শনিবার ● ২২ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » পাবনা » চাটমোহর গুয়াখড়া স্টেশনের বেহাল অবস্থা
চাটমোহর গুয়াখড়া স্টেশনের বেহাল অবস্থা
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি :: পাবনার চাটমোহর গুয়াখড়া রেলস্টেশনের বেহাল অবস্থা। দেখে বোঝাই যাবেনা এটা একটা রেলস্টেশন। টিকিট ঘরের পেছনের দেয়াল ভেঙ্গে গেছে অনেক বছর আগে। ভেতরে রাখা আছে দু’টো ভ্যান। টিকিটঘরের ভেতরে মহেলা মতিন মেম্বর পাট কিনে লাট দিয়ে রাখছেন। তার একটু উপরেই ঝুলছে ট্রেন ছাড়ার সময় বাজানো সেই বিখ্যাত ট্রেনঘন্টি।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেলকোয়ার্টারের ভেঙ্গেপড়া দরদালানে বটপাকুড়ের গাছ মাথা তুলেছে। স্টেশনের সামনে আব্দুর ছাত্তারের স্নাকবারটি বড়বাড়ীর মেয়ের মত বেশ সাজুগুজু করে বসে আছে। ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেলপথের প্রায় পরিত্যক্ত একটি এই গুয়াখড়া স্টেশন। এই স্টেশনের কুলি ছিলেন মোকছেদ আলী (৬৯) তিনি জানান, কাজ থেকে অবসর নিলেও এখনও অবসর সময় আটাই স্টেশনের আশে পাশের দোকানে বসে। পাকিস্তান আমল থেকে এই স্টেশনের যাত্রীদের মালামাল উঠানো-নামানোর কাজ করেই জীবন পাড় করেছি। তিনি আরো বলেন, কয়েক বছর আগে এই স্টেশনের যৌবন ছিল। এখান থেকে শত শত মানুষ ট্রেনে উঠে বিভিন্ন জায়গায় যেতো, বিভিন্ন জায়গা থেকে আসতো। টিকিট ছিল, টিকিট মাস্টার ছিল, ট্রেন আসার আগে, ট্রেন ছাড়ার সময় ঘন্টি বাজানো হতো। এখন আর কোন কিছুই নেই/হয় না এই স্টেশনে।
ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ রেল লাইনের (পাবনার চাটমোহর উপজেলার মধ্যে) গুয়াখড়া স্টেশনের করুনদশা। কোথাও কেউ নেই রেল বিভাগের। অথচ এখনও এটি একটি রেল স্টেশন। লোকাল ট্রেনগুলো থামে। যাত্রী-মালামাল উঠানামা করে এই স্টেশন থেকে। স্টেশন মাস্টারের ঘর, টিকিট ঘর, যাত্রীদের বিশ্রামাগার তালাবদ্ধ। দেয়ালে ট্রেনের সময়সূচী, ট্রেন ভাড়ার তালিকা সবই আছে। স্টেশনের বটতলার একটি চায়ের দোকানের ভাঙ্গা বেঞ্চে বসে আছেন ঈশ্বরদীর ব্লাকপাড়ার সুখজান (৫০), আকলিমা (৩০), শাফিয়া খতুন (৫০), আমবিয়া খতুন (৫০)। বেলা ২.৫৫ মিঃ ফাইভ ডাউন মেইল ট্রেন ধরে ঈশ্বরদী যাবার জন্য। জানতে চাইলে বৃদ্ধা সুখজান বলেন, এইডা আবার একটা স্টেশন হোলো নাকি। এর চাইতে নৌকার খেয়াঘাটও ভালো, বসার জায়গা থাকে। এখানে তাও নেই। আকলিমা খাতুন অতি দুঃখে ক্ষোভে বলেন, আমরা হোলাম মিয়ে ছাওয়াল যাদি প্ররকৃতির ডাক আসে তাহলে কোনে যাবো। এই মরার স্টেশনে তো কিছুই নাই।
স্টেশনের মুদি দোকানদার আব্দুর ছাত্তার (৩৮) বলেন, প্রচুর যাত্রী ওঠে এখান থেকে এখনও। কিন্তু টিকিট, মাল বুকিং এখন সবই হয় ট্রেনের মধ্যে। তাই স্টেশনের সাথে ট্রেনের কোনো সম্পর্ক নাই।
স্টেশনের চায়ের দোকানি হাফিজ (৪৪) বলেন, স্টেশন থাকপি আর রেলওয়ে যাত্রী সেবা দিবি লয় তাই কি হয়। ইডাতো ভাই মগের মুল্লুকের কথা হলো। স্টেশনের কুলি গাফ্ফার আলী (৪৯) বলেন, এখানে শহীন নামের একজন পোটার পোস্টিং আছে। ব্যাটা বছরেও একদিন আসে না। বেতন তোলে পাকশী অফিস থেকে।
স্টেশনের পাশেই রেলের জায়গায় বাস করছেন সাবেক রেলকর্মী মৃত শুকুর আলীর ছেলে এনজিও কর্মী গোলাম রাব্বানী বলেন, ট্রেন কখন কোথায় যাবে এসব তথ্য যাত্রীরা কার কাছে জানবে। যাত্রীরা তাই স্টেশনে এসে আশপাশের দোকান অথবা বাড়ীতে গিয়ে জেনে নেয়। টিকিট কাটার কোন ব্যবস্থা নেই সব যাত্রীরা ট্রেনের মধ্যে কিটিক কাটে।
নারিকেল ব্যবসায়ী গোলজার হোসেন তিনি বলেন, গাড়ীর মধ্যে টিকি করবো মালও বুক করবো। আগে স্টেশনই ভালো ছিলো। এখন অনেক বেশি টাকা লাগে।
স্টেশনের কুলি জাফর আলী (৬৪) বলেন, রাতদিন মিলে এই স্টেশনে এখনো ৪ টি লোকাল ও মেল ট্রেন থামে। ঈশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ, চাপাই-জয়দেবপুর এসব ট্রেন যায় আসে।
যাত্রী ও এলাকাবাসী রেলকর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে এই স্টেশন মেরামত করার জন্য।