সোমবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » নদীতে বিলীন ১২টি স্কুল, খোলা আকাশের নিচে পাঠদান
নদীতে বিলীন ১২টি স্কুল, খোলা আকাশের নিচে পাঠদান
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: সম্প্রতি উজানের পানি আর টানা বর্ষনে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ত্রিশ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে বিপদসীমার ১৫৩ সে.মি. উপর দিযে প্রবাহিত হওয়ায় ধ্বসে যায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বাঁধভাঙ্গা বন্যার পানি গ্রাম-শহর ভাসিয়ে বাড়িঘর, রেললাইন আর সড়কের পর সড়ক লন্ডভন্ড করে আঘাত হানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। ভয়াবহ বন্যায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় গাইবান্ধার ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাঁধভাঙ্গা প্রবল স্রোত আর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাওয়া ওইসব বিদ্যালযগুলোর শিক্ষার্থীদের সড়কের পাশে খোলা আকাশের নিচে, বাড়ির উঠানে, ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে কিংবা বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ফলে চলতি বছর ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষকরা। আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি বরাদ্দ পেলে স্কুলের কক্ষ তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হবে।
এবারের দুই দফা বন্যায় ফুলছড়ি, সাঘাটা, সদর, সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসহ অন্যান্য এলাকার ২২০টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। তবে পানি নেমে যাওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ২০৮টিতে ক্লাস শুরু হয়। আর ফুলছড়ির হারোডাঙ্গা, ধলিপাটাধোয়া, কেতকিরহাট, জামিরা, আঙ্গারীদহ, গাইবান্ধা সদরের চিথুলিয়ার চর, চিথুলিয়া দিগর নতুন পাড়া, বাজে চিথুলিয়া, মৌলভীর চর, কেবলাগঞ্জ, সুন্দরগঞ্জের উজানবুড়াইল, চরপূর্ব লাল চামার সরকারি প্রাথমিক স্কুলসহ বাকি ১২টি স্কুল বন্যার সময় তীব্র নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
জানা গেছে, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংলগ্ন কেতকির হাট সরকারি প্রাথমিক স্কুলের দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল ভবনের কোনো অস্তিত্ব নেই। সেখানে ভাঙনের চিহ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে দুই-তিনটি পিলার। অথচ বন্যার কয়েক দিন আগেই স্কুলটির ছাত্রছাত্রীরা নতুন দ্বিতল ভবনে শিক্ষকদের কাছে পাঠগ্রহণ করত। পাশের একতলা পুরনো ভবনটিতেও ছিল তাদের ক্লাসরুম। প্রশস্ত আঙিনায় ছিল খেলার সুযোগ। পাশেই ছিল কেতকিরহাট বাজার। সবেই পাওয়া যেত সে বাজারে। কিন্তু ভাঙনের তোড়ে ভবন দুটিসহ প্রায় শতাধিক দোকানপাট, বাড়িঘর মুর্হুতের মধ্যে ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে হারিয়ে যায়। স্কুলের আসবাবপত্র, বেঞ্চ, টেবিলসহ সব জিনিস ডুবে যায়। হারিয়ে যাওয়া স্কুল ভবনের পাশে গাছতলা ও ছাপরাঘরে বসে তারা এখন হতাশ চোখে ক্লাস করছে। পাঠ নিতে গিয়ে তাদের শুধুই মন খারাপ হয়।
কেতকির হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোছা: রেজিয়া খাতুন বলেন, ভেঙে যাওয়া স্কুলের পাশে তাঁরা নিজেরা একটি ছাপরা ঘর তুলেছেন। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মহোদয় টিন দিয়েছেন। সেখানে পাঠদান করা হচ্ছে। এদিকে স্কুল ভবন না থাকায় এবার চর এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার সংখ্যা বাড়তে পারে।
এব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. হোসেন আলী জানান, নদীভাঙনে ১২টি স্কুল বিলীন হয়েছে। এরমধ্যে সুন্দরগঞ্জে ২টা ফুলছড়িতে ৫টা ও গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ৫টা। উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছি বরাদ্দ পেলে স্কুলের কক্ষ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।