রবিবার ● ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » হারিয়েই গেল গ্রাম-বাংলার ধূমপানের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম ঐতিহ্যবাহি “হুক্কা”
হারিয়েই গেল গ্রাম-বাংলার ধূমপানের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম ঐতিহ্যবাহি “হুক্কা”
হাসান আলী, পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: প্রাচিন কাল থেকেই গ্রামবাংলার মানুষের ধূমপানের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম ছিল হুক্কা। ধূমপানের এই মাধ্যম গ্রামবাংলার বিনোদন, আতিথিয়েতা, বন্ধুত্ব, সম্প্রীতির প্রতীক। সে সময় ধনী-গরিব প্রতিটি বাড়িতেই ছিল হুক্কার প্রচলন। আজ থেকে এক দুই- তিন দশক আগেও গ্রামগঞ্জে ধূমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যমে নেশায় অভ্যস্ত ছিল। পুরুষের পাশাপাশি বয়স্ক নারী এবং ছেলেমেয়েরাও হুক্কার মাধ্যমে ধূমপান করত। অনেকে শখের বশেও হুক্কায় দিত আয়েশি টান দিত।
এ ছাড়া নাটক, সিনেমায় অভিনয়ে ধনীদের আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে পিতলের তৈরি ‘হুক্কা’ ও গরিবদের জন্য নারিকেলের খোল দ্বারা তৈরি ‘ডাবা’ ব্যবহার করা হতো। যা মানুষের জীবনের উঁচু-নিচু পার্থক্য নির্ণয় করত। এক সময় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতীক হিসেবে ‘হুক্কা’ খুবই জনপ্রিয় ছিল। হুক্কা নিয়ে গ্রামবাংলায় একটি জনপ্রিয় গান প্রচলিত ছিল। “প্রাণের হুক্কারে তোর নাম কে রাখিলো ডাবা, হুক্কা আমার নাতিপুতি হুক্কা আমার বাবা”।
মির্জাগঞ্জ উপজেলার কয়েক জন প্রবীনদের সাথে কথা বলে জানাযায়, গ্রামের বিভিন্ন সভা-সমাজে মেহমানদের জন্য প্রধান আকর্ষণ ছিল হুক্কা। যে কোন বয়সের মানুষ ও বয়স্করা হুক্কার নেশায় মাতিয়া ছিল।
হুক্কার বিষয় জানতে চাইলে আঃ ছত্তার হং প্রতিবেদককে জানান, তামাক পাতাগুলোকে টুকরো টুকরো করে কেটে এতে চিটাগুড় মিশ্রিত করে তৈরি করা হত হুক্কার প্রধান উপাদান ‘তামুক’। তামুক মাটির তৈরি কলকি’র মধ্যে দিয়ে কয়লার ‘টিক্কা’র মাধ্যমে আগুন দিয়ে ধূমপান করা হতো। এটা একপ্রকার নেশার মতো। হুক্কায় ধূমপানের জন্য এক সময় হাটবাজারে তামাকের গুড়ি মিশ্রিত করে বিক্রি করতে দেখা যেত, বিক্রি করা হতো নারিকেলের খোল দ্বারা হাতে তৈরি হুক্কা। যা ‘ডাবা’ নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে কারনে মির্জাগঞ্জ উপজেলার গ্রামগঞ্জে হুক্কায়, তামাকপানের যে প্রচলন ছিল তা আর দেখা যায় না।
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হুক্কায় ধূমপান করা দূরে থাক চোখেই দেখেনি হুক্কা। হুক্কার জায়গা দখল করে নিয়েছে বিড়ি, সিগারেট,গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। যার মধ্যে রয়েছে মারাত্মক ক্ষতিকর নিকোটিন। তার পরেও এই মরণ নেশায় জড়িয়ে পড়েছে যুব সমাজ। যাদের নিয়ে দেশের সব অভিভাবক মহল থাকেন সব সময় উদ্বিগ্ন।এক কালের গ্রাম বাংলার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান ‘হুক্কা’ আজ বিলুপ্তি হয়েছে।