সোমবার ● ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » পার্বত্য এলাকায় আখ চাষ সম্প্রসারণ করা হবে
পার্বত্য এলাকায় আখ চাষ সম্প্রসারণ করা হবে
রাঙামাটি :: চিনিকল বিহীন পার্বত্য এলাকার উৎপাদিত আখ দিয়ে তিন পার্বত্য জেলাকে গুড় তৈরীর অঞ্চল হিসাবে গরে তোলা হবে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের ইক্ষু চাষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চলতি বছর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশেষ ইক্ষু চাষ প্রকল্প গ্রহনের পরিকল্পনা নিয়েছে।
আজ সোমবার রাঙামাটিতে অনুষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু, সাথী ফসল ও গুড় উৎপাদনের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা শীর্ষক এক কর্মশালায় এ কথা জানানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য সচিব কৃষিবিদ আশীষ কুমার বড়ুয়া কর্মশালার উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনিস্টিউট রাঙামাটির আয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের জন্য পাইলট প্রকল্পের ৩য় পর্যায়ের আওতায় নিউ কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার সন্মেলন কক্ষে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনিস্টিউট -বিএসআরআই এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ড, এবিএম মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় রাঙামাটি এটিআই এর অধ্যক্ষ কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর, রাঙামাটি কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক পবন কুমার চাকমা বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনিস্টিউট রাঙামাটি উপ কেন্দ্রের কর্মকর্তা সমাপ্তি খীসার সঞ্চলনায় বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনিস্টিউট রাঙামাটি উপ কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ধনেশ্বর তংচঙ্গ্যা, বান্দরবান উপ কেন্দ্রের উধ্বতন বৈঁজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাছেং অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, ইক্ষু একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল। ফলে স্বল্পমেয়াদি ফসলের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়। ইক্ষু চাষের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব বেশি হওয়ায় দুই সারির মাঝে স্বল্পমেয়াদি ফসলের চাষ করা যায়।
কৃষকের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাথীফসল প্রযুক্তি এবং জোড়া সারিতে রোপণকৃত ইক্ষুর সাথে পর্যায়ক্রমিক একাধিক সাথীফসল চাষ প্রযুক্তি সুপারিশ করা হয়েছে। সাথীফসলের বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য প্যাকেজগুলো হলো এক সারি ইক্ষুর সাথে আলু/পেঁয়াজ/রসুন; জোড়া সারি ইক্ষুর সাথে আলু-মুগডাল/সবুজ সার; জোড়া সারি ইক্ষুর সাথে পেঁয়াজ-মুগডাল/সবুজ সার; জোড়া সারি ইক্ষুর সাথে রসুন-মুগডাল/সবুজ সার; জোড়া সারি ইক্ষুর সাথে বাঁধাকপি-মুগডাল/সবুজ সার; জোড়া সারি ইক্ষুর সাথে ফুলকপি-মুগডাল/সবুজ সার; জোড়া সারি ইক্ষুর সাথে ব্রোকলি-মুগডাল/সবুজ সার; জোড়া সারি ইক্ষুর সাথে পেঁয়াজ/সরিষা/সবুজ সার; জোড়া সারি ইক্ষুর সাথে পেঁয়াজ/মসুর/সবুজ সার। স্বল্পমেয়াদি ডাল ফসলের চাষের ফলে কৃষকের আয় বৃদ্ধি পায় এবং আমিষের উৎস হিসেবে প্রতিদিনের খাদ্যে ব্যবহার করতে পারে।
কর্মশালায় আখ চাষী, জন প্রতিনিধি , কৃষিকর্মকর্তারা অংশ নেন। মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন পার্বত্য অঞ্চলে আখ চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং তামাকের বিকল্প হিসাবে দাড়িয়েছে। কিন্তু আখের ব্যাপক উৎপাদন হলেও বাজার জাত করনে পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ায় এবং আখের উপর বিভিন্ন সংস্থার টোল ট্যাক্স আদায়সহ পাহাড়ের বেপরোয়া চাদাঁবাজীর কারনে আখ চাষরিা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এ অবস্থার পরিবর্তন হলে পাহাড়ে আখ চাষ করে দরিদ্র চাষীরা লাভবান হবেবলে তারা উল্লেখ করেন।
কৃষিবিদ আশীষ কুমার বড়ুয়া বলেন ,পার্বত্য চট্টগ্রামের ইক্ষু চাষ সম্প্রসারনে পাহাড়ে ব্যাপক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চলতি বছর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিশেষ ইক্ষু চাষ প্রকল্প নেয়া হচ্ছে । প্রকল্পটি শুরু হলে আখ চাষ আরো সম্প্রসারণ করে উপজেলা পর্যায়ে চাষীদের জন্য গুড় তৈরীর মেশিন ক্রয় করে দেয়া হবে।
বিএসআরআই এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ড, এবিএম মফিজুর রহমান বলেন বিএসআরআই পরিবর্তিত জলবায়ুগত অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন কৃষি-পরিবেশ অঞ্চলে চাষের জন্য ৪৫টি ইক্ষু জাত উদ্ভাবন করেছে। ওই ইক্ষু জাতগুলো দেশের চিনিকল এলাকার প্রায় ৯৯% এবং চিনিকল বহির্ভূত গুড় এলাকায় প্রায় ৫৭% এলাকাজুড়ে চাষাবাদ হচ্ছে। বিএসআরআই উদ্ভাবিত ইক্ষু জাতগুলোর গড় ইক্ষুর ফলন হেক্টরপ্রতি ১০০ টনের বেশি এবং আখে চিনির পরিমাণ ও ১২% এর ঊর্ধ্বে।
বিএসআরআই আখ ৪১ জাতটি চিনি ছাড়াও গুড়, রস তৈরি এবং চিবিয়ে খাওয়ার জন্য বিশেষ উপযোগী। গড় ফলনও হেক্টরপ্রতি ১৫০ টনের ঊর্ধ্বে। নিম্ন তাপমাত্রায় ইক্ষুর অংকুরোদগম ভালো হওয়ার জন্য ঠাণ্ডা সহিষ্ণু ইক্ষু জাতও উদ্ভাবন করা হয়েছে। টিস্যুকালচারের মাধ্যমে পরিবর্তিত জলবায়ুতে চাষের জন্য বিএসআরআই আখ ৪৩ উদ্ভাবন করা হয়েছে।