রবিবার ● ২৫ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের দায় নেবে না বাংলাদেশ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের দায় নেবে না বাংলাদেশ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মিয়ানমারে ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে।সেই থেকে এখন ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ সরকার আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দুই দফা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নেয় বাংলাদেশ। তবে দু’বারই সেই প্রস্তুতি ভেস্তে যায়।
রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যাওয়ার জন্য যেসব শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে প্রধান শর্ত হলো মিয়ানমার সরকার থেকে নাগরিকত্বের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তবে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিতের দায় বাংলাদেশ সরকার কোনো ভাবেই নিতে রাজি নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য জানায়।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে।এই যৌথ গ্রুপ বিভিন্ন সময় ঢাকা ও নেপিদোতে বৈঠকও করেছে।
সে অনুযায়ী প্রথম দফায় গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সবকিছু চূড়ান্ত থাকলেও সে সময় রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভেস্তে যায়। এরপর গত ২২ আগস্ট আবারো রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়।রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে এবারো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে।
রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে না যাওয়ার জন্য চারটি শর্ত দিয়েছে। এ চারটি শর্ত পূরণ না হলে তারা সেখানে ফিরে না যাওয়ার ঘোষণাও দেয়। এরমধ্যে প্রধান শর্ত হলো, মিয়ানমার সরকার থেকে তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তবে রোহিঙ্গাদের এই শর্ত বাংলাদেশ সরকার পূরণ করতে রাজি নয়।
বাংলাদেশ মনে করে, রোহিঙ্গাদের যেসব শর্ত রয়েছে, সেটা রাখাইনে গিয়ে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশে অবস্থান করে এ দাবি পূরণ হবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যাওয়ার জন্য যে শর্ত দিচ্ছে, বিশেষ করে নাগরিকত্ব। সেই শর্ত ওখানে গিয়েই পূরণ করতে হবে। আমরা এখান থেকেই তাদের এসব শর্ত পূরণ করতে পারবো না। সেখানে গিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবি দাওয়া আদায় করতে হবে।
রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যাওয়ার জন্য যে চারটি শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে প্রথম ও প্রধান হলো- নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া রাখাইনে তাদের বসতভিটায় পুনর্বাসন, তাদের সবার লুট হওয়া সম্পদ ফেরত এবং রোহিঙ্গাদের ওপর যারা নিপীড়ন চালিয়েছে তাদের বিচারের দাবি।
মিয়ানমারে সবশেষ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসিত হয়েছিল ১৪ বছরের বেশি সময় আগে, ২০০৫ সালের ২৮ জুলাই। এই দীর্ঘ সময়ে প্রত্যাবাসনের বারবার সময়সীমা ঘোষণার পরও কোনো রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসিত করা যায়নি। উপরন্তু গত দুই বছরে নতুন করে ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। নতুন-পুরনো মিলে এখন উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
এসব রোহিঙ্গাকে নিজদেশে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা মিয়ানমারের ছলচাতুরি আর রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না। সবশেষ গতবছরের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ-মিয়ানমার দু’পক্ষই প্রস্তুত থাকলেও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, দুই বছর আগে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আট লাখেরও বেশি মানুষ। এরআগে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবরের পর থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত আরও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা আসে।
২০১২ সালের জুনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরও এসেছিল অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা। তবে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ব্যাপক মাত্রায় রোহিঙ্গা আসে ২০১৭ সালের আগস্টের পর। এরআগে ব্যাপক মাত্রায় রোহিঙ্গা এসেছিল ৯১-৯২ সালে দুই লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন এবং ৭৮-৭৯ সালে প্রায় দুই লাখ ৩২ হাজার জন।
পরে তাদের অধিকাংশকেই মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়। সত্তরের দশকের প্রায় সবাইকে এবং ৯১-৯২ সালে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়েছিল জাতিসংঘের মধ্যস্থতায়।
২০০৫ সালের ২৮ জুলাইয়ের পর থেকে প্রত্যাবাসন বন্ধ থাকায় বাকি ১৩ হাজার ২৭৮ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আর ফেরত নেওয়া হয়নি। আটকে যাওয়া এসব রোহিঙ্গা শরণার্থী এখন বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে প্রায় ৪০ হাজার জনে উন্নীত হয়েছে।
এখন উখিয়া ও টেকনাফে বসবাস করছে প্রায় ১১ লাখরেও বেশি রোহিঙ্গা। সূত্র ; রাইজিং কক্স