শনিবার ● ৩ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ : চিকিৎসাধীন-১৫
গাইবান্ধায় বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ : চিকিৎসাধীন-১৫
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধায় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। শনিবার পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে ১৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে সিভিল সার্জন জানিয়েছে, গোটা গাইবান্ধা জেলায় এ পর্যন্ত ১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সনাক্ত করা গেছে।
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এই ভয়ে সামান্য সর্দি, জ্বর, কাশি, ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত রোগীরাও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ফলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ২০০ বেডের গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালে বেডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের মেঝেতে এবং করিডরে ভর্তিকৃত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে।
গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সুত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তদের মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২ জন সাগর মিয়া ও এনাস, গাইবান্ধা সদর উপজেলার ৬ জন রাশেদুল, ফাহিম, রুবেল, এনামুল, শ্রাবন ও প্রিয়া আকতার, সাদুল্যাপুর উপজেলার ২ জন নিশা ও সাজেদা খাতুন, পলাশবাড়ি উপজেলার ৩ জন সুলতানা, শিহাব ও সবুজ মিয়া এবং গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ২ জন পারভেজ ও সাদা মিয়া।
সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ে কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সকল ডেঙ্গু রোগীরাই সম্প্রতি ঢাকা থেকে ঘুরে এসেছেন এবং সেখান থেকেই তারা ডেঙ্গুর জীবানু বহন করে গাইবান্ধায় এসে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে।
এদিকে গাইবান্ধা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং সুষ্ঠুভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি এডিস মশা নিধনেও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কার্যকর নানা ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিপাকে কৃষক
গাইবান্ধা :: বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই গাইবান্ধার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছে। কেননা বন্যাকালি জমিতে বিদ্যমান ফসল, শাকসবজি, আমন ধানের বীজতলা এবং আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তদুপরি চরাঞ্চলের জমিগুলোতে বালু জমে চাষাবাদের অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষকরদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে চাষাবাদ করতে নতুন করে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় বন্যা পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় সরকারি সহায়তা না পেলে বন্যা দুর্গত এলাকার দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের কবলে পড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এবারের ভয়াবহ বন্যায় গাইবান্ধায় কৃষিক্ষেত্রে মারাত্মক বিপর্যয় হয়েছে। জেলায় হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘদিন ফসলী জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় এসব ক্ষেতের ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এবারের বন্যায় জেলায় ১৪ হাজার ২১ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৫ হাজার ৫২০ হেক্টর জমির ফসল সম্পুর্ণ রূপে এবং ৮ হাজার ৫০১ হেক্টর জমির ফসল আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে এ ক্ষতির পরিমাণ ৯২ কোটি ১ লাখ ১৭ হাজার।
বন্যায় চরাঞ্চলে রোপিত আউশ ধানের ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশী। বিলুপ্ত প্রায় এ ধান চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কৃষকদের কৃষি প্রনোদনা দেয়া হয়। প্রনোদনা হিসাবে প্রায় ৬০ লাখ টাকার উন্নত জাতের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়। এবারে জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও প্রনোদনার কারণে জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আউশ ধানের চাষ হয়েছে ১০ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ৯ হাজার ৮৩৫ হেক্টরে উফশী জাতের এবং ১৬৫ হেক্টর স্থানীয় জাতের আউশ ধানের চাষ করা হয়। এবারে আউশ চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছিল ২৭ হাজার ২৮৫ মে. টন। উৎপাদনের এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বন্যায় কৃষকদের সেই আশা ধুলিসাৎ হয়ে গেছে।
আউশ ধান ছাড়াও এবারের ভয়াবহ বন্যায় ৬ হাজার ৬১৯ হেক্টর জমির পাট, ২ হাজার ৮৮১ হেক্টর জমির রোপা আমন বীজতলা, ৩১ হেক্টরের রোপা আমন, ১ হাজার ১৭৭ হেক্টরের শাকসবজি, ৩ হেক্টরের পান বরজ ও ১২০ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
ফসলের এ ব্যাপক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ কি কি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে সেব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এসএম ফেরদৌস জানান, এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে একশ’ একর জমিতে আমন বীজতলা স্থাপন করা হবে। এসব বীজতলা বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। এছাড়া ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে ৫ কেজি করে উন্নত জাতের আমন বীজ ধান দেয়া হবে, যা দিয়ে কৃষকরা নিজেরাই বীজতলা স্থাপন করতে পারবে। এছাড়া কৃষি পুনর্বাসনের জন্য অধিদপ্তরের কাছে পোস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।