ভাঙন ঠেকাতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে গত ২ মে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার তিস্তানদীর বিভিন্ন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন তিস্তা নদীকে রক্ষা এবং ভাঙন রোধ করতে হলে নদীর গতিপথ একমুখি করতে হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
গাইবান্ধায় দু’দিনব্যাপী জলবায়ু মেলা শুরু
গাইবান্ধা :: জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্থানীয় পৌর শহীদ মিনার চত্বরে বৃহস্পতিবার থেকে দু’দিনব্যাপী জলবায়ু মেলা শুরু হয়েছে। মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন।
মেলার উদ্বোধনী দিনে মেলা চত্বরে গ্রামীণ লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন ব্যানার ফেষ্টুন নিয়ে বর্ণাঢ্য র্যালী জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এই মেলায় বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পৌর পার্কে ৩১টি স্টল খোলা হয়েছে। জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা, সচেতনতা সৃষ্টি সম্পর্কিত লিফলেট প্রদর্শিত হয় ও বিতরণ করা হয়। মেলা চত্বরে দিনব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিকর প্রভাব, প্রকৃতি, বন্যা, নদী ভাঙন, জলে¬াচ্ছাস’ বিষয়ক চিত্রাংকন ও কুইজ প্রতিযোগিতা। এছাড়া মেলায় প্রজেক্টেরের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে তৈরী ডকুমেন্টরী প্রদর্শন করা হয়। গাইবান্ধা জলবায়ু পরিষদ এই মেলার আয়োজন করে।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পর্বে জলবায়ু পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাড. জিএসএম আলমগীর কবীরের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র অ্যাড. শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এসএম ফেরদৌস, প্রদীপ কুমার রায়, রৌফা খানম, কামারজানি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির গাইবান্ধা জলবায়ু পরিষদের আহবায়ক প্রমুখ।
সন্ধ্যায় মেলা চত্বরে ‘কার্যকর উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন স্থানীয় ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব ও সচেনতনা বিষয়ক একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারী কর্মকর্তা, পৌরসভার প্যানেল চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যসহ জলবায়ু পরিষদের সদস্যরা অংশ নেন। এছাড়া মেলা চত্বরে সন্ধ্যার পর একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।