রবিবার ● ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » স্ত্রীকে হত্যার তিন মাস পরে ধরা পড়েছে ঘাতক স্বামী আব্দুল কাদের
স্ত্রীকে হত্যার তিন মাস পরে ধরা পড়েছে ঘাতক স্বামী আব্দুল কাদের
মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি :: স্ত্রীকে হত্যার পরে লাশ গুম করার তিন মাস পরে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে ঘাতক স্বামী মো. আব্দুল কাদের (৪২)। পুলিশী নানামুখী তৎপরতায় পালিয়ে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার। শুধুমাত্র একটি কঙ্কাল থেকে লাশের পরিচয় শনাক্ত এবং সে সুত্র ধরে ঘাতককে গ্রেফতারের মাধ্যমে পুলিশ আবারো তাদের পেশাদারিত্বের প্রমাণ দিয়েছেন বলে মনে করছেন সচেতন মহলসহ অজ্ঞাত কঙ্কাল ( মাইনুর বেগম)এর পরিবার।
খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজ্জামানের নির্দেশনায় এবং মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সামছুদ্দিন ভুইয়ার সার্বিক তত্বাবধানে তথ্য প্রযুক্তির কলাণে মামলার সন্দেহভাজন মো. আব্দুল কাদেরকে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পানছড়ি সদর বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মো. শাহানুর আলম’র নেতৃত্বে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ।
জানা গেছে, গত ১ আগষ্ট স্থানীয়দের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মাটিরাঙ্গা থানাধীন বেলছড়ির চোংড়াকাপা এলাকার দুর্গম পাহাড় থেকে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যাক্তিদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মাটিরাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোজাম্মেল হোসেন। মাটিরাঙ্গা থানার মামলা নং ০১, তারিখ- ০১/৮/১৯ ইং
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শাহানুর আলম দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত কাজ চালিয়ে যান। তদন্তকালে সন্দেহের তীর ঠেকে গোমতির বান্দরছড়ার মৃত: আবু খাঁ’র ছেলে মো. আব্দুল কাদেরের দিকে। তাকে গ্রেফতার করতে পতেঙ্গা, ইপিজেটসহ চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ। অবশেষে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে তার অবস্থান শনাক্ত করে গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালের দিকে পানছড়ি বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তারা। গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে ঘাতক মো. আব্দুল কাদের। গ্রেফতারের পর শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ির চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল আলমের আদালতে হাজির করা হলে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানন্ধি প্রদান করেছেন বলে জানিয়েছেন মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সামছুদ্দিন ভুইয়া।
এ ছাড়া হত্যার স্বীকার লক্ষীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামের মোস্তফা সর্দারের মেয়ে মাইনুর বেগম (২৩) চট্টগ্রামের একটি গার্মেন্টে চাকরী করতো। গার্মেন্টে চাকুরীর সুবাদে প্রথমে পরিচয়, অতপর প্রেম ও পরে বিয়ে হয় মো. আব্দুল কাদেরের সাথে। বিয়ের পর থেকেই চট্টগ্রামের ফ্রি-পোর্ট এলাকার মাইলের মাথা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতো তারা। গেল রমজানের ঈদ উপলক্ষে ৮ জুন স্ত্রী মাইনুর বেগমকে নিয়ে গোমতির বান্দরছড়ায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসে মো. আব্দুল কাদের।
দুই দিন পরে ১০ জুন সকাল ১১টার দিকে স্ত্রীকে পাহাড় দেখাতে নিয়ে যায় মো. আব্দুল কাদের। একপর্যায়ে আর্থিক বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হলে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে আব্দুল কাদের। এসময় তার মৃত্যু নিশ্চিত করে চোংড়াকাপার গভীর বনে লাশ ফেলে পালিয়ে যায় ঘাতক আব্দুল কাদের। হত্যাকান্ডের দুই মাসের মাথায় মাটিরাঙ্গার বেলছড়ির চোংড়াকাপা এলাকার দুর্গম পাহাড় থেকে এক কঙ্কাল উদ্ধার করে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ।
খুনের এ ঘটনায় পুলিশের দায়িত্বশীল ভুমিকার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হত্যার শিকার মাইনুর বেগম এর পরিবারের লোকজন। তারা বলেন, আমরা দরিদ্র ও অসহায় পরিবার, পুলিশ তার নিজস্ব চেষ্টায় খুনিকে গ্রেফতার করেছেন । এ জন্য আমরা পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞ।