রবিবার ● ৪ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বরিশাল শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে অনিয়ম : নিন্মমানের বালু ও পাথর দিয়ে হচেছ কাজ
বরিশাল শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে অনিয়ম : নিন্মমানের বালু ও পাথর দিয়ে হচেছ কাজ
বরিশাল প্রতিনিধি :: বরিশাল শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প উপকূলে বেড়িবাঁধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক তৈরিতে ব্যাপক অনিয়ম ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ উঠেছে। অনিয়মের কারণে টেকসই বেড়িবাঁধ থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বরিশাল উপকূলে অব্যাহত ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়িবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে তীর সংরক্ষণ নামক প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ কিলোমিটার মাটি দেয়া ও সিসি ব্লক নির্মাণে প্রায় ১৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বেড়িবাঁধটি করা হলে বেলতলা খেয়াঘাট,চরবাড়িয়া নদির বাক পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ চরম ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে।
জানা যায়, বরিশাল বেলতলা খেয়াঘাট,চরবাড়িয়া নদির বাক ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধে মাটি ভরাটের পর ব্লক বসানোর কাজ হবে। ইতিমধ্যে কনফিডেন্স গ্রুপ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। প্রায় তিন মাস আগে ব্লক তৈরির কাজ শুরু হলেও এরই মধ্যে কাজের গুণগত মান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিন্মমানের বালু, পাথর ব্যবহার করে ব্লক তৈরি করছে। ব্লক তৈরিতে নিন্মমানের সরঞ্জাম ব্যবহার করায় স্থানীয় বাসিন্দারা বার বার অভিযোগ দিলেও পাউবো ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, টেকসই ব্লক তৈরি করা হচ্ছে না ফ্লাট সোলিং এর উপর ব্লক নিম্মান করার কথা থাকলেও নিম্মান করছে জমি ও বালুর উপড়ে। ব্লক তৈরির ফরমা নতুন দেওয়ার কাথা থাকলেও পুরোনো ফরমা ব্যাবহার করছে। ব্লক তৈরিতে পাউবোর সিডিউল অনুযায়ী সিলেটের পাথর দেড় থেকে দুই ইঞ্চি, যাহা কাজের বহিভূত। সিলার চাঁন বালু নিন্ম মানের,সাদা বালু এফএম ১.৫ মি: হবার কথা কিন্তু ০.৭ এফ এম বালু দ্বারা কাজ হচ্ছে। পানি ও সিমেন্ট সংমিশ্রণ মেশিনে না করার কারনে উৎপাদিত ব্লক নিন্মমানের হচেছ। যেখানে ব্লকগুলো রাখা হয়েছে, সেখান থেকে বেড়িবাঁধে নেয়ার সময় কিছু কিছু ব্লক ভেঙেও যাচ্ছে।
তবে কনফিডেন্স গ্রুপ লিঃ এর ঠিকাদার এর পক্ষ থেকে ব্লক তৈরিতে কোন ধরনের অনিয়ম হচ্ছে না দাবি করে জানান, সিডিউল মতে সব কাজ ঠিকঠাক মতো চলছে। স্থানীয়দের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ঠিকাদার আরো বলেন, কিছু কুচক্রী মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কাজ শেষ করলে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন।
সরেজমিন গিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তাকে সাইটে কাজ চলাকালীন পাওয়া যায়নি। ব্লক তৈরিতে নুড়ি পাথর ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে ময়লাযুক্ত বড় পাথর। এতে কাজের মান নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। সেই সঙ্গে সরকারের ১৫২ কোটি টাকার এ প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ব্লক তৈরিতে নুড়ি পাথর ব্যবহার করার কথা বলা হলেও নিম্নমানের বড় মরা পাথর দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে সিসি ব্লক। তাছাড়া ময়লা ও কাদাযুক্ত বালি এবং পরিমাণ মতো সিমেন্ট না দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, কাজের গুণগত মান একেবারেই খারাপ হচ্ছে। নিম্নমানের পাথর দিয়ে ব্লক তৈরি হচ্ছে, যা এক বছর টেকা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তাই স্থানীয় জনগন ট্রাস্টর্ফোসের প্রধান প্রকৌশলী তোফায়েল হোসেনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকেরা ট্রাকে করে সিলেট থেকে পাথর ও বালি এখানে ফেলা হচ্ছে। পাথর ও বালিতে দেখা যায় ময়লা। ব্যবহারের আগে পাথরগুলো ঠিকভাবে পরিষ্কারও করা হয় না। ব্লকে পাথরের সাইজ হবে ৪০ এমএম আর বালু হবে মোটা ২.৫ এফএম মাপ। বিধি মোতাবেক প্রতি ব্লক তৈরির নিয়ম ৫টি পাথর, ৫টি মোটা বালু, ১ বস্তা সিমেন্ট দেয়ার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ৭ বালতি পাথর, ৯ থেকে ১৩ বালতি স্থানীয় ০.৭ এফএম মাপের বালু, আর ১ বস্তা সিমেন্ট। ফলে এসব ব্লক ধাক্কা দিলেই ভেঙে যায়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ঠিকাদার চাইবেই কাজে ফাঁকি দিতে। তারা বেশি লাভের আশায় কাজে ফাঁকি দেবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ডিপার্টমেন্টের লোকজন যদি ঠিকাদারের অনিয়মের বিষয়ে বাধা না দেয়, তাহলে তারা নিম্নমানের কাজ করবে। একমাত্র পাউবো কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রতি বছর সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।
উপ-সহকারী প্রকৌশলী বাবুল এর কাছে ০১৭৬২৬২০৫২৪ নাম্বারে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।