বৃহস্পতিবার ● ৮ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ১১ বছরের শয্যাশায়ী রোগীও অভিযুক্ত
১১ বছরের শয্যাশায়ী রোগীও অভিযুক্ত
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথে যুক্তরাজ্য প্রবাসীর দ্বিতীয় স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘চুরি, অপহরণ, চেক ডিজওনার ও প্রবাসীর বাসা দখলের পায়তারাসহ নানান অভিযোগে একাধিক মামলা দায়ের করায় এবং স্বামী কর্তৃক তালাকনামার নোটিশ প্রেরণ করায়’ প্রবাসী আরফান উল্লাহ ওরফে গৌছ আলীর দ্বিতীয় স্ত্রী মোছাঃ হাওয়ারুন নেছা বাদী হয়ে তার (হাওয়ারুন) উপর দায়ের করা মামলার একাধিক বাদী ও তালাক দেওয়ায় প্রবাসী স্বামীর বিরুদ্ধে অপহরণসহ নানান অভিযোগ এনে বিশ্বনাথ থানায় মামলা দায়ের (নং ২৩, তাং ২৭.০৭.১৯ইং) করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হাওয়ারুন নেছার দায়ের করা আর মামলায় স্বামী প্রবাসী আরফান উল্লাহ ওরফে গৌছ আলী ছাড়াও প্রবাসীর চাচাত ভাই রফিক আলী (৩৬), বড় ভাই হৃদরোগ ও ডায়েবেটিকস রোগী হাজী মখলিছ আলী (৬৫), ভাতিজা যুক্তরাজ্য প্রবাসী জুয়েল মিয়া (৩৫) ও ছোট ভাই নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১১ বছর ধরে শয্যাশায়ী থাকা আসকর আলী নামের ষার্টউর্ধ্ব বৃদ্ধকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলাটি এত দ্রুতই রেকর্ড করা হয়েছে যে থানায় দায়ের করা হাওয়ারুন নেছার লিখিত অভিযোগপত্রে অভিযোগ দায়েরের তারিখটিও উল্লেখ করা হয়নি। মামলাটি মিথ্যা, বানোয়াট, উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে দাবী করছেন অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যরা।
প্রবাসী আরফান উল্লাহ ওরফে গৌছ আলী জানান, মানসিক ও পারিবারিক অশান্তির কারণে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারী তিনি তার স্ত্রী হাওয়ারুন নেছাকে তালাকনামার নোটিশ প্রেরণ করেন। আর নোটিশশ প্রেরণের পর থেকে হাওয়ারুন নেছা প্রবাসী ও প্রবাসীর আত্মীয়-স্বজনদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা দায়ের করা শুরু করেন। আর এসব ব্যাপারে হাওয়ারুনকে ইন্ধন দিচ্ছে শেখ মহব্বত আলী নামের তার (হাওয়ারুন) এক আত্মীয়। প্রবাসীর পরিবারকে হয়রাণী করতেই বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরুদীতা করা শেখ মহব্বত এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ প্রবাসীর।
অভিযুক্ত হাজী মখলিছ আলীর পুত্র রায়হান আহমদ বলেন, হাওয়ারুন নেছার বিরুদ্ধে আমার অসুস্থ পিতা বাদী হয়ে গত ২৩ জুন সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ২য় আদালতে চেক ডিজওনার মামলা (সিআর নং ১৮৫/২০১৯ইং) ও চাচা রফিক আলী বাদী হয়ে ২৫ মে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত নং ০৩-এ চুরি ও অপহরণের অভিযোগে মামলা (নং সিআর ১২২/২০১৯ইং) দায়ের করায় তাদেরকে তার (হাওয়ারুন) মিথ্যা অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার এবং তাকে তালাক দেওয়ায় চাচাদের ও ভাইকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অপহরণ মামলা উল্লেখ করা ‘তারিখ, ঘটনার বিবরণ ও ঘটনাস্থল’ প্রায় একই রেখে চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলা নং ৫২৬/২০১৯ইং অনুসন্ধান প্রতিবেদন নালিশী দরখাস্তকে সমর্থন না করায় বিচারক (জেলা জজ) মোঃ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী বাদিনী মোছাঃ হাওয়ারুণ নেছার নালিশী দরখাস্ত নাকচ করেন। আর আদালত কর্তৃক হাওয়ারুন নেছার নালিশী দরখাস্ত নাকচ ঘোষণার (তাং ২৩.০৭.১৯ইং) প্রায় ১ মাস ৪ দিন পর ২৭ জুলাই অপহরণসহ নানান অভিযোগে মোছাঃ হাওয়ারুন নেছার দায়ের করা প্রায় একই ধরনের অভিযোগের পৃথক আরেকটি অভিযোগপত্র মামলা হিসেবে বিশ্বনাথ থানায় রেকর্ড (মামলা নং ২৩) করা। অথচ হাওয়ারুন নেছা আদালতে মামলা দায়ের করার ৩দিন পূর্বে (তাং ২৫.০৫.১৯ইং) তাকেসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে ‘১০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ ২ লাখ টাকা চুরি এবং অপহরণ’ করার অভিযোগ এনে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত নং ০৩-এ একটি মামলা (নং সিআর ১২২/২০১৯ইং) দায়ের করেন তারই (হাওয়ারুন) মামলার প্রধান অভিযুক্ত তার স্বামীর চাচাত ভাই ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিক আলী।
রফিক আলীর দায়ের করা সিআর ১২২/২০১৯ইং মামলার প্রেক্ষিতে আদালত বিশ্বনাথ থানাকে মামলাটি তদন্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ১৭মে বিশ্বনাথ থানার এসআই মিজানুর রহমান ‘ওই ৪ (চার) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বাদী করা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া’র কথা উল্লেখ করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। এরপর ১০ জুন বিশ্বনাথ থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ দুলাল আকন্দ ‘ওই ৪ (চার) অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বাদীর করা অভিযোগের সত্যতা না পাওয়া’র কথা উল্লেখ করে পুনঃরায় আরেকটি প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করেন।
চলতি বছরের ৩০মে নিজের নামীয় বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ও চেকের পাতা উদ্ধার করার জন্য মোছাঃ হাওয়ারুন নেছা বাদী হয়ে সিলেট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে তার স্বামী আরফান উল্লাহ ওরফে গৌছ আলী, দেবর রফিক আলী, ভাশুর মখলিছ আলীকে অভিযুক্ত করে আরেকটি মামলা দায়ের (নং ২৯/২০১৯ইং) করেন। এরপর আদালতের জারী করা তল্লাশী পরোয়ানার প্রেক্ষিতে রফিক আলীর ঘর তল্লাশী করেন ১৭ জুলাই আদালতে প্রেরিত তল্লাসী প্রতিবেদনে ‘বাদীর আনিত অভিযোগে উল্লেখিত ব্যাংকের কোন চেক বই পাওয়া যায় নাই’ মর্মে উল্লেখ করেন বিশ্বনাথ থানার এসআই সুলতান উদ্দিন। পুলিশ প্রতিবেদনের আলোকে মামলাটি নথিজাত করার নির্দেশ দেন আদালত।
এদিকে ২৪ জুলাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভাতিজা মোহাম্মদ আদিলের মালিকানাধীন বাসা দখলের অপচেষ্ঠার অভিযোগ এনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিক আলী বাদী হয়ে ‘এনাম রেজা (২১), আনজুমা বেগম (১৯), মোছাঃ হাওয়ারুন নেছা (৪০), শওকত আলী ইমন (২৫), শেখ মহব্বত আলী (৪৮), ওয়াহাব আলী (৪০), শফিক আহমদ পিয়ার (৩৫), ছবর আলী (৩৫)’কে অভিযুক্ত করে সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ২য় আদালতে একটি মামলা (সিআর মোং নং ২৪০/২০১৯ইং) দায়ের করেন। এরপূর্বে মোছাঃ হাওয়ারুন নেছা (৪০), আনহার উজা (৪৫), ছবর আলী (৩৫), জয়দুন বিবি (৪২)’র বিরুদ্ধে ‘চুরি ও অপহরণ’র অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রফিক আলীকে প্রাণনাশের হুকমি দেওয়ায় ২০মে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সিলেটের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের (নং ১১৭/২০১৯ইং) করেন তিনি। এরপর ২২মে রাতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রফিক আলীর উপর হামলার ঘটনা ঘটলে ২৫ জুলাই সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত নং ০৩-এ আরেকটি মামলা (নং সিআর ১৪৯/২০১৯ইং) দায়ের করেন রফিক।
এব্যাপারে হাওয়ারুন নেছার সাথে যোগাযোগ করা চেষ্ঠা করা হয়ে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিশ্বনাথ থানার সদ্য যোগদানকারী অফিসার-ইনচার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।