শুক্রবার ● ১৫ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরের কালীগঞ্জে মাছের মেলা, জামাই মেলা
গাজীপুরের কালীগঞ্জে মাছের মেলা, জামাই মেলা
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: মূলত এটা জামাই মেলা৷ কিন্তু সবাই এটাকে বলে মাছের মেলা৷ বলছিলাম গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রামের মাছের মেলার কথা৷ আর এই দিনটিকে ঘিরেই এখানে দিনব্যাপী চলে আনন্দ-উত্সব৷ দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী৷ এটা জামাই মেলা হলেও, এখানে বসে মাছের বিরাট মেলা৷
বিনিরাইল এবং এর আশপাশে গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সে সমসত্ম জামাইরা হচ্ছে ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনার্থী৷ তাছাড়া এই মেলাকে ঘিরে এলাকার জামাইদের মধ্যে চলে এক নীরব প্রতিযোগিতা৷ আর এই প্রতিযোগিতাটি হচ্ছে কোন জামাই সবচেয়ে বড় মাছটি ক্রয় করে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে পারে৷
একটা মাছকে ঘিরে ক্রেতা জামাইদের জটলা লেগে আছে৷ মাছের নাম বাঘাড়৷ বিক্রেতা দাম হেঁকেছেন ২২ হাজার টাকা৷ ক্রেতাদের মধ্যে স্থানীয় রামচন্দ্রপুর এলাকার জামাই ফারুক মাছটির দাম সর্বোচ্চ ১১ হাজার টাকা বলছেন৷ কিন্তু বিক্রেতা আরো বেশি দাম পাবার আশায় মাছটি ছাড়ছেন না৷ চলছে দর কষাকষি৷ যতনা ক্রেতা তার চেয়ে অনেক বেশি উত্সুক জনতা ভিড় জমিয়েছেন মাছটি দেখার জন্য৷
পৌষ মাসের শেষে মাঘ মাসের দ্বিতীয় দিন ১৫ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যনত্ম সরেজমিনে উপজেলার জামালপুর, বক্তারপুর ও জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের মধ্যে বিনিরাইল গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এই দৃশ্য৷
উপজেলার বিভিন্ন প্রানত্ম থেকে লোকজন তো এসেছেনই৷ এর বাইরে থেকেও অনেকে এসেছেন উপজেলার সর্ববৃহত্ এই মাছের মেলায়৷ গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন৷ প্রতি বছর পৌষ-সংক্রানত্মিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা৷ এবারের মেলায় প্রায় ৩ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন৷
মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও বসেছে৷ মাছের মেলায় সামদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে নানা রকমের দেশি মাছও৷
বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজকরা আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রানত্মি ও নবান্ন উত্সবে আয়োজন করা হতো৷ প্রায় ২৫০ বছর যাবত্ মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উত্সবে রূপ নিয়েছে৷
মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি নুরম্নল ইসলাম নুরম্ন ও সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন শেখ আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরম্ন হওয়া বিনিরাইলের মাছের মেলা এখন ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে৷ এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত৷ এলাকার জামাইরা বলেন, শ্বশুরবাড়িতে মাছ নিয়ে যাওয়া বলে কথা৷ তাই এলাকার সকল জামাইদের নজর বিনিরাইলের মাছের মেলার বড় মাছটার দিকেই৷
তাই স্থানীয় বড় মাছ ব্যবসায়ীরা সপ্তাহখানেক ধরে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করে থাকেন৷ সেই অনুযায়ী মাছের দামও হাঁকানো হয়৷
বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় কলাপটুয়া গ্রামের সোহেল আহমেদের সঙ্গে৷ তিনি আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, এবার সাড়ে ১৫ হাজার টাকার চিতল, বোয়াল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কিনেছেন বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য৷
মাছের মেলা সংলগ্ন মোক্তারপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের শাখাওয়াত্ হোসেন আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, মাছের মেলাটি এ অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারক৷ মেলায় বেচাকেনা যতই হউক, এ মেলা আমাদের ঐতিহ্য আর কৃষ্টি-কালচারকে বহন করছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা৷
তিনি আরো জানান, শুরুতে এ মেলা শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য হলেও, বর্তমানে এটা সকল ধর্মের মানুষের কাছে ঐতিহ্যের উত্সবে পরিণত হয়েছে৷