মঙ্গলবার ● ১৯ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » কৃষি » মাটিরাঙ্গায় চকপাড়া যেন এক ভূতুরে গ্রাম…!!
মাটিরাঙ্গায় চকপাড়া যেন এক ভূতুরে গ্রাম…!!
মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি :: দু:খে যাদের জীবন গড়া তাদের আবার দু:খ কিসের..? বাংলা এই প্রবাদের স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যাবে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড ত্রিপুরা অধু্যষিত চকপাড়া এলাকায়৷ সরকার দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করেছে দাবী করলেও চকপাড়ার বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন৷ স্বাধীনতার ৪৫ বছরে কত দুর্গম জনপদে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে তার অন্ত নেই৷ কতই না মেটোপথ পাকা হয়েছে উন্নয়নের ছোঁয়ায়৷ শুধু উন্নয়নের আলো পৌঁছেনি অসহায় ও অভিভাবকহীন চকপাড়া বসবাসকারী ত্রিপুরা জনগোষ্টির এই জনপদটিতে ৷ অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি-হয়তো পার্বত্য মাটিরাঙ্গার এমন উন্নয়ন বঞ্চিত গ্রাম দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবেনা দেশের অন্য কোনোপ্রান্তে ৷
সরেজমিনে গিয়ে সিনক,রণ,কামিনী,বিজয়সহ নাম না জানা চকপাড়া বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় হাজার লোক বসবাসকারী চকপাড়া গ্রামটিতে নেই মৌলিক চাহিদা পূরণের নুন্যতম কোন সুযোগ সুবিধা৷ নেই নিরাপদ পানির সু-ব্যবস্থা, পাহাড়ের কোলে খননকৃত কুপ বা কুয়ার পানি পান করা ছাড়া তাদের অন্য কোন উপায় নেই,পাহাড়ী ঢলে বর্ষা মৌসুমে বিধি বাম হয়ে তাদের সেই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করে৷ উপায় না পেয়ে এক রকম বাধ্য হয়েই নালা বা ছড়ার ঘোলা পানি পান করে তারা৷ নেই ভাল খাবার খাওয়ার অর্থ,যে কারণে পুষ্টিহীনতা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী,শিক্ষা গ্রহনে আগ্রহী এই গ্রামের শিশুদের নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রতিবেদক তথ্য সংগ্রহের প্রাক্কালে পুরো গ্রাম খুজেও একজন এসএসসি’র গন্ডি পার হওয়া শিক্ষার্থীর সন্ধান পায়নি৷ কারও পরনে নেই কোন ভাল জামাকাপড়৷ স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন সুবিধা না থাকায় খোলা জায়গায় মলমুত্র ত্যাগ করায় পানি বাহিত নানা রোগে আক্রান্তের শিকার হয় তারা৷ পেটের অসুখ,সর্দিকাশিসহ চিকিত্সা সেবার অভাবে বিভিন্ন রোগবালাই লেগেই থাকে৷ যোগাযোগের কোন রাস্তা না থাকায় গুরুতর অবস্থায় রোগীদের কাঁধে করে নিতে হয় মাটিরাঙ্গা হাসপাতালে৷ তাও আবার আযমরাই ছড়া পার হতে হয়ে পানি পথে,তাদের ভাগ্যে জোটেনি পার হওয়ার জন্য কোন ব্রীজ বা কালভার্ট৷ পার্বত্য জনপদের যানবাহন মোটরসাইকেলের সুবিধা পর্যন্ত তারা ভোগ করতে পারেনা দুর্গম রাস্তার কারণে৷ বর্ষা মৌসুমে পানি বৃদ্ধি পেলে পাহাড়ী স্রোতের কারণে,গাড়ী ও মোটরসাইকেলে যোগাযোগ তো দুরের কথা,পায়ে হেঁটে ঐ পাড়ার যাওয়ার মতো কোন সুযোগ থাকেনা৷ ৩ থেকে ৫ কি:মি: পথ পারি দিয়ে প্রাইমারী ও হাই স্কুল পড়ুয়া দু-একজন ছাত্র যা-ই আছে,তারাও বর্ষার ভরা মৌসুমে প্রায় ৬ মাস স্কুলে যেতে পারেনা৷ বিদ্যালয় ও বিদ্যুত্ বিহীন অন্ধকার ও দূর্গম গ্রামটি সন্ধ্যার পর যেনো এক ভয়াল ভুতুড়ে গ্রামে পরিণত হয়৷ মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মধ্যে এ যেন এক ভিন্ন গ্রহ৷
এ বিষয়ে ৪নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর ও মাটিরাঙ্গা পৌর আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মোস্তফা বলেন, চকপাড়ার মানুষ সত্যিই অবহেলিত ও উন্নয়ন বঞ্চিত,নানা সমস্যায় জর্জড়িত গ্রামটি৷ তাই চকপাড়া এলাকাবাসীর উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী উল্লেখ করে তিনি,চলতি অর্থবছরেই কার্যকরী প্রকল্প গ্রহনের মাধ্যমের অনগ্রসর এই জনপদে উন্নয়নে আলো পৌঁছে দিতে সরকারের কাছে দাবী জানান৷