বৃহস্পতিবার ● ৩ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » জুবেল মিয়া জীবন যুদ্ধে হার না মানা একজন সৈনিক
জুবেল মিয়া জীবন যুদ্ধে হার না মানা একজন সৈনিক
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথ সরকারি ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের একাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী জুবেল মিয়ার জীবন যুদ্ধে হার না মানা একজন সৈনিক। প্রতিনিয়তই করে যাচ্ছেন দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। তিনি সকালে কলেজে ক্লাস শেষে বিকেলে দোকানদারি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে কলেজে ক্লাসে যান তিনি। প্রতিদিন ক্লাস শেষেই ভ্যানগাড়ি নিয়ে নেমে পড়েন সড়কে এক পাশ থেকে অপর পাশে সবজি চাষাবাদের বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট বীজ ক্ষুদ্র ব্যবসায়। জুবেল আহমদ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের কাদিপুর গ্রামের মৃত জমির আলীর ছেলে। বর্তমানে উপজেলা সদরের পুরান বাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় মা-দুই ভাই-দুই বোনদের নিয়ে বসবাস করে আসছেন। তিনি ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। তবে এলাকার লোকজন তাকে মেম্বার নামে ডাকেন এবং সবাই চিনেন।
উপজেলা সদরের পুরান বাজার এলাকায় জুবেল মিয়ার সঙ্গে দেখা হলে তিনি জানান, তাঁর বয়স যখন ১৮ মাস ছিল, তখন তাঁর পিতা মারা যান। এরপর তিনি মা-ভাই-বোনের আদরে বড় হন। অনেক কষ্ট করে লেখা পড়া শুরু করেন। এসএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীন হয়ে এবার বিশ্বনাথ সরকারি ডিগ্রি কলেজে মানবিক বিভাগে একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিদিন সকালে ক্লাস ছুটে যান, আর বিকেলে নেমে পড়েন ব্যবসায়। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে তার বড় ভাই সাহেদ আলীর সঙ্গে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে আসছেন তিনি। লেখা-পড়ার পাশা-পাশি তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এর পর থেকেই শুরু হয় তাঁর কর্মব্যস্ততা। তবে ফল মৌসুমে ফল, শীত মৌসুমে সবজির বীজ বিক্রয় করেন তিনি। তারা দুই ভাই দুটি ভ্যান গাড়ি করে উপজেলা সদরের এ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তারা প্রায় ২৫ হাজার টাকা নিয়ে এসব ব্যবসা শুরু করেছেন। এতে প্রতিদিন তিনি ৫শ থেকে ৬শ টাকার বীজ বিক্রয় করে আসছেন। এরআগে ফল বিক্রয় করেছেন। পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হতো তাঁকে। দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা জুবেল মিয়া। প্রতিদিন ব্যবসায়ী কাজ শেষে নিজ কক্ষে ফিরে পড়াশোনায় মনোযোগ দেন। ছোট দোকানের আয় থেকে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকেও সহায়তা করেন তিনি। জুবেল নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, লেখা পড়া করে উচ্চ শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি সফল উদ্যোক্তাদের কাতারে পৌঁছাতে চাই।
বিশ্বনাথের ফরিদের লাশ দেশে এসেছে
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: ইউক্রেন থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে স্লোভাকিয়ায় নিহত সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কারিকোনা গ্রামের সমশাদ আলীর ছেলে ও ইস্টান ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন আহমদ (৩৫) এর লাশ অবশেষে দেশে এসেছে। আজ বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যে থেকে সকাল ১০টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে লাশ এসে পৌঁছে।
বিমান বন্দরে লাশ গ্রহনকালে উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডাঃ শামসুল ইসলাম, নিহতের ছোট ভাই কাওছার আহমদ (যুক্তরাজ্য প্রবাসী), আলা উদ্দিন ও গিয়াস উদ্দিন সহ নিহতের স্বজনরা।
ফরিদের লাশ দেশে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে তাঁর ছোট ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী কাওছার আহমদ জানান, বুধবার (২ অক্টোবর) রাতে যুক্তরাজ্যের হিথরো বিমান বন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ফরিদ উদ্দিন আহমদের মরদেহ নিয়ে আসা হয়। লাশের সঙ্গে রয়েছেন চাচা যুক্তরাজ্য প্রবাসী আলকাছ আলী (আওলাদ)। ভাই ফরিদের নিহতের কারণ নিশ্চিত করতে পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দর থেকে লাশ ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। লাশ সেখানে একদিন হয়ত রাখা হতে পারে। তবে ফরিদের দাফনের বিষয়টি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি বলে তিনি জানান।
জানাগেছে, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপ দেখতে রাশিয়া যান ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। খেলা শেষ হওয়ার মাস খানেক পর তিনি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন যান এবং সেখান থেকে গত ২৮ আগস্ট দালালের মাধ্যমে ৫জন সঙ্গীর সাথে ইউক্রেন থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে যাত্রা করেন ফরিদ। এরপর ২ সেপ্টেম্বর ফরিদের সঙ্গীরা ফ্রান্স পৌঁছলেও নিখোঁজ হয়ে যান ফরিদ। পরিবারের পক্ষ থেকে দালাল ও সঙ্গীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে পরিবারের সাথে তারা নানান তালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর স্লোভাকিয়ার স্টারিনার এলাকার একটি পর্যটন স্পট থেকে ফরিদের মরহেদ উদ্ধার করে সেদেশের পুলিশ। ওই দিন অজ্ঞাতনামা যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে ‘জওজে টিভি’র বরাত দিয়ে সেদেশের ‘নোভেনী ডট এসকে’ নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদটি প্রচার করে। ফরিদের স্বজনরা যুক্তরাজ্য থেকে স্লোভাকিয়ায় গিয়ে সেদেশের একটি মর্গে ফরিদ উদ্দিন আহমদের লাশ সনাক্ত করেন। এরপর লাশ দেশে নিয়ে আসতে তারা অনেক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। একপর্যায়ে লাশ বাংলাদেশে নিয়ে আসতে আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করেন ফরিদের স্বজনরা। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবশেষে দেশে আনা হয় ফরিদ উদ্দিন আহমদের লাশ।