শনিবার ● ১৯ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর গ্রেফতার
গণধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর গ্রেফতার
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়ে যুবতী আত্মহত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)’কে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯। সে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী চেরাগী গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ওসমানীনগর উপজেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার দুপুরে জাহাঙ্গীর আলমকে আদালতে প্রেরণ করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আবেনের প্রেক্ষিতে আদালত ৫দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
র্যাব-৯ সিলেটের (মিডিয়া অফিসার) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯, সিপিসি-১, সিলেট ক্যাম্প এর একটি আভিযানিক দল এএসপি সত্যজিৎ কুমার ঘোষ এর নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় অভিযান চালিয়ে ওসামনীনগর থানার লামাপাড়া এলাকা থেকে জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে বিশ্বনাথ থানায় হস্তাস্তর করা হয়।
এর আগে গত সোমবার রাতে নিহতের ভগ্নিপতি ও তেতলী চেরাগী গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের পুত্র ফয়জুল ইসলাকে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ এবং গত মঙ্গলবার রাতে মামলার অপর আসামী একই গ্রামের মৃত মতছির আলীর ছেলে জাহেদ (২২)’কে গ্রেফতার করে র্যাব। তবে মামলার অপর আসামী তেতলী চেরাগী গ্রামের আব্দুল মনাফের ছেলে বারিক মিয়া (৩৭) এখনো পলাতক রয়েছে।
বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের লালটেক গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে পপি বেগম (১৯) গত ৯ অক্টোবর দিবাগত রাতে তার বোনের বাড়ি তেতলী চেরাগী গ্রামে গণধর্ষণের শিকার হয়। পরদিন সকালে সে বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। তাকে দাফনের ২দিন পর তার ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগে নিজ হাতে লেখা একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) পায় পরিবার। ওই চিরকুটে পপি উল্লেখ করে ৯অক্টোবর দিবাগত রাতে বোনের বাড়িতে অবস্থানকালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে সে ঘরের বাহিরে যায়। তখন পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা বারিক ও জাহেদ তার (পপির) মুখ চেপে ধরে তাকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায় বাড়ির পাশ্ববর্তী জঙ্গলে। তখন তাদের পায়ে ধরে কান্না কাটি করতে থাকলে বারিক-জাহেদ ও তাদের সহযোগীরা মারধর করে পপিকে পাশবিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের পর পপিকে বোনের বাড়িতে (যেখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়, সেই স্থানে) ফেলে রেখে যায় জাহাঙ্গীর। আর গণধর্ষণের লজ্জা সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করে। এঘটনায় ৪জনকে আসামী করে গত সোমবার রাতে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নিহতের পিতা শুকুর আলী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বিশ্বনাথ থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) রমা প্রসাদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামী জাহাঙ্গীরকে শুক্রবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করে তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হয়। তবে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মামলার অপর আসামীকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কুসংস্কারের কারণে নিজ গ্রামে দাফনের সুযোগ হয়নি পপির
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়ে অপমান ভুলতে আত্মহত্যা করে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের লালটেক গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে পপি বেগম (১৯)। আত্মহননের পর যথারীতি নিজের পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের কথা থাকলেও গ্রাম্য মোড়ল ও স্থানীয় কুসংস্কারের কারণে নিজের জন্মভূমিতে দাফনের সুযোগ পায়নি পপি। ফলে সিলেট নগরীর মানিকপীর টিলায় তার লাশ দাফন করা হয়।
একবিংশ শতাব্দির এ যুগে আত্মহননকারী দাফনের পর ভুত হয়ে স্থানীয়দের জ্বালাতন করবে এ বিশ্বাসে পপির লাশ স্থানীয় ভাবে দাফন করা সম্ভব হয়নি এমনটাই পুরো এলাকা ঘুরে জানা গেছে। পুরো গ্রামবাসী এ ব্যাপারে অবগত ঠিকই কিন্তু মুখ খুলতে সম্পূর্ণ নারাজ। এমনকি নিহত পপির পরিবারও।
সরেজমিনে লালটেক এলাকা ঘুরে জানা যায়, আজ থেকে ২০ বছর আগে অত্র গ্রামের জনৈক জয়বান বিবি (৭০) এর পুত্র ঠিক অনুরূপ ভাবে আত্মহত্যা করলে তার লাশও এ গ্রামে দাফন না করে, পরিবারের লোকজন সিলেটের মানিকপীর টিলায় তার লাশ দাফন করা হয় বলে জানান জয়বান বিবি। তিনি বলেন, আত্মহত্যাকারী মরার পর ভুত হয়ে স্থানীয়দের ক্ষতি করতে পারে এমন ভয়ে আমার ছেলের লাশ গ্রামে দাফন করা সম্ভব হয়নি।
আত্মহননকারী পপির ছোট বোন, তাহির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রিপা বেগম জানান, আত্মহত্যার পর পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে আমার বোনের লাশ পরিবারের লোকজন মানিক পীর টিলায় দাফন করেন। গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে পপির লাশ কেন দাফন করা হয়নি এ প্রশ্নের জবাবে রিপা হিমশিম খায়। তবে জানায়, দাফনের পর আত্মহননকারী ভুত হয়ে স্থানীয়দের জ্বালাতন করবে এমন ভয়ে গ্রামে তার লাশ দাফন করা হয়নি। এ ব্যাপারে স্থানীয় মুরুব্বিয়ানদের ভূমিকা নিয়ে রিপা কোন উত্তর দেয়নি।
অন্যদিকে, পপির বড় ভাই মনোয়ার হোসেন জানান, দাফন কাপনের টাকা না থাকায় পারিবারিক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই তার বোনকে সিলেটের মানিকপীর টিলায় দাফন করা হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আলতাব আলী বলেন, লোকমুখে পপির আত্মহত্যার খবর পেয়েছি। তবে গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে কেন পপির লাশ দাফন করা সম্ভব হয়নি এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। বিস্তারিত স্থানীয় মুরব্বীয়ানগণ অবগত রয়েছেন বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্ণালী পাল বলেন, এটি অত্যান্ত দুঃখজনক। বিষয়টি আজকে আমি শুনেছি। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে এখনো জানানো হয়নি। যদি দাফনের পূর্বে জানানো হতো তাহলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহন করা যেত। তবুও থানার অফিসার ইন-চার্জ’কে আমি বলেছি, ওই পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য।
উল্লেখ্য, পপি বেগম (১৯) গত ৯ অক্টোবর দিবাগত রাতে তার বোনের বাড়ি তেতলী চেরাগী গ্রামে গণধর্ষণের শিকার হয়। পরদিন সকালে সে বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। তাকে দাফনের ২দিন পর তার ব্যবহৃত ভ্যানেটি ব্যাগে নিজ হাতে লেখা একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) পায় পরিবার। ওই চিরকুটে পপি উল্লেখ করে ৯অক্টোবর দিবাগত রাতে বোনের বাড়িতে অবস্থানকালে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে সে ঘরের বাহিরে যায়। তখন পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা বারিক ও জাহেদ তার (পপির) মুখ চেপে ধরে তাকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে যায় বাড়ির পাশ্ববর্তী জঙ্গলে। তখন তাদের পায়ে ধরে কান্না কাটি করতে থাকলে বারিক-জাহেদ ও তাদের সহযোগীরা মারধর করে পপিকে পাশবিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের পর পপিকে বোনের বাড়িতে (যেখান থেকে উঠিয়ে নেওয়া হয়, সেই স্থানে) ফেলে রেখে যায় জাহাঙ্গীর। আর গণধর্ষণের লজ্জা সইতে না পেরে সে আত্মহত্যা করে। এঘটনায় ৪জনকে আসামী করে গত সোমবার রাতে বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নিহতের পিতা শুকুর আলী। মামলা নং-৫। মামলা দায়েরের পর ওই রাতেই নিহতের ভগ্নিপতি ও তেতলী চেরাগী গ্রামের মৃত আব্দুল মন্নানের পুত্র ফয়জুল ইসলাকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। পরদিন মঙ্গলবার রাতে মামলার অপর আসামী একই গ্রামের মৃত মতছির আলীর ছেলে জাহেদ (২২)’কে এবং গত বৃহস্পতিবার রাতে মামলার প্রধান আসামী জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)’কে গ্রেফতার করে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। তবে মামলার অপর আসামী তেতলী চেরাগী গ্রামের আব্দুল মনাফের ছেলে বারিক মিয়া (৩৭) এখনো পলাতক রয়েছে।
পুলিশের খাঁচায় বন্দি মানব পাচারকারী আশিক আলী
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি ::প্রতারণা-জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রধান অভিযুক্ত মানব পাচারকারী আশিক আলী (৪৫)’কে গ্রেপ্তার করেছে সিলেটের বিশ্বনাথ থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার রামপাশা এলাকা থেকে থানার এসআই মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ তাকে (আশিক) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত মানব পাচারকারী আশিক আলী উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের শেখপাড়া-ধলীপাড়া মৃত আবদুল মান্নানের পুত্র।
উপজেলার কাউপুর গ্রামের আকবর আলীর পুত্র ফয়ছল আহমদ বাদী হয়ে ১৫.০৮.১৮ইং তারিখে জালিয়াতী-প্রতারণা ও পাসপোর্ট আটকে রাখার অভিযোগ এনে গ্রেপ্তারকৃত মানব পাচারকারী আশিক আলী ও তার ভাই আমির শাহজাহান (৩৫)’কে অভিযুক্ত করে সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৩য় আদালতে মামলাটি দায়ের করে ছিলেন। মামলা নং সি.আর ১৮৯/২০১৮ইং। বিশ্বনাথ থানার এসআই মিজানুর রহমান ওই মামলার তদন্ত করেন। তদন্তে বাদীর লিখিত অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান ২২.০৬.১৯ইং তারিখে আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন।
মানব পাচারকারী আশিক আলীকে গ্রেপ্তারের সত্যতা স্বীকার করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বিশ্বনাথ থানার এসআই মিজানুর রহমান বলেন, মামলার অপর অভিযুক্ত পলাতক আমির শাহজাহানকে গ্রেপ্তারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বাদী তার লিখিত অভিযোগে উল্লে করেছেন, গ্রেপ্তারকৃত মানব পাচারকারী আশিক আলী ‘বাদী ও তার বন্ধু’কে ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে পাঠানোর জন্য স্বাক্ষীদের সম্মুখে জনপ্রতি ১৩ লাখ টাকা করে মৌখিক চুক্তি করে। সেই মৌখিক চুক্তি অনুযায়ী বাদী ও তার বন্ধুর কাছ থেকে ৪ লাখ করে মোট ৮ লাখ টাকা অগ্রিম নেয় আশিক আলী ও তার ভাই আমির শাহজাহান। এসময় আশিক ও আমির ফ্রান্সের ভিসা লাগানোর জন্য তাদের (বাদী ও বাদীর বন্ধু) ২টি পাসপোর্ট নেয়। একাধিকবার বাদী ও তার বন্ধুকে বিদেশ পাঠানোর নামে ঢাকাতে নিলেও চুক্তির সময় সীমা ফেরিয়ে যাওয়ার পরও তাদেরকে ফ্রান্সে পাঠাতে সম্পুর্ণরুপে ব্যর্থ হয় মানব পাচারকারী আশিক আলী ও তার ভাই আমির শাহজাহান। এনিয়ে একাধিক বার এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতি সালিশ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তাতেও বিষয়টির সুষ্ঠ সমাধান হয়নি। অবশেষে মানব পাচারকারী আশিক আলী ২০.০২.১৮ইং তারিখে মামলার স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে নিজের কৃতকর্মের জন্য বাদী ও তার বন্ধুর কাছে ক্ষমা চেয়ে অগ্রিম হিসেবে তাদের কাছ থেকে নেওয়া ৮ লাখ টাকা ফেরৎ দেওয়ার জন্য নিজের (আশিক) স্বাক্ষরিত দুটি চেক দেয় এবং বাদী ও তার বন্ধুর পাসপোর্ট দুটি আরোও ১ মাস পর ফেরৎ দিবে বলে অঙ্গিকার করে। কিন্তু ৫.০৩.১৮ইং তারিখে নগদায়নের জন্য বাদী ব্যাংকে মানব পাচারকারী আশিক আলীর দেওয়া চেক ব্যাংকে উপস্থাপন করলে জানতে পারেন চেকে উল্লেখিত ব্যাংক হিসাব নম্বরটি আশিক আলীর নয়। এটি অন্য আরেক জনের ব্যাংক হিসাব নাম্বার। চেকের পাতা জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজন করে অন্য লোকের হিসাব নম্বর লিখিয়া নিজে স্বাক্ষর করে প্রতারণা করেছে মানব পাচারকারী আশিক আলী। এর মূল কারণ বাদী ও তার বন্ধুর কাছ থেকে অগ্রিম দেওয়া ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা এবং তাদের ২টি পাসপোর্ট এখনও উদ্ধার হয়নি বলে জানা গেছে।