শনিবার ● ৩১ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » কক্সবাজার » অবশেষে ধরা পড়েছে টেকনাফ সীমান্তের দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত নুর
অবশেষে ধরা পড়েছে টেকনাফ সীমান্তের দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত নুর
অবশেষে ধরা পড়েছে টেকনাফ সীমান্তের দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত নুর মোহাম্মদ (৫২)। সেই সাথে ধরা পড়েছে তার দেহরক্ষী আমানুল্লাহ। রোহিঙ্গা এই ডাকাত বাহিনীর হাতে গত দুই বছরে ২২ জন রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। গ্রেপ্তার করা নুর মোহাম্মদ টেকনাফের যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি।
সূত্র জানায়, এক সপ্তাহ ধরে টেকনাফ থানা পুলিশ কৌশল নিয়েছিল নুর মোহাম্মদ ডাকাতকে ধরার জন্য। শেষ পর্যন্ত আজ শনিবার ভোর রাতে ধরা পড়ে সীমান্তের এই দুর্ধর্ষ ডাকাত। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া নুর মোহাম্মদ ডাকাত গ্রেপ্তার এড়াতে পুলিশকে ‘এক কোটি টাকা’ দিতে চেয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। নুর মোহাম্মদ এবং আমনুল্লাহ চাঞ্চল্যকর ফারুক হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামি। যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক হত্যা মামলার তিন রোহিঙ্গা আসামি ইতিমধ্যে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে।
টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘২২ আগষ্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভেস্তে যাবার রাতে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক খুন হন। তাকে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে নুর মোহাম্মদের লোকজন খুন করে। সেই থেকে তাদের ধরার জন্য নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি।’
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন,‘আমার ইউনিয়নের উলুচামিরা নামক পাহাড়ী এলাকায় ডাকাতদের ভোজের দাওয়াত দিয়ে কৌশলে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসব ডাকাত একদিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিরোধী কাজে জড়িত অন্যদিকে এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ও ইয়াবা কারবার করছে।’
স্থানীয়রা জানান, সরকার বিরোধী একটি চক্রের সাহায্য পেয়ে আসছে দুর্ধর্ষ নুর মোহাম্মদ বাহিনী। ১৯৯২ সালে নুর মোহাম্মদ ডাকাত রাখাইন থেকে সীমান্ত পেরিয়ে টেকনাফের জাদিমুরা এলাকায় আশ্রয় নেয়। সেখানে বন বিভাগের সংরক্ষিত এলাকায় চারটি ঘর তুলে আস্তানা গড়ে। নুর মোহাম্মদ ডাকাতের তিন স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা ওয়ার্ড বিএনপির প্রভাবশালী নেতা মোসতাক আহমদের কন্যা। এরপর নুর মোহাম্মদ এক সাথে বিয়ে করে রোহিঙ্গা দুই বোনকে। প্রথম স্ত্রীর মেয়েকে নুর মোহাম্মদ বিয়ে দিয়েছে হ্নীলা ইউনিয়ন যুবদলের নেতা সেলিমের সাথে। এভাবে নুর মোহাম্মদ স্থানীয় রাজনৈতিক আশ্রয় কব্জা করে।
নিহত যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকের ভাই আমীর হামজা বলেন-‘নুর মোহাম্মদ ডাকাত বাহিনীর কারনে শালবাগান শিবিরের কোন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করতে পারেনি। এই ডাকাত বাহিনী শিবিরের উগ্রপন্থী আল ইয়াকিন গ্রুপের সদস্য। তাদের হাতে গত দুই বছরে ২২ জন নিরীহ রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। নিরীহ রোহিঙ্গারা দেশে ফিরতে চায়। কিন্তু আল ইয়াকিন গ্রুপ কোনভাবেই তাদের দেশে যেতে দিচ্ছেনা। এরকমই দেশে ফিরতে ইচ্ছুক ২২ জন রোহিঙ্গাকে পাহাড়ে নিয়ে হত্যার পর মাটি চাপা দিযে ফেলেছে। যার প্রতিবাদ করতে পারছেন না কেউ। প্রতিবাদ যে করবে তাকেও হত্যার শিকার হতে হবে।’ নুর মোহাম্মদ বাহিনীর হাতে তার ভাই ওমর ফারুকসহ এলাকার বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেন আমীর হামজা।
এদিকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গা শিবিরে ফিরেছেন। আজ শনিবার বেলা ১২ টা থেকে রোহিঙ্গা শিবিরে তার সংগঠনের অফিসে কাজ করতে দেখা গেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।
রোহিঙ্গা শিবিরের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ পরিদর্শক মো.মাঈনুদ্দিন জানান, বাসায় গিয়ে খোঁজ নিলে মুহিবুল্লাহর পরিবার সদস্যরা সকালে বাসায় ফেরার কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য বাইরে গিয়েছিলেন বলে তারা দাবি করেছেন। সূত্র : কালের কন্ঠ