বৃহস্পতিবার ● ১ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » গাইবান্ধায় বন্যায় ৯২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
গাইবান্ধায় বন্যায় ৯২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: এবারের ভয়াবহ বন্যায় গাইবান্ধায় কৃষিক্ষেত্রে মারাত্মক বিপর্যয় হয়েছে। জেলায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘদিন ফসলী জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় এসব ক্ষেতের ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এবারের বন্যায় জেলায় ১৪ হাজার ২১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমির ফসল সম্পুর্ণ রূপে এবং ৮ হাজার ৫০১ হেক্টর জমির ফসল আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে এ ক্ষতির পরিমাণ ৯২ কোটি ১ লাখ ১৭ হাজার।
বন্যায় চরাঞ্চলে রোপিত আউশ ধানের ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশী। বিলুপ্ত প্রায় এ ধান চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কৃষকদের কৃষি প্রনোদনা দেয়া হয়। প্রনোদনা হিসাবে প্রায় ৬০ লাখ টাকার উন্নত জাতের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। এবারে জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও প্রনোদনার কারণে জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আউশ ধানের চাষ হয়েছে ১০ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ৯ হাজার ৮৩৫ হেক্টরে উফশী জাতের এবং ১৬৫ হেক্টর স্থানীয় জাতের আউশ ধানের চাষ করা হয়। এবারে আউশ চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল ২৭ হাজার ২৮৫ মে. টন। উৎপাদনের এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বন্যায় কৃষকদের সেই আশা ধুলিসাৎ হয়ে গেছে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা এবং সদর উপজেলার চরাঞ্চলে আউশ ধানের চাষ করা হয়েছিল বেশী। কিন্তু বন্যার আঘাতে চরাঞ্চল বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ফলে জেলায় আউশ চাল উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল তা ভেস্তে গেছে। বন্যা জেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৫২২ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আউশ ধান ছাড়াও এবারের ভয়াবহ বন্যায় ৬ হাজার ৬১৯ হেক্টর জমির পাট, ২ হাজার ৮৮১ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলা, ৩১ হেক্টরের রোপা আমন, ১ হাজার ১৭৭ হেক্টরের শাকসবজি, ৩ হেক্টরের পান বরজ ও ১২০ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
ফসলের এ ব্যাপক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গাইবান্ধা উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এসএম ফেরদৌস জানান, এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একশ’ একর জমিতে আমন বীজতলা স্থাপন করা হবে। এসব বীজতলা বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এছাড়া ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ৫ কেজি করে উন্নত জাতের আমন বীজ ধান দেয়া হবে, যা দিয়ে কৃষকরা নিজেরাই বীজতলা স্থাপন করবে। এছাড়া কৃষি পুনর্বাসনের জন্য অধিদপ্তরের কাছে পুস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
গাইবান্ধায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুরু হয়নি পাঠদান
গাইবান্ধা :: বন্যার পানি কমে গেলেও গাইবান্ধায় দুদফা ভয়াবহ বন্যায় জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ের সড়ক, ব্রীজ, কালভার্টের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়ায় জনগণকে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের কুকড়ারহাট এলাকায় বন্যার পানির তোড়ে ৬শ’ ফুট রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় রাস্তার মাটি সরে গেছে। ফলে গাইবান্ধা জেলার সাথে সাঘাটা উপজেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কবে বিধ্বস্ত সড়কটি মেরামত করে ওই পথে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এতে ওই এলাকার জনগণকে বিকল্প ঘুর পথে বোনারপাড়া হয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
এছাড়া গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে কদমতলা সংলগ্ন সড়কের ব্রীজটির পশ্চিম অংশ বন্যার পানির তোড়ে দেবে গেছে। ফলে ওই সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পথচারী ও হালকা যানবাহন চলাচল করছে।
এদিকে বন্যা কবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তিন সপ্তাহ যাবত জলমগ্ন হয়ে থাকায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদুপরি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অধিকাংশ প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলো বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মেরামত না করায় এ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। এছাড়া নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে তিনটি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে না পেরে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া বিঘিœত হচ্ছে।
বন্যায় এ পর্যন্ত জেলার ৫শ’ ৯৩ কি.মি. কাঁচা রাস্তা এবং ২শ’ ৬৬ কি.মি. পাকা রাস্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৩৯টি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, গাইবান্ধায় সাত উপজেলার ৩৬৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। পাঠদান বন্ধ থাকা এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩০৯টি বিদ্যালয় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাইবান্ধা প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, বন্ধ থাকা বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চারটি কলেজ রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অধিকাংশই দুর্গম চরে অবস্থিত।
ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১২ মেম্বারের অনাস্থা
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাবুবর রহমানের বিরুদ্ধে উন্নয়ন কাজ না করে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। ইউপি সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে উন্নয়ন কাজ না করেই ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। ওই ইউনিয়ন পরিষদের ১২ সদস্য সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কাছে এব্যাপারে অভিযোগ আনে। অভিযোগে তারা উলে¬খ করেন তাদের স্বাক্ষর জাল করে চেয়ারম্যান মাহাবুবর রহমান বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে ২১ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। অভিযোগকারি সদস্যরা হচ্ছেন হাফিজার রহমান, তাজুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, রীনা বেগম, মঞ্জুয়ারা বেগম, রেখা বেগম, আইয়ুব হোসেন, শাহাজাহান আলী, গোলজার রহমান, তারা মিয়া, ইছাহাক আলী ও হাবিবুর রহমান। তারা ইতিমধ্যে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা প্রস্তাবও এনেছেন।
অভিযোগকারিরা জানান, গত ২ বছরে ইউপি ট্যাক্স বাবদ আদায়কৃত ৮ লাখ টাকার মধ্যে ব্যাংকে জমা রয়েছে মাত্র ৫৪ হাজার টাকা। অপরদিকে জন্ম নিবন্ধন ফি বাবদ গত ১ বছরে আদায়কৃত ২ লাখ টাকা, এডিপি’র খাতে বরাদ্দকৃত ১ লাখ টাকা, রাজস্ব খাত হতে গত বছেেরর ১২ই ডিসেম্বর ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, গত ২৭ ফেব্র“য়ারী ১ লাখ ২১ হাজার টাকা, ২১শে এপ্রিল ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং গত ১৪ই জুলাই ১ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে তিনি আত্মসাৎ করেন।
অপরদিকে, পাঠানপাড়া সরকারি রাস্তার ৭টি গাছ নিলামে বিক্রি করার প্রায় ১ লাখ টাকারও কোন হদিস নেই। এছাড়া গত অর্থবছরে এলজিএসপি’র বরাদ্দকৃত সাড়ে ৪ লাখ টাকা তার নিজস্ব কেজি স্কুলে ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করেন। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করে কোন সুরাহা না হওয়ায় ইউপি সদস্যরা গত ১৪ই জুলাই এসব অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ্যাপারে তিনি এরিয়ে গিয়ে বলেন, মেম্বারদের নিয়ে খুব শীঘ্রই সমঝোতা হবে। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জল কুমার ঘোষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।