বৃহস্পতিবার ● ১৪ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » কৃষি » বিরোধ রেখে অশান্ত পরিবেশে শান্তির পথে হাটা যায় না - তথ্য মন্ত্রী
বিরোধ রেখে অশান্ত পরিবেশে শান্তির পথে হাটা যায় না - তথ্য মন্ত্রী
ষ্টাফ রিপোর্টার :: বিরোধ রেখে অশান্ত পরিবেশে শান্তির পথে হাটা যায় না, বৃহসপতিবার ১৪ জানুয়ারী পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ৪০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠা বাষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্ত্যবে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু একথা বলেন৷ তিনি বলেন বাংলাদেশে আমরা যারা বসবাস করি নাগরিক অধিকার সবার সমান৷ বঙ্গবন্ধু হচ্ছে সে রাষ্ট্র নায়ক যিনি বাঙ্গালী জাতির ২ হাজার বছরের ইতিহাসে এমন একটি ইতিহাসের বাঁকে দাড়িঁয়ে বাঙ্গালী জাতিকে একটি নতুন রাস্তা দেখিয়েছেন, সেই রাস্তার নাম হচ্ছে স্বাধীনতা৷ এই জন্য বঙ্গবন্ধু চির স্বরণীয় হয়ে থাকবেন৷ সে জন্য আমরা বঙ্গবন্ধকে শ্রদ্ধা জানাব,এবং এই ভুখন্ডকে স্বাধীন করার জন্য যারা মুক্তিযুদ্ধ করে প্রাণ দিয়ে শহীদ হয়েছিলেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সালাম জানাব৷ যে জাতি ইতিহাসকে স্বরণ করেনা এবং বীরদের সম্মান করেনা সে জাতি নতুন ইতিহাস রচনা করতে পারেনা৷ মন্ত্রী পার্বত্য চুক্তি বিষয়ে বলেন ,বঙ্গবন্ধু যেমন ইতিহাসে স্বরণীয় হয়ে আছেন, তেমনি বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাও ২টি কারণে স্বরণীয় হয়ে থাকবেন৷ ১টা কারণ হচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলের দীর্ঘ দিনের জাতিগত সংঘাত ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বন্ধ করার জন্য শান্তি চুক্তি করে শান্তির ছাতা তৈরী করে দিয়েছেন, শান্তির ছাতার ছায়া তলে এলে আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারব৷ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইতেহারে সুষ্পষ্ট উল্লেখ করা আছে, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করার কথা,প্রধান মন্ত্রীর প্রতি সন্দেহ বা অবিশ্বাস করার কোন কারণ নাই৷ একটি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে সময় লাগে, এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রশাসনিক সমস্য রয়েছে৷ তিনি আরো বলেন চুক্তির মালিক এক দিকে যেমন প্রধান শেখ হাসিনা রয়েছেন আরেক দিকে রয়েছেন সন্তু লারমা৷ সরকারের যেমন চুক্তি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ তেমনি চুক্তি পক্ষের জনগোষ্ঠীকেও এগিয়ে আসতে হবে৷ বিরোধ রেখে অশান্ত পরিবেশে শান্তির পথে হাটা যায় না৷ আসুন শান্তি চুক্তি হাতে নিয়ে আমরা সামনের দিকে তাকাই, শান্তি চুক্তিকে অর্থবহ ভাবে কার্যকর করি৷
১৪ জানুয়ারী পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ৪০ বছর পুর্তিতে প্রধান অতিথি হয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার যোগে স্বস্ত্রীক রাঙামাটি সার্কেট হাউজ হেলিপ্যাডে পৌঁছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু৷ তথ্য মন্ত্রীকে নিয়ে বেলা সোয়া ১২ টায় রাঙামাটি সার্কিট হাউস সংলগ্ন হেলিপ্যাডে অবতরন করে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের একটি হেলিকপ্টার৷ এসময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এনডিসি, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাঙামাটি জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী (রাজস্ব),জেলা পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন (বনপা)’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও রাঙামাটি জেলা অনলাইন প্রেস ক্লাবের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জুঁই চাকমা এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (জাসদ) নেতৃবৃন্দ প্রমুখ৷
সার্কিট হাউসে প্রবেশের পূর্বে মহিলা পুলিশ বাহিনীর একটি চৌকস দল তথ্যমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার
প্রদান করেন এসময় ভারপ্রপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তানভীর আজম ছিদ্দিকী ও জেলা পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান সালাম গ্রহন করেন৷ রাঙামাটি সার্কিট হাউসে প্রবেশের সময় তিনি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা বাসীর খবরাখবর নেন এবং উপস্থিত সকলের সাথে কুশল বিনিময় করেন৷ এসময় রাঙামাটি জেলা অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি নির্মল বড়ুয়া মিলন, সহ সভাপতি কাজী আব্দুর রউফ, সাধারন সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জুঁই চাকমা, সদস্য আবুল কাসেম প্রমুখ উপস্থিত থেকে তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে সম্মাননা ক্রেষ্ট প্রদান করেন৷
তিনি পুর্ব নির্ধারিত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয় প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ৪০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর ফেষ্টুন, বেলুন উড়িয়ে, শান্তির প্রতীক সাদা কবুতর উড়িয়ে ৪০ পাউন্ডের কেক কাটেন৷ এর পর শুরু করা হয় প্রতিষ্ঠা বাষিকীর আলোচনা সভা৷
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, সভাপতি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি,খাগড়াছড়ি আসনের কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি,৩৩৩,ম- ৩৩ আসনের ফিরোজা বেগম চিনু এমপি, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা,খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজারী চৌধুরী,রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ সানাউল হক পিএসসি৷
প্রতিষ্ঠা বাষিকীর আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা এনডিসি, সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও চেয়ারম্যান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ৪০ বছরের উন্নয়নে ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪,৮১৮ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন, ৫,৮৫০মিটার সেচ নালা ও ১২২ টি জলাধার নির্মানের মাধ্যমে ১২,২২০ একর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করেছে৷ ৩১৯ টি মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডা নির্মান ও সংস্কার করেছে, ১০৫৫ টি শিৰা প্রতিষ্ঠান, ৫০ টি ছাত্রাবাস ও বিজ্ঞানাগার নির্মান ও সংস্কার করেছে৷ ৫৭ টি বাজার সেড, ৫৯ টি যৌত খামার নির্মান ও ৩,৩০০ পরিবারকে ৪ একর করে ভুমি প্রদান করে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড৷৬১৫ কিলোমিটার রাস্তা ৮ ১৪ টি সেতু, ২,৮৭১ টি কালভার্ট ও ৫৪ টি যাত্রী ছাউনি নির্মান, ৪ টি ষ্টেডিয়াম, ১১ টি অডিটোরিয়াম, ৩ টি জিমন্যাসিয়াম ও ৯ টি রেষ্ট হাউজ নির্মান করে৷ শিক্ষা ক্ষেত্রে ৪,০০০ পাড়া কেন্দ্র, ২২ টি শিশুবান্ধব স্কুল প্রতিষ্ঠা ও ৪ টি আবাসিক বিদ্যালয় পরিচালনা করে৷ ২৩,৮৩৫ একর জমিতে ফলমুলের বাগান, ১৩,২০০ একর জমিতে রাবার বাগান করে৷
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠর মেধাবী, অস্বচ্ছল প্রায় ১৩,০০০ ছাত্রছাত্রীদেরকে বৃত্তি প্রদান ও দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপন ও যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে৷
পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন সংস্থাটির চার দশক পুর্তি উদযাপন উপলক্ষে আজ নেয়া হয়েছে বিশেষ কর্মসূচি৷ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চার দশক পুর্তি উপলক্ষে সকাল ৮টায় কাপ্তাই সুইডেন পলিটেকনিক্যাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রধান কার্যালয় পর্যন্ত মাউন্টেন বাইক প্রতিযোগিতা ,রাঙামাটি পৌরসভা চত্বর থেকে রাঙামাটি নিউ মার্কেট পর্যন্ত সকাল ৯ টায় বর্ণাঢ্য র্যালী, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চত্বরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়৷
প্রতিষ্ঠা বাষিকী উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রধান কার্যালয় প্রাঙ্গনে বিকালে আতশ বাজি,ফানুস উড়ানো ও মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়৷
উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর ৪০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে প্রধান মন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্রবোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা ও ২৯৯ আসনের ঊষাতন তালুকদার এমপি উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তাদের অনুষ্ঠানস্থলে দেখা যায়নি৷
আপলোড : ১৪ জানুয়ারী ২০১৬ : বাংলাদেশ : সময় : রাত ৮. ১০ মিঃ