মঙ্গলবার ● ২৩ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় ৩৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ : বিলীন হয়ে গেছে ৩ প্রাথমিক ও ১ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
গাইবান্ধায় ৩৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ : বিলীন হয়ে গেছে ৩ প্রাথমিক ও ১ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: বন্যার কারণে গাইবান্ধায় সাত উপজেলার ৩৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পাঠদান বন্ধ থাকা এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩০৯টি বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে তিনটি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে।
গাইবান্ধা প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, বন্ধ থাকা বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চারটি কলেজ রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধিকাংশই দুর্গম চরে অবস্থিত। এছাড়া বন্যা ও ভাঙনের মুখে থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ হুমকির মুখে রয়েছে আরও ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হেসেন বন্যার পানিতে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাঠ তলিয়েছে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ের মাঠ ও ক্লাস রুমে কোমর পানি উঠেছে। কিছু বিদ্যালয়ের চারপাশে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। আবার দুর্গত এলাকার অনেক মানুষ বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। ফলে ৫ উপজেলার চলমান বন্যায় ২৮১টি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বন্যার কারণে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে সদর ও ফুলছড়িতে তিনটি বিদ্যালয়। পানি কমলে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু করা হবে। তবে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য বন্ধের দিনসহ অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেন জানান, বন্যায় বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ও অনেক প্রতিষ্ঠানে বন্যার্তদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ কারণে জেলার ৮৪টি মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসা বন্ধ রয়েছে। ভাঙনের ফলে একটি বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়েছে। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১০টি মাদ্রাসা। এছাড়া কয়েকটি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোতে পাঠদান শুরু হবে। পাঠদান বন্ধ ও বিদ্যালয় বিলীনসহ ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়টি লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত জনগণের দূর্ভোগ : পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ পরিদর্শন
গাইবান্ধা :: ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি দ্রুত কমছে। মঙ্গলবার ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার ৩৪ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি ১৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে।
পানি কমতে শুরু হলেও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। এখনও অনেক ঘরে পানি রয়েছে। তাই বাঁধসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত বানভাসি লোকজন এখনও ঘরে ফিরে যেতে পারছে না। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট, বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং স্যানিটেশন সমস্যা প্রকট। ফলে জনগণকে নানা দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে বাঙ্গালি ও করতোয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় পলাশবাড়ি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার পৌরসভাসহ কয়েকটি গ্রামে নতুন করে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়াও ঘাঘট নদীর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় খোলাহাটি ইউনিয়নের চকমামরোজপুর, কাজীপাড়া, বাহারবন পশ্চিমপাড়া, সরকারপাড়ার কিছু অংশ এবং ডেভিডকোম্পানীপাড়ার পশ্চিম অংশে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, এদিকে বন্যায় জেলার সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের ৪২৪টি গ্রাম ও ২টি পৌরসভার ৫ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৭০টি। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৯৭টি। এছাড়া ১৪ হাজার ২১ হেক্টর আউশ ধান, আমন বীজতলা, রোপিত আমন, পাট ও শাকসবজি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে এবার বন্যায় ১টি গরু, ৩ হাজার ৭২০টি হাঁস-মুরগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৭০ মে. টন চাল, ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে গাইবান্ধা থেকে বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে গিয়ে রেলপথের বিভিন্ন জায়গায় রেলপথ বিধস্থ হওয়ায় ট্রেন চলাচল এখনও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বর্তমানে লোকাল এবং মেইল ট্রেন গাইবান্ধা থেকে বোনারপাড়া পর্যন্ত ট্রানজিট পদ্ধতিতে চলাচল করছে। অপরদিকে আন্তগর লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি পাবর্তীপুর-সান্তাহার হয়ে যাতায়াত করছে। এদিকে সোমবার বিকেলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম এবং অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শাহনেওয়াজ সহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা গাইবান্ধা থেকে বোনারপাড়া জংশন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ পরিদর্শন করেন। এসময় জেনারেল ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, রেলপথ কবে স্বাভাবিক হবে সেব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন মন্তব্য করতে পারেননি। তবে ঈদুল আজহার আগেই যাতে ট্রেন চলাচল সম্ভব হয় সেব্যাপারে চেষ্টা করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গাইবান্ধায় জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস পালিত
গাইবান্ধা :: জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে একটি র্যালী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বর থেকে র্যালীটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
পরে কালেক্টরেট মিলনায়তনে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডাঃ এবিএম আবু হানিফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপ-পরিচালক এসএম ফেরদৌস, গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিজানুর রহমান, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, পিটিআই সুপার শামছি আরা প্রমুখ। বক্তারা তৃনমূল পর্যায়ের সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তাবায়নসহ স্ব-স্ব বিভাগের সেবা মূলক কাজ তরান্বিত করার গুরুত্বারোপ করেন।