সোমবার ● ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় বাঁশের সাঁকোয় চলাচলে ঝুকিতে শত শত মানুষ
গাইবান্ধায় বাঁশের সাঁকোয় চলাচলে ঝুকিতে শত শত মানুষ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধায় বন্যার পানি নেমে গেলেও রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় ভোগান্তি কোন ভাবেই কমছেনা তাই ক্রমেই বাড়ছে দুর্ভোগ। স্থানীয়রা স্বেচ্ছা শ্রমে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ যাতায়াতের ফলে ঝুকিপুর্ন হচ্ছে কাঠ ও বাঁশের তৈরি এই সাঁকো গুলো। দ্রুত মেরামতের জন্য সরকারি ভাবে আশ্বাস দেয়া হলেও ১ মাসেও ভেঙে পড়া গ্রামীণ অবকাঠামো পুর্ণনির্মানের উদ্যোগ এখানো চোখে পড়েনি।
সরোজমিনে দেখা যায়, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা থেকে ত্রিমোহনী ব্রিজ হয়ে সাঘাটা উপজেলা সাথে সহজ যোগাযোগে এই রাস্তাটির উপর নির্মিত ৩টি ব্রিজসহ ৫ টি স্থানের কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। ফলে এইসব স্থানে ভাঙ্গনের ফলে কাঠের বা বাঁশের সাকো দেয়া হলেও এই সাকোগুলো দুর্বল হয়ে পরেছে। ফলে হেটে চলা ছাড়া কোন যানবাহন চলাচল করছে না। এছাড়াই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধসহ বিভিন্ন রাস্তা পানির চাপে ভেঙে গেছে। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বাটি গ্রাম, পশ্চিম রাঘরপুর, ভুতমারা, ফুটানির বাজার, রামনগর, দলদলিয়া, ময়মন্তপুর, মানিকগঞ্জ, বুরুঙ্গী, কানিপাড়া, গাছাবাড়ী,সহ ১৫ টি গ্রাম গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের রাখালবুরুজ, তেতুলতলি, সোনাইডাঙ্গা, তালুক সোনাইডাঙ্গা, চর সোনাইডাঙ্গা, নাকই, মধুরাপুর, নারায়ন পুর গ্রামসহ ১৫টি গ্রামের কাচা-পাকা রাস্তা ভেঙ্গে য্ওায়ায় এসব মাঝে সাধারণ মানুষদের দুভোর্গ বেড়েই চলছে। এছাড়াও সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের পোরাগ্রাম এলাকায় গাইবান্ধা-সাঘাটা আঞ্চলিক মহাসড়কসহ ও বন্যা নিয়ন্ত্রন ওয়াফদা বাঁধের কিছু আংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় জেলার সাথে এই মহাসড়ক দিয়ে বাস ট্রাক লেগুনাসহ ভারী যান চলাচল বন্যার আগ থেকেই বন্ধ আছে। এলাকাবাসির অভিযোগ, জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন শহরে যেতে হয় মালামাল আনতে। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরায় শহর থেকে মালামাল গ্রামে আনতে পারছেন না তারা। তাই ব্যবস্যা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শত শত খেটে খাওয়া সাধারণ ব্যবস্যায়ীদের ।
গাইবান্ধার বোনারপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী শিমু । প্রতিদিন দলদলিয়া গ্রাম থেকে থেকে ভ্যান যোগে বোনারপাড়া স্কুলে যেতে খরচ হতো ৫ টাকা । কিন্তু বন্যার কারনে যাতায়াতের রাস্তা নষ্ট হওয়ায় ৫ টাকার ভাড়া ১০ থেকে ১৫ টাকা দিতে হচ্ছে। শিমুর মতো আরো শত শত শিক্ষার্থী টাকা অভাবে হেটে স্কুলে যেতে হচ্ছে । সময় মতো আসতে না পাড়ায় পাঠ দান ব্যহত হচ্ছে । সাঘাটা উপজেলার দলদলিয়া গ্রামের বাসিন্দা রেজওয়ানুল হক সাগর জানান, তার গ্রাম হতে জেলা ও উপজেলা শহরে যাওয়ার সব ক’টি রাস্তার কিছু অংশ এবারের বন্যায় ধ্বসে গেছে। বন্যার দীর্ঘ সময় পার হলেও কিন্তু এই রাস্তাগুলো মেরামতের এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হইনি।
বোনারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়ারেছ প্রধান জানান, মানুষের চলাচলের জন্য গ্রামবাসী মিলে নিজেদের চেষ্টায় বাঁশ, কাঠ দিয়ে যাতায়াত প্রাথমিক চালু করা হয়েছে। এই সব মেরামতের জন্য এখনো সরকরি ভাবে কোন বরাদ্ধ আসে নি।
ফুলছড়ি উপজেলার প্রকৌশলী, ছাবিউল ইসলাম জানান, এবারের বন্যায় শুধু সাঘাটা উপজেলার ১শ ১৭ টি পাকা রাস্তার ২শ ৫০ কিলোমিটার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার বন্যায় ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও ১০টি ব্রিজের সংযোগ সড়ক সম্পুর্ন ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ঘাটের তালিকা সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তওে প্রেরন করা হয়েছে।
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া জানান, মানুষ যাতে কোন কষ্ট না পায় তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে । আশা করা যাচ্ছে আগামী অক্টোবরের মধ্যেই কনস্টাকশনের কাজ শুরু করা হবে ।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সম্পুর্ন ভাবে বাঁধের ক্ষতি হয়েছে ১.৫ কিলোমিটার, আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৯৭.৫ কিলোমিটার। কাচা ও পাকা রাস্তার সম্পুর্ন ক্ষতি হয়েছে ২২ কিলোমিটার আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৮শ ৩৩ কিলোমিটার। এছাড়াও ৩৯ টি কালভার্টেও সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। গাইবান্ধাতে প্রায় ৩৬টি পয়েন্টে রাস্তা এবং বাঁধ ভেঙেছে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে জেলার ৬৩ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে।