রবিবার ● ২৮ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যা মামলায় ৯০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে পিবিআই
সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যা মামলায় ৯০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে পিবিআই
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যা মামলায় ৯০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আজ রবিবার গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন পিবিআই গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল হাই সরকার। এই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তারা হচ্ছেন পিবিআই’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আকতার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন (বর্তমানে মৃত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল হাই সরকার ও গোবিন্দগঞ্জ থানার এসআই আব্দুল গফুর, ইন্সপেক্টর আল মামুন মোহাম্মদ নাজমুল আহম্মেদ।
অপরদিকে দায়িত্বপালনকালে পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা চালিয়ে ৮ পুলিশ সদস্যকে আহত করার মামলায় একইদিনে ৩৯ জন আদিবাসী সাঁওতালকে আসামি করে একই আদালতে অপর একটি চার্জশীট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই’র ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ জুলফিকার আলী ভুট্টু।
পিবিআই সুত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সাঁওতাল পল্লীতে হামলার মামলা তদন্ত শেষে ৯০ জনকে অভিুযক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়। ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও সঠিক তদন্ত শেষ করতে সময় লাগে প্রায় আড়াই বছর। সঠিক তদন্ত ও মূল আসামিদের আইনের আওতায় আনতেই চার্জশীট দাখিল করতে কিছুটা সময় লেগেছে বলে পিবিআই সুত্রে উল্লেখ করা হয়। উল্লেখ্য, মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে অভিযুক্তদের মধ্যে ২৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া একজন আসামির স্বীকারোক্তি মোতাবেক কয়েকটি বাড়ি থেকে পাওয়ার টিলার, শ্যালো মেশিনসহ লুটপাট হওয়া বেশ কিছু মালামালও উদ্ধার করা হয়।
চার্জশীটে অভিযুক্ত ৯০ আসামির মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, মাহিমাগঞ্জ সুগার মিলের (জিএম-অর্থ) নাজমুল হুদা, সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাকিল আহম্মেদ বুলবুল, ইউপি সদস্য শাহ আলম, আইয়ুব আলী ও চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠালেও তারা সকলেই জামিনে রয়েছে। অন্যান্য আসামীরা পলাতক রয়েছে। কিন্ত সাওতাল পল্লীতে অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িত কোন পুলিশ সদস্যের নাম পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের আওতাধীন সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে উৎপাদিত আখ কাটাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারি ও পুলিশের সাথে স্থানীয় আদিবাসীদের (সাঁওতাল) দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ৮ পুলিশ সদস্যসহ দু’পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়।
চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়, গোবিন্দগঞ্জের মাহালিপাড়া গ্রামের মৃত সমেশ্বর মুরমু’র ছেলে স্বপন মুরমু বাদি হয়ে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে একই উপজেলার হরিণমারি নতুন পল্লী গ্রামের মাহলে হেমব্রমের ছেলে থোমাস হেমব্রম অপর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এ দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ৫শ’ থেকে ৬শ’ জনকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে ২৫ জন গ্রেফতার হয় এবং গ্রেফতারকৃত আসামি একই উপজেলার সারাই গ্রামের শাহাজাহান আলীর ছেলে মিঠু মিয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
গাইবান্ধায় পুলিশের গণসচেতনতামূলক র্যালী
গাইবান্ধা :: বিভিন্ন ধরণের গুজব-অপপ্রচার ও আইন অমান্যকরণ রোধে আজ রবিবার গণসচেতনতামূলক একটি বিশাল র্যালী পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালীতে পুলিশের সদস্য, রাজনীতিবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, পুলিশিং কমিটির নেতৃবৃন্দ, ধর্মীয় নেতাসহ সর্বস্তরের মানুষ স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশ গ্রহণ করেন।
গুজব, অপপ্রচার, গণপিটুনি, আইনকে নিজেদের হাতে তুলে নেয়ার প্রবনতা প্রতিরোধে জেলা পুলিশ আয়োজিত গণসচেতনতা মূলক র্যালীর আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা পুলিশ সুপার প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নান মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, এম আব্দুস সালাম প্রমুখ।
পুলিশ সুপার প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে ছেলে ধরা সন্দেহসহ নানা গুজব ছড়িয়ে জনমনে অশান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বিঘিœত হওয়ার আশংকা দেখা দিচ্ছে এবং জনমনে উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। সেইজন্য এধরণের গুজব সৃষ্টি করার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আইন হাতে না নিয়ে সন্দেহজনক কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সাথে সাথেই তা পুলিশকে জানানোর জন্য তিনি আহবান জানান।