মঙ্গলবার ● ৬ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর : কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না
বিচ্ছিন্ন কাশ্মীর : কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না
ভারত শাসিত কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দিত সংবিধানের যে ৩৭০ অনুচ্ছেদ, তা বাতিলের একদিন পরেও ঐ এলাকা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। রাজ্যের টেলিফোন, মোবাইল এবং ইন্টারনেটের সংযোগ গত রবিবার সন্ধ্যায়ই বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় এবং সেগুলো এখনও ঠিক করা হয়নি।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সরিয়ে নেওয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু এমন ঘোষণায় সেখানকার মানুষ কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে- সেবিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। কারণ এরই মধ্যে স্থানীয় নেতাদের আটক করেছে মোদি সরকার।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে বিবিসির এক প্রতিবেদক জানান, রাজ্যের অন্যান্য অংশে কী হচ্ছে তা কেউ জানে না- আমরা কারও সঙ্গে কথাও বলতে পারছি না। মানুষ ভীষণ চিন্তিত- তারাও জানে না আসলে এখন কী হচ্ছে এবং কী হতে যাচ্ছে। এছাড়া ভারতের অন্যান্য স্থানে থাকা কাশ্মীরিরা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না এবং সেবিষয়ে তাদের শঙ্কার বিষয়ে জানিয়েছেন তিনি।
ঐ অঞ্চলে থাকা বিবিসি সংবাদদাতা আরও জানান, স্থানীয়রা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে কয়েকমাসের খাবার মজুদ করে রাখেন। সব ধরণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে ধারণা করে পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য স্যাটেলাইট ফোন বরাদ্দ করা হয়। এছাড়া রবিবার রাতে দুই সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দী করার সময়ই সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। সেসময় থেকে ঐ অঞ্চল কার্যত পুরো বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেখান থেকে কোনো কিছুরই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা কখন ঠিক হবে, সেবিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি। তবে স্থানীয়ভাবে পাওয়া খবর থেকে জানা যাচ্ছে যে, সাধারণ মানুষকে ঐ অঞ্চলে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হচ্ছে না।
গতকাল সংসদে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৩৭০ ধারা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার আগে থেকেই কাশ্মীর উপত্যকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সংসদে ঘোষণা দেওয়ার কয়েকদিন আগে ঐ অঞ্চলে অতিরিক্ত দশ হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়। পর্যটকদের ঐ এলাকা ছেড়ে যেতে বলা হয়, হিন্দু তীর্থযাত্রীদেরও নির্দেশ দেয়া হয় ঘরে ফিরে যেতে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কোন পরিকল্পনা সম্পর্কে কোন ইঙ্গিতও দেয়া হয়নি। এছাড়া অমিত শাহ’র ঘোষণার পর অতিরিক্ত আরও আট হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
৩৭০ ধারা- কাশ্মীর রাজ্যকে বিশেষ ধরণের স্বায়ত্বশাসন ভোগ করার সুযোগ দিত যার ফলে তারা নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা এবং আইন প্রণয়নের অধিকার রাখতো- যদিও পররাষ্ট্র বিষয়ক সিদ্ধান্ত, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল কেন্দ্রীয়স সরকারের হাতে। যার ফলে, জম্মু ও কাশ্মীর নাগরিকত্ব, সম্পদের মালিকানা এবং মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত আইন নিজেরা তৈরি করার ক্ষমতা রাখতো। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মানুষকে জম্মু ও কাশ্মীরে জমি কেনা এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা থেকেও বিরত রাখতে পারতো ঐ অনুচ্ছেদের বদৌলতে।
ভারত এবং পাকিস্তান দুই দেশই সম্পূর্ণ কাশ্মীরের অধিকার দাবি করলেও দুই দেশই রাজ্যটির কিছু নির্দিষ্ট অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। ভারত শাসিত কাশ্মীরে অনেকদিন ধরেই বিদ্রোহ হয়ে আসছে যার ফলে এখন পর্যন্ত বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। সূত্র : বিবিসি