বৃহস্পতিবার ● ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » পরবাস » লাশ হয়ে ব্রুনাই থেকে দেশে ফিরলেন কনু মিয়া : পরিবারের আহাজারি
লাশ হয়ে ব্রুনাই থেকে দেশে ফিরলেন কনু মিয়া : পরিবারের আহাজারি
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ব্রুনাই থেকে লাশ হয়ে দেশে ফিরলেন সিলেটের বিশ্বনাথের কনু মিয়া (৩৫)। সেদেশে নিহতের এক সপ্তাহ পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাড়িতে আসে তার মৃতদেহ।
তিনি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের দ্বিপবন্দ বিলপার (গোবিন্দনগর) গ্রামের মৃত ময়নার ছেলে।
গতকাল বুধবার মধ্য রাতে মালেশিয়ার বিমানের একটি ফ্লাইটে তাঁর মরদেহ ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে। বিমানবন্দরে কনু মিয়ার স্বজনরা তাঁর লাশ গ্রহণ করেন।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার সকালে নিহত কনু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে লাশ আসার অপেক্ষায় স্বজনরা। এমন খবরে এলাকার লোকজন তাঁর বাড়িতে ছুটে আসেন। কখন আসবে লাশ। এর অপেক্ষায় এলাকার লোকজন। সকাল সোয়া ১০টা। কনু মিয়ার লাশ বহণকারী গাড়ি বাড়িতে প্রবেশ করছে।
লাশ গাড়ি থেকে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে পড়েন। কয়েকবার জ্ঞানহীন হয়ে পড়েন কনু মিয়ার বৃদ্ধা মা সমছু বিবি ও স্ত্রী লাভলী বেগম। সকলের কান্নাকাটিতে ভারী হয়ে উঠেছে আশপাশ পরিবেশ। পরিবারের সদস্যদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন পাড়া-প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনরা। কনু মিয়ার মৃতদেহ বাড়িতে আসার খবর স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হলে তাকে শেষে বারের মতো এক নজর দেখতে লোকজন ভিড় করেন তাঁর বাড়িতে। এ সময় এলাকায় নেমে আসা শোকের ছায়া। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ভাইদের মধ্যে সবার ছোট কনু মিয়া।
জানা গেছে, কনু মিয়া প্রায় ৬ মাস পূর্বে জীবিকার তাগিদে ব্রুনাইয়ে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি ভবন নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। গত ১৭ সেপ্টেবর ব্রুনাইয়ে তিনতলা নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। কাজের সময় অসাবধানতাবশত পা পিছলে তিনতলার ভবনের ছাদ থেকে নিচে পড়ে যান। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ওই দেশের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত অবস্থায় তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সময় গত ১৮ সেপ্টেবর রাত ২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত কনু মিয়ার এক ছেলে, দুই মেয়ে সন্তান রয়েছে।
এ ব্যাপারে কনু মিয়া স্ত্রী লাভলী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিদেশের মাটিতে গিয়েছিল স্বামী। কিন্তু আমাদের সকল স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে। স্বামী লাশ হয়ে দেশে আসবেন কখনও কল্পনা করিনি।
কনু মিয়ার চাচাতো ভাই ও খাজাঞ্চি ইউপি সদস্য সিরাজ মিয়া জানান, সম্প্রতি তার চাচাতো ভাই বাংলাদেশ ত্যাগ করে মধ্যপ্রাচ্যের ব্রুনাইয়ে যান। সেখানে তিনতলা ভবন থেকে পড়ে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। বুধবার মধ্যরাতে মালেশিয়ার একটি বিমানে দেশে তাঁর লাশ আসে। আমরা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর লাশ গ্রহণ করি। বৃহস্পতিবার বাদ যোহর কনু মিয়ার জানাযার নামাজ শেষে নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে বলে তিনি জানান।