রবিবার ● ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » নওগাঁ » দূর্ভোগের আরেক নাম আত্রাই-কালিগঞ্জ সড়ক
দূর্ভোগের আরেক নাম আত্রাই-কালিগঞ্জ সড়ক
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: নওগাঁর আত্রাই উপজেলার জনদূর্ভোগের অপর আরেক নাম আত্রাই-কালিগঞ্জ সড়ক। উপজেলার আহসানগঞ্জ রেলস্টেশন হতে সিংড়া উপজেলার কালিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত প্রায় ২০ কিমি সড়কে বর্তমানে খানা-খন্দে পরিণত হওয়ায় জনদূর্ভোগ চরম মাত্রায় পৌঁছে গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, সড়কটির উন্নয়ন তথা সংষ্কার, প্রশস্তকরনের লক্ষে নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইরাফিল আলম এক প্রতিক্রিয়ায় আত্রাই-কালিগঞ্জ সড়কের জনদূর্ভোগ চরম মাত্রায় রূপ নিয়েছে। অনতিবিলম্বে সড়কের সমস্যা দূর করার জন্য তিনিও আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
প্রায় ২০কিমি রাস্তাটির পার্শ্বে কাশিয়াবাড়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, বাঁকা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, নৈদীঘি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, পতিসর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক, নওদুলী প্রাথমিক, মসকিপুর মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকসহ সর্বসাধারণের যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া প্রান্তিক কৃষকের দুর্ভোগ লাঘবের লক্ষে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত কৃষি ব্যাংকে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা এটিই।
জানা গেছে, আস্তে আস্তে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে এই সড়কটি। উপজেলার পূর্ব-উত্তরাঞ্চল ও পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামের হাজার হাজার সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এই প্রধান সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। দীর্ঘদিন কোন সংস্কার না করায় সড়কের অধিকাংশ স্থানে পাকা উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানা-খন্দে যা দেখে মনে হবে মাছ চাষের জন্য ছোট ছোট পুকুর।
পালশা গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো: স¤্রাট হোসেন বলেন, কৃষিপণ্যসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহন করার ক্ষেত্রে যানবাহন চলাচলে সমস্যার শেষ নেই। এই প্রধান সড়কটি ব্যবহার করেই নানা প্রয়োজনে উপজেলার সমগ্র পূর্বাঞ্চলের মানুষদের প্রতিনিয়তই উপজেলা সদরে আসতে হয় এবং উপজেলার উপর দিয়ে রাজশাহী ও নওগাঁয় প্রবেশ করতে হয়। অথচ রাস্তাটি দীর্ঘদিন কোন প্রকার সংস্কার হয়না।
তিনি আরো বলেন এই বর্ষাকালে পুরো কাদাপানিতে একাকার হয়ে সড়কটি যেন ধান চাষের উপযুক্ত জমিতে পরিনত হয়েছে এবং একটু অসাবধান হলেই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে অনেককেই। শুষ্ক মৌসুমে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে বলে পথচারীদের অভিযোগ। দ্রুতগতিতে সড়কের সংস্কার করা না হলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক চাকা থেমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
উপজেলার বাঁকাগ্রামের আকবর হোসেন, মারিয়া গ্রামের জাহাঙ্গির আলমসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন পরিবহন চালকরা যানবাহনের ভাড়া ইতিমধ্যে বেড়ে দিয়েছে। সড়কের যে বেহাল দশা এই অবস্থায় তাদের গাড়ীর যন্ত্রাংশ টিকছে না। টায়ার-টিউব ঘনঘন ফুটো হয়ে যাচ্ছে। একটুতেই গাড়ীর যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে যাচ্ছে এবং প্রায় দ্বিগুন সময় লাগায় আগের মতো অতিরিক্ত ভাড়া ধরা যায় না। বর্ষাকালে তো এই দুর্ভোগ আরো চরমে উঠে যায়। যে সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারী ও ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে সে সড়কটি নিয়ে কাহারো কোন মাথাব্যাথা দেখছি না। তাহলে আমরা কোন দেশে বসবাস করছি।
সিএনজি চালক মোবারক হোসেন, ইজিবাইক চালক খোরশেদ আলম, ভ্যানচালক আব্দুল লতিফসহ অনেকেই বলেন, সড়কের বেহাল দশায় যাত্রীরা এখন আর সব ধরণের গাড়িতে উঠতে চায় না। প্রতিদিনের আয় ক্রমেই কমে যাচ্ছে। রাস্তা ভালো থাকতে আগে যেখানে প্রতিদিন ১হাজার থেকে ১৫শ টাকা আয় হতো এখন সেখানে অর্ধেক করাই অনেক কষ্টকর হয়ে গেছে। আমরা আর পারছি না। যারা এই সড়কের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে তাদের পরিবারেও অশান্তি দেখা দিয়েছে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ছানাউল ইসলাম বলেন, আমার জানামতে রাস্তাটি প্রথমে এলজিইডির আওতায় ছিলো। পরে সেটি জাইকার আওতাভুক্ত হওয়ায় জাইকার দেওয়া ক্রাইটেরিয়া পুরন না হওয়ায় সংস্কার কাজ হতে বিলম্ব হচ্ছে।
এই বিষয়ে অফিসে গিয়ে এবং একাধিকবার মুঠোফোনে নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম হোসেন মিঞার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ না কারায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।