বৃহস্পতিবার ● ৮ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » অস্ত্রপচারের মাধ্যমে ২ যুবকের লিঙ্গ পরিবর্তন : ৪ হিজড়ার বিরুদ্ধে পিবিআই’র আদালতে চার্জশিট দাখিল
অস্ত্রপচারের মাধ্যমে ২ যুবকের লিঙ্গ পরিবর্তন : ৪ হিজড়ার বিরুদ্ধে পিবিআই’র আদালতে চার্জশিট দাখিল
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: সাগর হোসেন আর প্রান্ত সরকার, টগবগে দুই যুবক। একজনের বয়স ২২, অন্য জনের ১৮ বছর। সাগর পড়ালেখা করে, আর প্রান্ত সরকার রাজমিস্ত্রি। দু’জনেরই চলাফেরা সমাজে অন্যদের মতোই। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে চলতো তারা। কোনো কিছুতেই পিছিয়ে থাকেনি এই দুই যুবক। এরই মধ্যে একদল হিজড়া তাদের দু’জনকে কৌশলে অপহরন করে নিয়ে যায়। খুলনা অঞ্চলে একটি গুদাম ঘরে আটকে রেখে অচেতন করে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে দু’জনেরই লিঙ্গ পরিবর্তন করে দিয়েছে হিজড়ারা। এখন তারা গুরুত্বর অসুস্থ। যুবকদ্বয়ের দাবি কেন তাদের জীবনটা এভাবে নষ্ট করে দেওয়া হলো। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ পিবিআই সংস্থাকে দায়িত্ব দিলে, পিবিআই’র এসআই তহিদুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করে চার জন আসামির বিরুদ্ধে প্রাথমিক সত্যতার প্রমান পেয়ে পেনাল কোডের ৩২৩, ৩৬৫, ৩৭৯ ধারায় চার্জশিট কোর্টে দাখিল করেন বলে জানান মামলার বাদি উজ্জল সরকার। ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকার আনোয়ার হোসেনের পুত্র সাগর হোসেন (২২)। ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। পারিবারিক কারনে মাঝে কিছুদিন পড়ালেখা বন্ধ ছিল। পরে ঝিনাইদহ সরকারি বালক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দশম শ্রেণীতে পড়ালেখা করছিল। সাগর জানান, তার কন্ঠ কিছুটা নারীদের কন্ঠের মতো। এই কারনে হিজড়ারা তার পিছু নেয়। তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করে। বিষয়টি তিনি বুঝতে পেরে ওই হিজড়াদের এড়িয়ে চলতেন। সাগর হোসেন জানান, গত ১২ জুলাই রাত আনুমানিক ৯ টার দিতে তিনি ঝিনাইদহ শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে আরাপপুর এলাকায় যাচ্ছিলেন। পথে নবগঙ্গা নদীর উপর ব্রীজ এলাকা থেকে একটি কালো রং এর মাইক্রোবাস তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এরপর খুলনা ফুলতলা এলাকায় নিয়ে একটি গুদাম ঘরে আটকে রাখে। ওই রাতেই তাকে অচেতন করে ডাক্তারের মাধ্যমে অস্ত্রপচার করে। জ্ঞান ফেরার পর তিনি দেখতে পান তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। তিনি আরো দেখতে পান পাশে প্রান্ত সরকার নামের আরেকজন একই অবস্থা করে ফেলে রাখা হয়েছে। এরপর তাদের এলাকায় ফেরত নিয়ে আসা হয়। তার শরীর খারাপ হওয়ায় হিজড়ারা ২৫ জুলাই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ফেলে রেখে হিজড়ারা পালিয়ে যায়। পরে তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। প্রান্ত সরকার (১৮) ঝিনাইদহ শহরের মহিষাকুন্ডু এলাকার উজ্জল সরকারের পুত্র। প্রান্ত জানান, হিজড়ারা গত ১১ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে তাকে শহরের তসলিম ক্লিনিকের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর ফুলতলা এলাকায় নিয়ে অচেতন করে তার শরীরে অস্ত্রপচার করে। তিনি জানান, রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার করছিলেন। অন্য দশজনের মতোই ছিলেন তিনি। এখন তার সমাজে কোনো স্থানে ঠাই নেই। পরিবারও তাদের মেনে নিতে পারছেন না। এখন কোথায় যাবেন তা খুঁজে পাচ্ছেন না। সারাক্ষন মুখ লুকিয়ে চলাফেরা করছেন। সাগর ও প্রান্ত জানান, তারা এই অন্যায়ের বিচার চেয়ে ঝিনাইদহ আদালতে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় তারা আসামী করেছেন শহরের কাঞ্চননগর এলাকার বাসিন্দা আকাশী ওরফে খোকন (৪৫), ভুটিয়ারগাতি এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা ওরফে আবু সাঈদ (৪২), উদয়পুর এলাকার বাসিন্দা কারিশমা ওরফে লিয়াকত (৩০) ও ব্যাপারীপাড়া এলাকার মনোয়ারাকে (৫০)। মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, তারা এই অন্যায়ের বিচার চেয়ে আদালতে পৃথক মামলা দায়ের করেছেন। আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ পিবিআই সংস্থাকে দায়িত্ব দিলে, পিবিআই’র এসআই তহিদুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সত্যতার প্রমান পেয়ে পেনাল কোডের ৩২৩, ৩৬৫, ৩৭৯ ধারায় অভিযোগটি কোর্টে দাখিল করেন। তিনি বলেন, এই ঘটনা একটি জঘন্যতম ঘটনা, এর উপযুক্ত বিচার হওয়া জরুরী।
খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ব্রিজ ফেটে দেবে গেছে, ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন
ঝিনাইদহ :: খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ঝিনাইদহ শহরের হামদহ এলাকায় ব্রিজ ফেটে দেবে গেছে। দেবে যাওয়া ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সড়ক বিভাগ বলছে, নতুন ব্রিজ করতে হবে। কাজ শুরু হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। এ ব্রীজে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে যে কোন সময়। এই ব্রীজ দিয়ে দিন রাত সর্ব সময় যানবাহন চলাচল করে। ব্রীজের পাশে রয়েছে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল,কাঁচা বাজার ও নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। গত মাসে খুলনার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী এ মহাসড়কের পুরনো ব্রিজটিতে ভয়াবহ ফাটল দেখা দেয়। এরপর সড়ক বিভাগ থেকে ব্রিজের দু’পাশে ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর থেকে ভাঙা সেতুর ওপর দিয়ে একমুখী পথে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। এতে প্রতিনিয়ত যানজটে পড়তে হয় যাত্রী ও চালকদের। ঝিনাইদহ শহরে ও কুষ্টিয়া, মাগুরা, কালীগঞ্জ, খুলনা বা ঢাকা যাবার সড়কের উপর এই ব্রিজটি।স্থানীয়রা জানায়, অত্যন্ত ব্যস্ততম এই মহাসড়ক। প্রতিদিন এ মহাসড়ক দিয়ে প্রায় তিন হাজারেও বেশি যানবাহন চলাচল করে। বর্তমানে ভাঙা ব্রিজের একপাশের অবশিষ্ট অংশ দিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে মারাতœক ঝুকি নিয়ে। এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী ট্রাক চালক সাপ্পা মন্ডল বলেন, কুষ্টিয়া থেকে মালামাল নিয়ে খুলনা যাচ্ছি। কিন্তু এখানে ব্রিজ ভেঙে গেছে জানা ছিল না। ব্রিজ ভাঙার কারণে ৫ কিলোমিটার ঘুরে গন্তব্যে যেতে হবে। স্থানীয় বাসিন্দা সৈরভ হোসেন বাবু বলেন, মহাসড়কের ব্রিজটি অনেক দিন ধরে ভেঙে পড়ায় চরম ঝুঁকি নিয়ে মানুষ চলাচল করছে। সেখানে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারী আবদুল গণি বলেন, সড়কটি এ অঞ্চলের মানুষের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে সবার। ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণের দাবি জানাই আমরা। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম বলেন, পুরাতন ব্রিজটি ফেটে দেবে গেছে। এ কারণে ব্যারিকেড দিয়ে ব্রিজটি বন্ধ করে দিয়েছি। ব্রিজটি নতুন করে করতে হবে। এজন্য একটু সময় লাগবে। তবে এ বছরের মধ্যেই নতুন ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।