বৃহস্পতিবার ● ১৪ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » কর্মসৃজন প্রকল্পে ‘ভুয়া’ শ্রমিক দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
কর্মসৃজন প্রকল্পে ‘ভুয়া’ শ্রমিক দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
আব্দুল মজিদ, নাটোর প্রতিনিধি :: নাটোরের বড়াইগ্রামে অতিদরিদ্রদের কর্মসৃজন কর্মসূচির ১২টি প্রকল্পে কাগজে-কলমে ‘ভূুয়া’ শ্রমিক দেখিয়ে প্রায় ১৭ লক্ষাধিক সরকারী টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে৷ উপজেলা প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ের কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় জোয়াড়ি ইউনিয়নের ছয়টি প্রকল্পে তালিকাভুক্ত ২৫৩ জন, গোপালপুর ইউনিয়নের তিনটি প্রকল্পে ১৭৯ জন ও চান্দাই ইউনিয়নের তিনটি প্রকল্পে ১৭৮ জন শ্রমিক অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন৷ সরেজমিনে গিয়ে জোয়াড়ি ইউনিয়নের প্রকল্পগুলোতে ১৮৭ জন, গোপালপুরে ১০৯ জন ও চান্দাইয়ে ১০৪ জন শ্রমিক কর্মরত দেখা গেছে তবে কাগজ-কলমে সব শ্রমিককে উপস্থিত দেখিয়ে সংশ্লিষ্টরা অনুপস্থিত ২১০ জন শ্রমিকের মজুরীর প্রায় ১৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাত্ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ রোববার গোপালপুর ইউনিয়নের গিয়ে দেখা যায়, আস্তিকপাড়া কাজিমের মিল থেকে গোপালপুর পারুলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ৬০ জনের মধ্যে ৩৭ জন, অর্জুনপুর মোহাম্মদ মুহুরীর বাড়ি থেকে ভিটার চড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ৫৯ জনের মধ্যে ৪০ জন শ্রমিক কাজ করছে৷ এদিন দুপুর আড়াইটায় গড়মাটি চকাই খাল হয়ে ইয়াদ আলীর বাড়ি থেকে নবীর উদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত প্রকল্পে গিয়ে কোন শ্রমিক পাওয়া যায়নি৷ তবে এ প্রকল্পে ৩২ জন শ্রমিক সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করেন বলে স্থানীয়রা জানান৷ এ প্রকল্পে তালিকাভূক্ত শ্রমিক রয়েছেন ৬০ জন৷ শনিবার চান্দাই ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, গাড়ফা জালালের বাড়ি হতে দিয়াড়গাড়ফা রিফাতের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে তালিকাভুক্ত ৫৭ জন শ্রমিকের মধ্যে ৩৪ জন, চান্দাই মোহাম্মদ সরকারের বাড়ি হতে তেলো আকবর মোড় পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ৫৯ জনের মধ্যে ৪০ জন, দাসগ্রাম মেছোঘাটা হতে রাজেন্দ্রপুর স্লুইসগেট পর্যনত্ম রাসত্মা সংস্কার প্রকল্পে ৬২ জনের মধ্যে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন৷ একই দিনে জোয়াড়ি ইউনিয়নে গিয়েও দেখা যায়, কুমরুল শাহাব উদ্দিনের বাড়ি থেকে কামারদহ সাইফুলের বাড়ি পর্যনত্ম প্রকল্পে ৩৫ জনের মধ্যে মাত্র ২৫ জন, কামারদহ ব্রীজ হতে আহম্মেদপুর হাফিজের মিলঘর পর্যনত্ম রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ৫০ জনের মধ্যে ৩৬ জন, জোয়াড়ি বিশি বাড়ি থেকে হাসেনের বটতলা মোড় পর্যনত্ম রাসত্মা সংস্কার প্রকল্পে ২৮ জনের মধ্যে ২০ জন, জোয়াড়ি আখেরের বাড়ি থেকে চয়েনের বাড়ি পর্যনত্ম রাসত্মা সংস্কার প্রকল্পে ৩০ জনের মধ্যে ২২ জন, কাটাশকোল মেরম্নর বাড়ি হতে শাজাহানের বাড়ি পর্যনত্ম প্রকল্পে ৫০ জনের মধ্যে ৩৩ জন শ্রমিক ও ভবানীপুর জমিরের বাড়ি থেকে সেন্টু মাষ্টারের বাড়ি পর্যনত্ম রাসত্মা সংস্কার প্রকল্পে ৬০ জনের স্থলে ৪২ জন শ্রমিক কাজ করছেন৷ সংশিস্নষ্ট ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনুপস্থিত শ্রমিকদের নামেও মজুরীর টাকা উঠানো হয়েছে৷ বিষয়টি নিশ্চিত করে জনতা ব্যাংক রাজাপুর শাখা ব্যবস্থাপক সুজিত্ কুমার বিশ্বাস জানান, প্রতি সপ্তাহেই গোপালপুর ইউনিয়নে তালিকাভূক্ত ১৭৯ জন শ্রমিকেরই নামেই বিল পরিশোধ করা হয়েছে, কারো বিল বাদ দেয়া হয়নি তবে তিনি শ্রমিকদের না ডেকে মেম্বারদের হাতে বিল দিয়েছেন কেন জানতে চাইলে কোন মনত্মব্য করতে রাজি হননি৷ গাড়ফার জালালের বাড়ি সংলগ্ন প্রকল্পে উপস্থিত ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল বারী ও শ্রমিক সর্দার রূপচাঁন আলী প্রকল্পে নিয়মিত ৩৪ থেকে ৩৫ জনের কাজ করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন৷ দাসগ্রাম মেছোঘাটা প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিক মোহন ও মাহাবুব জানান, এ প্রকল্পে তারা নিয়মিত ৩০ থেকে ৩২ জন কাজ করেছেন তবে মোট কত জন শ্রমিক কাজ করার কথা তা তাদের জানা নেই৷ বন্ধের দিনে বৃহস্পতিবার ওয়ার্ড মেম্বার ব্যাংক থেকে টাকা এনে তাদের দেন বলে জানান৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকল্প সভাপতি জানান, প্রতিটি প্রকল্প থেকেই প্রকল্প বাসত্মবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)কে পাঁচজন শ্রমিকের বিলের টাকা দিয়ে দিতে হয়৷ এছাড়া আরো কয়েকটি জায়গায় টাকা দেয়া লাগে বলে সব শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো সম্ভব হয় না৷ জোয়াড়ি এলাকার কলেজ শিৰক আবু সাঈদ জানান, বর্তমান সরকার হতদরিদ্র মানুষদের কথা ভেবে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন কিন্তু কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের অর্থলিপ্সার কারণে প্রকল্পের অর্ধেক টাকাই লুটপাট হয়ে যাচ্ছে আর এতে প্রকল্পের উদ্দেশ্যও ব্যাহত হচ্ছে৷ উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী বলেন, জেলা রিলিফ অফিসারের নির্দেশ মোতাবেকই কাজ হচ্ছে, তিনিই সবকিছু ভালো ভাবে জানেন, তাই এসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি করে কোন লাভ হবে না৷ ১৪ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার দুপুরে এ ব্যাপারে নাটোরের জেলা রিলিফ অফিসার মোঃ আব্দুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রকল্পের সব কাজ সরকারের নীতিালা অনুযায়ী তার নির্দেশনা অনুযায়ী হয় ঠিকই তবে কেউ চুরি করলেতো আর তাকে বলে করেন না৷ তিনি কর্মসৃজন কর্মসুচির কাজ পরিদর্শনে গিয়ে যখন যেখানে শ্রমিক কম পেয়েছেন সেখানে অনুপস্থিত লিখে দিয়ে এসেছেন৷ বড়াইগ্রামের ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাননি তরফ বিষয়টি তিনি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন৷