শনিবার ● ২৭ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় বন্যা কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জনদূর্ভোগ : পানিবাহিত রোগে প্রকোপ বৃদ্ধি
গাইবান্ধায় বন্যা কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জনদূর্ভোগ : পানিবাহিত রোগে প্রকোপ বৃদ্ধি
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধার সবকটি নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি এখনও বিপদসীমার উপরে। গাইবান্ধায় বন্যা কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাটের কারণে জনদূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বসতবাড়ি থেকে এখনও পানি সরে না যাওয়ায় গাইবান্ধা পৌর এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে তারা ঘরে ফিরতে পাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে তারা গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস করে মানববেতর জীবন যাপন করছে। জেলার অধিকাংশ এলাকা দীর্ঘদিন যাবত বন্যা কবলিত হয়ে থাকায় শ্রমজীবি মানুষরা অর্থ সংকটে পড়েছে। সেজন্য নিম্নবিত্ত পরিবার অধিকাংশ পরিবার ত্রাণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
বন্যা কবলিত এলাকা ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশী আক্রান্ত হচ্ছে। এদিকে সিভিল সার্জন ডাঃ এবিএম আবু হানিফ জানান, সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ১০৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, এদিকে বন্যায় জেলার সাত উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের ৪২৪টি গ্রাম ও ২টি পৌরসভার ৫ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৯ হাজার ৮৭০টি। তাদের বেশীর ভাগই নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে এসে উঠছে। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৯৭টি। এছাড়া ১৪ হাজার ২১ হেক্টর আউশ ধান, আমন বীজতলা, রোপিত আমন, পাট ও শাকসবজি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে এবার বন্যায় ১টি গরু, ৩ হাজার ৭২০টি হাঁস-মুরগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ২৪৫ মে. টন চাল, ২১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালকের গাইবান্ধার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধার আপ স্টেশন ত্রিমোহিনী-বাদিয়াখালী-বোনারপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ফুট রেলের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও মাঝে মাঝে অসংখ্য গর্তে বন্যার পানি জমে রয়েছে। ফলে গত ১৬ জুলাই মঙ্গলবার থেকে একটানা ১২ দিন যাবত লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে রাজধানী ঢাকার সাথে সরাসরি ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের রেল যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে আজ শনিবার বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান গাইবান্ধা থেকে বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের বলেন, পুনঃরায় বন্যা বা বৃষ্টির প্রকোপ না বাড়লে আসন্ন ঈদুল আজহার পূর্বেই উত্তরাঞ্চলের সাথে লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটে রেল যোগাযোগ পুনঃ স্থাপিত করা হবে। তিনি উল্লেখ্য করেন, ত্রিমোহিনী থেকে বোনারপাড়া জংশন পর্যন্ত ১ হাজার ফুট রেল লাইনের নিচের মাটি ও পাথর পানির তোড়ে ভেসে গেছে এবং এসব এলাকায় রেললাইন ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। তদুপরি বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং তাতে বন্যার পানি জমে আছে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এ সমস্ত এলাকা দ্রুত মেরামত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে রেল যাত্রীরা ঈদুল আজহায় স্বাচ্ছন্দে যাতায়াত করতে পারে। রেল লাইন মেরামত না পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে রংপুর থেকে গাইবান্ধা পর্যন্ত রংপুর এক্সপ্রেস এক্সটেনশন করে পার্বর্তীপুর হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করানো যায় কিনা সেব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে গত ২২ জুলাই সোমবার ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ পরিদর্শনে আসেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলামসহ রেলের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা রেলপথ পরিদর্শন করেন। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তারা জানিয়েছিলেন, যেভাবে রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে এ রুটে সরাসরি ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে। তবে আসন্ন ঈদুল আজহার আগে বিকল্প ব্যবস্থায় ট্রেন চলাচল শুরু করার চেষ্টা করা হবে।
তবে বর্তমানে লোকাল এবং মেইল ট্রেন গাইবান্ধা থেকে বোনারপাড়া পর্যন্ত ট্রানজিট পদ্ধতিতে চলাচল করছে। লালমনিরহাট ও দিনাজপুর থেকে ডাউন ট্রেনগুলো গাইবান্ধা স্টেশন পর্যন্ত চলাচল করছে। অপরদিকে সান্তাহার জংশন থেকে বোনারপাড়া পর্যন্ত মেইল ও লোকাল ট্রেনগুলো চলাচল করছে। এছাড়া আন্তঃগর লালমনি এক্সপ্রেস ও রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি পার্বর্তীপুর-সান্তাহার হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছে।
গাইবান্ধায় হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ত্রাণ বিতরণ
গাইবান্ধা :: হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া গাইবান্ধা জেলার শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে হতকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া এবং সদরের বাদিয়াখালী ও কামারজানীর বন্যাদুর্গতদের মাঝে জরুরি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে প্রতি প্যাকেটে ছিল ২ কেজি চিরা, ৫শ’ গ্রাম চিনি, বিস্কুট, সাবান এবং ওষুধ। বন্যাদুর্গত এলাকার ৮শ’ পরিবারের মাঝে ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকার এসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এসময় ত্রাণ বিতরণ কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫ জনের একটি দল অংশগ্রহন করে।