সোমবার ● ১৭ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা ডুবি : এক নারীর মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ-১
ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা ডুবি : এক নারীর মরদেহ উদ্ধার, নিখোঁজ-১
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এতে ময়না বেগম (২৩) নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। এছাড়া এ ঘটনায় রুপবান বেগম নামে অপর এক নারী নিখোঁজ রয়েছে। নিহত ময়না বেগম ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের মানিককোড় গ্রামের ফয়জুল মিয়ার স্ত্রী। এছাড়া নিখোঁজ রুপবানু বেগম (৩৩) একই গ্রামের মালেক মিয়ার স্ত্রী।
গতকাল রবিবার (১৬ জুন) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ফুলছড়ির ফজলুপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের উজালডাঙ্গার পূর্বপাশের এলাকায় নৌকা ডুবির এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, ১০-১২ জন যাত্রী নিয়ে বালাসিঘাট থেকে উজালডাঙ্গা মানিককোড় চর এলাকায় যাচ্ছিলো শ্যালোইঞ্জিন চালিত একটি নৌকা। নৌকাটি ব্রহ্মপুত্র নদের উজালডাঙার পূর্বপাশে পৌঁছালে তীব্র স্রোতের সঙ্গে ঢেউয়ের ধাক্কায় হঠাৎ করে নৌকার তলা ফেটে যায়। এতে নৌকাটি ডুবে গেলে যাত্রীরা সাঁতার কেটে তীরে ফিরে আসলেও ময়না বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। এছাড়া রুপবানু বেগম নামে অপর এক নারী নদের পানিতে ডুবে নিখোঁজ হন।
ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নৌকা ডুবির ঘটনায় ময়না বেগম নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ হয় রুপবান বেগম নামে অপর এক নারী। নিখোঁজের পর থেকে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিখোঁজ নারীর কোন সন্ধান মেলেনি।
নৌকার মালিক জাহাঙ্গীর মিয়ার দাবি, তার নৌকাটি ভালোই ছিলো। নৌকা ছেড়ে দেয়ার আগেও শ্যালোইঞ্জিন এবং নৌকা ঠিক আছে কিনা দেখে নিয়েছেন। কিন্তু তীব্র স্রোত আর ঢেউয়ের ধাক্কায় হঠাৎ করে নৌকার তলা ফেটে যাওয়ায হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এদিকে, নৌকা ডুবির ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেযারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ। এসময় তিনি হতাহত পরিবারের খোঁজ খবর নেন।
ছয় বছরে পানিতে ডুবে নিহত ৩০ নদী ফায়ার স্টেশনের দাবি গাইবান্ধাবাসীর
গাইবান্ধা :: নৌ-পথে দুর্ঘটনায় ও খাল-বিল, পুকুর-দিঘীসহ জলাশয়ের পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত উদ্ধারের জন্য গাইবান্ধার পাঁচটি ফায়ার স্টেশনের একটিতেও নেই কোন ডুবুরি। গাইবান্ধার নদ-নদীগুলোসহ পানিতে ডুবে কেউ নিখোঁজের ঘটনা ঘটলে অপেক্ষা করতে হয় রংপুর থেকে আসা ডুবুরি দলের। এতে করে বিপাকে পড়তে হয় স্বজনহারা পরিবারগুলোকে। শুধু তাই নয়, ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনা নদীবিধৌত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার দেড়শোর বেশি চরাঞ্চলগুলোতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলে নিজস্ব স্পিডবোট না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা যায়না আগুন নেভাতে। আর এ কারণে চরাঞ্চলে অগ্নিকা-ের ঘটনায় কেউ কখনও জানায়ও না তাদেরকে। এজন্য ফুলছড়ির বালাসীঘাটে নদী ফায়ার স্টেশনের দাবি করেছেন এ জেলার মানুষ।
গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিস সুত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত এ জেলায় নদ-নদী ও পুকুরসহ অন্যান্য জলাশয়ের পানিতে ডুবে মানুষ নিখোঁজ হলে গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ ও ফুলছড়ি ফায়ার সার্ভিসে ডুবুরি চেয়ে কল আসে ২২ টি। এসব ঘটনায় ২০১৩ সালে মারা যায় দুইজন, ২০১৪ সালে চারজন, ২০১৫ সালে তিনজন, ২০১৬ সালে একজন, ২০১৭ সালে আটজন, ২০১৮ সালে দুইজন এবং চলতি বছরে মারা গেছে ১০জন। নদীতে ডুবে নিখোঁজ রয়েছে দুইজন ও এসব ঘটনায় আহত হয়েছে ৩৫ জনের বেশি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর এ জেলায় ডুবুরি পদ সৃজনের জন্য তথ্য চেয়ে নেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত আর কোন অগ্রগতি নেই ডুবুরি পদ সৃজনের। গাইবান্ধায় কোন ডুবুরি নেই। গাইবান্ধাসহ রংপুর বিভাগের আট জেলার জন্য রংপুর ফায়ার সার্ভিসে ডুবুরি রয়েছে মাত্র দুইজন। এই দুইজন ডুবুরি চষে বেড়ান আট জেলা। এই বাহিরেও নদ-নদীসহ অন্যান্য জলাশয়ের পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ও নিখোঁজের ঘটনা রয়েছে।
ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ বলেন, এ জেলায় রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ তিস্তা ও যমুনার মতো খর¯্রােতা বড়-বড় নদ-নদী। অথচ নদীতে কেউ ডুবে গেলে তাদেরকে দ্রুত উদ্ধার করতে এ জেলায় কোন ডুবুরি নেই। অনেক সময় নদীতে ডুবে কেউ নিখোঁজ হলে পরদিন মরদেহটি ভেসে ওঠার অপেক্ষায় থাকতে হয়। এটা স্বজন হারানো পরিবারের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। তাই নদীতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত উদ্ধার এবং চরাঞ্চলে দ্রুত অগ্নিনির্বাপণের জন্য এ জেলায় একটি নদী ফায়ার স্টেশন চালু করা প্রয়োজন।
গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম সরকার বলেন, ফুলছড়ির বালাসীঘাটে একটা নদী ফায়ার স্টেশন চালু করলে সেখানকার ডুবুরি যেমন নদ-নদীগুলোতেও উদ্ধার অভিযান চালাতে পারবে। তেমনি পুকুরসহ মেইনল্যান্ডের অন্যান্য জলাশয়ের পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত উদ্ধার করতে পারবে। এ ছাড়া চরাঞ্চলে লাগা আগুন নেভাতেও যেতে পারবে নদী ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা।