বৃহস্পতিবার ● ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » গাইবান্ধার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর বেহাল অবস্থা
গাইবান্ধার উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর বেহাল অবস্থা
সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: নানা সমস্যা সংকটে গাইবান্ধা জেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর এখন বেহাল অবস্থা। ফলে গ্রামের দরিদ্র মানুষ চিকিৎসা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে কোন অবকাঠামো জনবল এবং চিকিৎসক না থাকায় মানুষ চিকিৎসা ক্ষেত্রে উপকৃত হচ্ছে না। কোন কোন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও এ সমস্ত উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের নিজস্ব অবকাঠামোও রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক বা জনবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না।
এতে বিশেষ করে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এলাকার মানুষ সমস্যায় পড়েছে। কেননা এসব এলাকার দরিদ্র মানুষ মূলত: সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধপত্রের উপর নির্ভরশীল থাকে। কেননা যোগাযোগের অব্যবস্থার কারণে চরাঞ্চল থেকে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে এসে দরিদ্র মানুষের পক্ষে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। উল্লেখ্য, জেলার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের ১৬৫টি চরাঞ্চলের নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলভূক্ত ইউনিয়নের গ্রামগুলোর জন্য বর্তমানে কোন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। এর আগে শুধুমাত্র সদর উপজেলার মোল্লারচরে একটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকলেও তা নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। এরপর ওই ইউনিয়নে আর নতুন করে কোন স্বাস্থ্য ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়নি। তবে ফুলছড়ির এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র না থাকলেও একটি পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়ে থাকে বলে জানা গেছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৭টি উপজেলার ৮২টি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে রয়েছে ৮৪টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এসব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে অবকাঠামো, জনবল রয়েছে ৩৫টিতে। বাকি ৪৮টিতে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোন অবকাঠামো না থাকায় এসব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা কার্যক্রম সঠিকভাবে চলছে না। সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে চিকিৎসক নেই। এসব উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে ৩৬টি। আর নবসৃষ্টি সহকারী সার্জনের পদ রয়েছে ৪৮টি। কিন্তু চিকিৎসক রয়েছে ১২টি কেন্দ্রে, বাকি ৭২টি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসকের পদ রয়েছে। তবে এর মধ্যে ৮টি কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার রয়েছে, আর নবসৃষ্টি সহকারী সার্জন রয়েছে মাত্র ৪টি কেন্দ্রে। আর বাকি সবগুলো কেন্দ্রেই চিকিৎসক পদ শূন্য।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল¬মঝাড় ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও ঘাগোয়া ইউনিয়নের দারিয়াপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র দুটির নিজস্ব ভবন থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় অবকাঠামোগুলোর বেহাল অবস্থা। তদুপরি দুটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গা বেদখল করে নিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে প্রভাবশালীরা। এই বল¬মঝাড় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার, ফার্মাসিস্ট, এমএলএসএস এবং (এফডাবি¬উভি) এর পদ শূন্য। এছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই এবং সীমানা প্রাচীর না থাকায় রাতে এখানে মাদকাসক্তদের আখড়ায় পরিণত হয়। এদিকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির শতকরা ২০ ভাগ জমি অবৈধভাবে দখলদাররা দখল করে নিয়েছে। উল্লেখ্য, এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আশেপাশের দরিদ্র রোগীরা চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে। শুধুমাত্র উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দীর্ঘ ৫ বছর যাবত একাই এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পরিচালনা করে আসছেন।
দারিয়াপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক থাকলেও তিনি নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। এছাড়া এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অধিকাংশ স্টাফের পদও শূন্য রয়েছে। এই কেন্দ্রের সম্মুখভাগের জায়গাগুলো দখল করে নিয়ে এমদাদুল হক সার্ভিস সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করে আসছে।
উল্লেখ্য, জেলার অন্যান্য যে সমস্ত উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো রয়েছে সেগুলোরও নানা সমস্যা সংকটে বেহাল অবস্থা। অনেক কেন্দ্রে চিকিৎসক স্টাফ থাকলেও তারা নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না এবং থাকলেও স্বল্প সময়ে উপস্থিত হয়ে দায়িত্ব সারেন। চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ডবয় সহ অন্যান্যরা চিকিৎসা ও ওষুধ দেয়ার কাজ করেন। যেগুলো কেন্দ্রে অবকাঠামো রয়েছে সেগুলোরও অযত্নে অবহেলায় বেহাল অবস্থা। অধিকাংশ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গা বেদখল করে নিয়েছে এলাকার প্রভাবশালী লোকজন। এব্যাপারে সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা যায়, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো চিকিৎসক বরাদ্দ, অবকাঠামো নির্মাণসহ সংশ্লিষ্ট সকল সমস্যা সংকট নিরসনে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।