সোমবার ● ৮ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » নওগাঁ » প্রভাবশালীর অত্যাচারে দিশেহারা অসহায় বিধবা শিউলী বেওয়া
প্রভাবশালীর অত্যাচারে দিশেহারা অসহায় বিধবা শিউলী বেওয়া
আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: নওগাঁর আত্রাই উপজেলার রাণীনগর গ্রামের অসহায় গৃহবধূ বিধবা শিউলী বেওয়া (৪৭)। গত ২০১১সালে হারিয়েছেন স্বামী মোসলেম প্রামাণিককে। ঘরে রয়েছে তিন মেয়ে। স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের অত্যাচারের কারণে পড়ালেখা বন্ধ করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ছোট মেয়ে বর্তমানে গ্রামের রাণীনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে।
স্বামীকে হারানোর পর শ্বশুড় হাফিজুল মাস্টার দুই মেয়েসহ নিজেদের ভোরনপোষনের জন্য শিউলী বেগমকে ৬বিঘা ধানের জমি ও ১বিঘা চৈতালী জমি ভোগদখলের অধিকার প্রদান করেন। এরপর থেকে ভালোই চলছিলো স্বামী হারা শিউলী বেওয়ার সংসার। কিন্তু গত ২০১৮সালে শিউলী বেওয়ার শ্বশুড় হাফিজুল মাস্টার মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় শিউলী বেওয়ার উপর অত্যাচার। হাফিজুল মাস্টারের মৃত্যুর দিন থেকেই তার বড় ছেলে হায়দার আলীসহ তার চার বোন শিউলী বেওয়াকে তার শ্বশুড়ের দেওয়া জমিজমা জোরপূর্বক কেড়ে নেয় এবং অংশিদার হিসেবে শিউলী বেওয়াকে মাত্র দুই বিঘা জমি ভোগদখল করতে দেয়। এতে করে শিউলী বেওয়া অসহায় জীবন-যাপন করে আসছেন। এছাড়াও দুই জমির উপর নির্মিত ধানের চাতাল, দোকান ঘরসহ অন্যান্য সম্পত্তির নায্য অধিকার থেকে জোরপূর্বক বঞ্চিত করে রেখেছে হায়দার আলীসহ তার পরিবারের সদস্যরা। এমন কি সম্প্রতি শিউলী বেগমের বাড়ির উঠানে টিনের বেড়া দিয়ে একটি ছোট ঘর তৈরি করতে গেলে হায়দার আলীর পরিবারের সদস্যরা সেই ঘর ভেঙ্গে দেয় এবং বিধবা শিউলী বেওয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ মারপিট করে। এতে করে শিউলী বেওয়ার প্রায় ২০হাজার টাকা ক্ষতি হয়। এছাড়াও সব সময় শিউলী বেওয়া ও তার মেয়েকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। হায়দার ও তার পরিবারের সদস্যদের ভয়ে গ্রামের কোন মানুষরা শিউলী বেওয়ার সঙ্গে মেলামেশা করতে পারে না। এমনকি শিউলী বেওয়ার বাড়ি ও জমিতে কাজ করার জন্য কোন মানুষকে আসতে দেওয়া হয় না। এমতাবস্তায় শিউলী বেওয়া তার মেয়েকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। অনেকটাই একঘরে জীবন-যাপন করছেন বিধবা শিউলী বেওয়া। গ্রামের মেম্বার ও মাতবরদের নিয়ে এই বিষয়ে একাধিবার বৈঠক হলেও সুষ্ঠু বিচার পাননি শিউলী বেওয়া এমনটি অভিযোগ তার।
বিধবা শিউলী বেওয়া বলেন তার শ্বশুড়ের মৃত্যুর পর থেকে তাদের উপর হায়দার আলী, তার পরিবারের সদস্য ও চার ননদদের অত্যাচারের মাত্র আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে দুই মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছেন। দুই জামাই তাদের ভয়ে শ্বশুড়ের বাড়িতে আসতে ভয় পায়। দিন দিন তাদের অত্যাচারের মাত্রা বেড়েই চলেছে। হায়দার আলী প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কোন কথা বলতে পারে না। এমতাবস্থায় আমি ছোট মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন পার করছি। ইতিপূর্বে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ দিলেও তা সমাধান করা হয়নি। তারা আমার সন্তানদের ও আমাকে স্বামী ও শ্বশুড়ের সম্পত্তির নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার জন্যই এসব কর্মকান্ড করে আসছে যাতে আমি সব ছেড়ে দিয়ে তাদের অত্যাচারের কারনে স্বামীর ভিটে-বাড়ি ছেড়ে চলে যাই। সম্প্রতি আমার স্বামীর দেওয়া জায়গার উপর একটি কুড়ে ঘর তুলতে গেলে তারা আমার ঘর ভেঙ্গে দেয় এবং আমাকে মারপিট করে। আমি এই ঘটনায় আত্রাই থানায় গতকাল রবিবার বিকেলে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা রাখি পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমি সুষ্ঠু একটি বিচার পাবো। প্রশাসন আমার ও আমার সন্তানদের নায্য অধিকার ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন।
হায়দার আলী বলেন আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ মিথ্যে ও বানোয়াট। তবে এই বিষয়টি বসে সমাধানের লক্ষ্যে আমি স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করবো।
বিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন প্রায় ১বছর আগে বিধবা শিউলী বেওয়া এই বিষয়ে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে আমি উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করি। একাধিক বৈঠকে বিবাদী হায়দার আলী উপস্থিত না হলে আমি তা সমাধান করতে পারি নাই। পরবর্তিতে আমি শিউলী বেওয়াকে আইনের আশ্রয়ে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান করি।
আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি-তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন আমি এই বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।