বৃহস্পতিবার ● ৩ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » রাউজানে ঋনের দায়ে নিজের ছেলে বিক্রি : তিন মাস পর উদ্ধার
রাউজানে ঋনের দায়ে নিজের ছেলে বিক্রি : তিন মাস পর উদ্ধার
রাউজান প্রতিনিধি :: বে-সরকারী উন্নয়ন সংস্থা এনজিও থেকে নেয়া ঋনের বোঝা সামলাতে স্ত্রীর কাছ থেকে নিজের ছেলে চুরি করে অন্যের কাছে বিক্রি করেছে এহেছানুল্লাহ(৪৫)নামের এক ব্যক্তি। সেই গত তিন মাস আগে ৫২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়া ওই শিশুটিকে গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশ উদ্ধার করে রাউজানের কচুখাইন গ্রাম থেকে।
রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ কেপায়েত উল্লাহ জানিয়েছে, এহেছানুল্লাহর বাড়ী কুমিল্লা জেলার লাঙ্গলকোট থানার ভাঙ্গুরা ইউনিয়নে। তার বাবার নাম হাজী আবদুল মতিন। কুমিল্লায় তার স্ত্রী পুত্র থাকলেও গত আট বছর আগে তথ্য গোপন করে আরেকটি বিয়ে করে। সর্বশেষ স্ত্রী নাছিমা আকতার কক্সবাজারের মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মৃত বদিউল আলমের কন্যা। তার এই
সংসারে আছে রাব্বি(৭) নামের এক সন্তানসহ এক কন্যা। এহেছানুল্লাহ রাউজানের কচুখাইন গ্রামে বেশ কয়েক বছর ধরে জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তির ঘরে কামলা হিসাবে নিয়োজিত আছে। সেই সুবাদে গত তিন মাস আগে চট্টগ্রাম শহরে বেড়ানোর কথা বলে মহেশখালী থেকে স্ত্রী নাছিমাসহ দুই সন্তানকে নিয়ে এসে একটি আবাসিক হোটেলে যাত্রী যাপন করে। এহেছানুল্লাহ সকালে হোটেল থেকে ছেলে রাব্বিকে নিয়ে বের হয়, নগরের দিদার মার্কেট এলাকায় এক প্রবাসীর স্ত্রী বাছু আকতারের কাছে নিজের ছেলেটি ৫২ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়ে হোটেলে ফিরে যায়। স্ত্রীকে কান্নাকাটি করে বলে তার ছেলে হারিয়ে গেছে। এই কথা শুনে ছেলের মা বিলাপ করে কান্না জুড়ে দিলে সুচতুর এহেছানুল্লাহ তড়িগড়ি করে মাইক ভাড়া নিয়ে ছেলের সন্ধানে চকবাজার বাদুরতলা এলাকায় মাইকিং করে। সর্বশেষ স্ত্রী ও ছোট কন্যা সন্তানকে নিয়ে মহেশখালীতে চলে যায়। সেখানেও তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ছেলের সন্ধানে কিছু টাকা খরচ করে বৈদ্য ওঝার কাছে গিয়ে। সর্বশেষ স্ত্রীকে শান্তনা দিয়ে এহেছানুল্লাহ কর্মস্থলে যাওয়ার কথা বলে মহেশখালী থেকে কক্সবাজারের গিয়ে সেখানে চাকুরী নেয়। এমন পরিস্থিতিতে নাছিমার মাথায় আসে রাউজানের কচুখাইন গ্রামের যে বাড়িতে এহেছানুল্লাহ কাজ করছিল তাদের সাথে যোগাযোগ করার। তিনি ঘর থেকে খুঁজে নেয় স্বামীর দেয়া সেই সময়কালের মোবাইল ফোন নম্বার। ঐ ফোন নম্বারটি ছিল এক প্রবাসী মোরশেদ খানের স্ত্রী বাছু আকতারে। বাছু আকতারের সাথে ফোনে কথা বলার ফাঁকে নাছিমা তার স্বামীর খোঁজ নেয়ার অজুহাতে ফোন করেছেন বলে জানায়। ফাঁকে নিজের ছেলে রাব্বি নিখোঁজ হওয়ার সংবাদটি বাছু আকতারকে জানালে বাছু আকতার তাকে বলে রাব্বি নামের এক শিশুকে এহেছানুল্লাহ এনে তাদের কাছে বিক্রি করেছে। এই ঘটনাটি জেনে সন্তানহারা মা ছেলেকে ফিরে যেতে মহেশখালীর জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে নাছিমা সেখানকার থানায় ছুটে যায়। স্থানীয়রা কৌশলে এহেছানুল্লাহকে ফোনে ডেকে এনে মহেশখালীতে হাজির করে। এরপর থানার পরামর্শে নাছিমাসহ তার আত্মীয় স্বজনরা একজন গ্রাম পুলিশকে সাথে নিয়ে রাউজান থানায় আসে। এই ঘটনার সূত্র ধরে রাউজান পুলিশের এসআই জাবেদ মিয়া ছেলেটিকে উদ্ধারে প্রথমে হানা দেয় কচুখাইন গ্রামে।
এহেছানুল্লাহ যেই বাড়িতে আগে কাজ করত কচুখাইনের সেই বাড়ির মালিক জাকির হোসেনকে আটক করে। এই নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের স্বাীকারোক্তি আদায়ের পর ছেলেটি উদ্ধার যায় দিদার মার্কেট এলাকায় সেই বাছু আকতারের ঘরে। পুলিশ রাব্বিসহ জড়িতদের থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানায় জাকির হোসেন এর স্ত্রীর বড় বোন বাছু আকতার। তিনি (প্রবাসীর স্ত্রী) চার কন্যা সন্তানের জননী। তাদের সংসারে পুত্র সন্তান না থাকায় এহেছানুল্লাহকে তারা বলেছিল কোনো গরীরের ঘরে সন্তান দত্তক দিলে যেন তাদের এনে দেয়। বিনিময়ে টাকা দেবে। ঋনের দায়ে অস্থির এহেছানুল্লাহ এই সুযোগটি কাজে লাগায় নিজের সন্তানকে অন্যের সন্তান পরিচয়ে বিক্রি করে দেয়ার মাধ্যমে। এহেছানুল্লাহ থানায় বলেন ঋনের টাকা পরিশোধের জন্য তিনি একাজ করেছেন। কচুখাইন গ্রামের জাকির হোসেন একজন শাররীক প্রতিবন্ধি। তিনি বলেছেন এহেছানুল্লাহ প্রতি সরল বিশ্বাসে ছেলেটি নিয়ে তার স্ত্রীর বড় বোনের কাছে দিয়েছিলেন। প্রবাসী ওই পরিবারটি ছেলেটি ঘরে তুলে নতুন কাপড় ছোপর দিয়ে সংসারের একজন হিসাবে লালন পালন করতে শুরু করেছিলেন। তাকে পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন। সর্বশেষ এই ঘটনা ফাঁস হলে বাছু আকতার সন্তানহারা মা নাছিমাকে রাব্বিকে তুলে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। জাকির হোসেন জানায় রাব্বির সব কাপড় ছোপর তার মাকে দেয়া হবে। বিনিময়ে দেয়া ৫২ হাজার টাকার দাবিও ছেড়ে দিয়েছে। থানার ওসি কেপায়েত উল্লাহ বলেন কোনো পক্ষ থেকে এহেছানুল্লাহ এর বিরুদ্ধে অভিযোগ না দেয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে থানা থেকে নাছিমা তার ফিরে যাওয়া সন্তানকে নিয়ে গন্তব্যে রওয়ানা হয়।
রাউজানে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অভিযান
রাউজান প্রতিনিধি :: রাউজানে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে বাজারে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার উত্তর-দক্ষিণ দুই প্রান্তে এই অভিযান চালান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ ও এসি ল্যা- এহেছান মুরাদ। রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সদরের ফকিরহাট ও এসি ল্যা- অভিযানে যান দক্ষিণ রাউজানের নোয়াপাড়া পথেরহাট। এখানকার দোকান গুলোতে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল এক’শ টাকা থেকে এক’শ দশ টাকায়। মূল্য তালিকায় এই দাম লিখে রাখছিল বিক্রেতারা। অভিযানের সংবাদ পেয়ে অনেকেই তড়িগড়ি করে মূল্য তালিকা সংশোধন করে ৬৫/৭০ টাকা করে দেয়। ভ্রম্যামান আদালত পরিচালনাকারীগণ স্থানীয়দের সাথে কথা বলে অসঙ্গিত পেয়ে দায়ি ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন অংশে জরিমানা করেন। একই সাথে অনেককেই সতর্ক করেন। প্রশাসন সূত্রে জানা যায় ফকিরহাটের ৭ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে ৩৮ হাজার। নোয়াপাড়ায় ৮টি দোকানে জরিমানা করা হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। দুই ম্যাজিস্ট্রেট জানিয়েছেন মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।