

শুক্রবার ● ২৬ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ হাজার ঘরবাড়ি : নষ্ট ১৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল
গাইবান্ধায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ হাজার ঘরবাড়ি : নষ্ট ১৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধার সাত উপজেলায় চলমান বন্যায় ৫৯ হাজার ৮৭০টি পরিবারের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ডুবে নষ্ট ১৪ হাজার ২১ হেক্টর জমির আউশ ধান, আমন বীজতলা, পাট ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল। বন্যায় ভেসে গেছে প্রায় ৬ হাজার ২৯০টি পুকুর-খামারের মাছ। দুর্গত এলাকার অধিকাংশ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়ন প্রকল্প, উচু জায়গা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও স্কুল-প্রতিষ্ঠিনের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। কাজকর্মহীন দরিদ্র এসব মানুষের মধ্যে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির অভাব ও পয়ঃনিষ্কাশনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন ধরে পানিবন্দি থাকায় তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্যের সংকট নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন দূর্গতরা।
প্রশাসন ও বিভন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বিতরণ করা ত্রাণ সামগ্রী চাহিদার তুলায় অনেক অপ্রতুল বলে অভিযোগ বানভাসীদদের। দূর্গম চরাঞ্চলসহ, বাঁধ, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির কারণে জেলার সাত উপজেলায় ৪৪৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১০৫টি। গত এক সপ্তাহে পানিতে ডুবে ও সাপের কামড়ে শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সড়ক ও বাঁধের অন্তত ২০টি পয়েন্ট ভেঙে এবং ধ্বসে যাওয়ায় গাইবান্ধা জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার। বাদিয়াখালি-ত্রিমোহনী রেল লাইনে পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে ১ কিলোমিটার এলাকার স্লিপার, ধ্বসে গেছে পাথর। এতে এক সপ্তাহ ধরে গাইবান্ধা-বোনারপাড়া থেকে রেল যোগাযোগ চলছে বিকল্প পথে।
জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত বন্যা পরিস্থিতির সর্বশেষ তৈরী প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, বন্যায় দুটি পৌরসভা ও সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল-নিম্নঞ্চলের ৪২৪টি গ্রামের বির্স্তীণ জনপদ তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৩৯৭ জন মানুষ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে দেখানো হয় ৫৯ হাজার ৮৭০টি পরিবার। এসব পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত টিউবয়েলের সংখ্যা ১০ হাজার ৫৯টি। ৬ হাজার ২৯০টি পুকুর ও জলাশয়ের বিপুল পরিমাণ মাছ ভেসে গেছে। দুর্গত এলাকার ১৪ হাজার ২১ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ১৯ কিলোমিটার, পাকা সড়ক ৫৯৩ কিলোমিটার, ২৬৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৩১টি ব্রীজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, ব্রক্ষ্মপুত্রের পানি কমে বিপদসীমার ৩২ সে. মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত তা বেড়ে ৪৯ সে. মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি ১২ সে. মি থেকে বেড়ে শহর পয়েন্টে বিপদসীমার ২৬ সে. মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বৃষ্টিপাত অব্যহত ও উজানের ঢলে আবারও নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ার আশষ্কা রয়েছে।