বুধবার ● ২০ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » স্মৃতির বিদ্যাপীঠ মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ৭৫ বছর পুর্তি উত্সব
স্মৃতির বিদ্যাপীঠ মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ৭৫ বছর পুর্তি উত্সব
প্রভাষক উত্তম কুমার পাল হিমেল ::স্মৃতির বিদ্যাপীঠ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্টান মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ৭৫ বছর পুর্তি উপলক্ষ্যে হীরক জয়ন্তী উত্সব ৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উত্সবের উদ্বোধন করবেন৷ আর এই উত্সবকে ঘিরে এই বিদ্যাপীঠ যেন অফরুপ সাজে সেজে উঠেছে৷ ‘দিনগুলো মোর সোনার খাচায় রইল না, সে যে আমার নানান রঙ্গের দিনগুলো’ কবিগুরুর এ আহবান যেন আজ চিরস্মরনীয়৷ সময়ের পালা বদলের সাথে সাথে মানুষের জীবনের ঘড়ি পরিবর্তন হলেও এমন কিছু স্মৃতি আছে যা মানুষকে আরো অতীতের স্মৃতিতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়৷ প্রত্যেক মানুষের জীবনেই কিছু স্মৃতিময় মুহুর্ত বা ঘটনা বিদ্যমান থাকে ৷ সেটা হতে পারে শৈশব জীবনে, হতে পারে ব্যক্তি জীবনে, হতে পারে স্কুল-কলেজ জীবনে, হতে পারে শিক্ষা গ্রহনের উচ্চতর বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে৷ আমার স্মৃতিময় সেই বিদ্যাপীঠ যাকে ঘিরে আমার জীবনের সুদূর প্রসারী স্বপ্ন, চিন্তা-চেতনা ও ভবিষত্ত পরিকল্পনার মহা সমন্বয় পরিবেষ্টিত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্টান মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ৷
যে শিক্ষা প্রতিষ্টান দেশের বানিজ্য বিষয়ের জন্য সেরা ১০ টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের মাঝে একটি৷ এইচ এস সি অধ্যয়নরত অবস্থায়ই স্বপ্ন দেখতাম সেই স্মৃতির বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করার৷ যেই ভাবা সেই কাজ ১৯৯৭ সালে বানিজ্য বিভাগে এইচ এস সি পাশ করার পরই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পালা৷ বানিজ্য বিভাগে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য ব্যাপক উত্সাহ উদ্দীপনা দিয়েছিলেন নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক রফিক স্যার ৷ একদিকে তিনি বানিজ্য বিভাগে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের উত্সাহ দিলেও অন্যদিকে হিসাব বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশোন করলে মাথার চুল পড়ে যাওয়ার ভয় ও দেখিয়েছিলেন৷ যে ভয় আমাকে হিসাববিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করার জেদ আরো অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছিল৷ অপেক্ষার পালা শেষ, এবার বাস্তবায়ন ৷ ১৯৯৭ সালে বানিজ্য বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে এইচ এস সি পাশ করার পর বি,কম (সম্মান) বিষয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করলাম স্বপ্নের সেই শিক্ষা প্রতিষ্টান সিলেটর ঐতিহ্যবাহী মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে৷ মেধা তালিকার চান্সও পেয়ে গেলাম ঠিক মতোই৷ নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ থেকে চলে যেতে বাধা হয়ে দাড়ালেন নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদ৷ তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন বি,কম পাস কোর্সে নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজেই পড়তে হবে৷ কিন্তু আমার একান্ত নাছোরবান্দা ইচ্ছার কাছে সেই বাধাঁ অতিক্রম করে সিলেটে ভর্তির সুযোগ অবশেষে বাস্তবায়ন হলো৷ মেধা তালিকায় চান্স পাওয়ায় কলেজ কতর্ৃপক্ষের পরামর্শে প্রথমে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ভর্তি হলাম সেই কাংখিত বিদ্যাপীঠ সিলেটের মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে৷ কলেজের অধ্যক্ষ তখন নজরুল ইসলাম স্যার৷ সাথের বেশিরভাগ বন্ধু-বান্ধবী হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হওয়ার কারনে ৩ মাসের মাথায়ই আমাকে ব্যবস্থাপনা ছেড়ে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে যেতে হলো৷ প্রথম অবস্থায় সিলেটর অলিগলি সব না চিনলেও করের পাড়া শ্রীহট্র সত্সঙ্গ বিহারে শুরু হয় সিলেটর অধ্যয়ন জীবন৷ প্রথম দিকে ক্লাস লামা বাজার ক্যাম্পাসে শুরু হয়৷ ভালই লাগে জীবনের উচ্চ শিক্ষার নতুন বিদ্যাপীঠ৷ ছাত্র রাজনীতি এই শিক্ষা প্রতিষ্টানে খুবই সরগরম অবস্থান থাকলেও একটি ছাত্র সংগঠনে শুধু নাম লিখিয়ে দুরত্ব বজায় রেখেই চলতাম সব সময়৷ সাথের কয়েক সহপাঠী লামা বাজার ক্যাম্পাসের পাশে কলেজ হোষ্টেলে মাঝে মধ্যে আসা যাওয়া করতাম৷ এছাড়া রিকাবী বাজার পয়েন্টের আনোয়ারা রেষ্টুরেন্ট বসে আড্ডা মেরে অনেক সময় অতিক্রম করেছি৷ ফাষ্ট ইয়ার শেষ করার পূর্বেই আমাদের কমার্স ফ্যাকাল্টি আলাদা হওয়ার কারনে ক্লাস পরিবর্তন হয়ে তারাপুর চা বাগানের পাশে অপরুপ সৌন্দর্য্যের লীলাভুমি পাহাড়ী পরিবেশে গড়া উঠা রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে তারাপুর কমার্স ফ্যাকাল্টিতে চলে যায়৷ সেখানে যেন সবুজের সমারোহ প্রকৃতির ছায়াঘেরা আরো নতুন পরিবেশ৷ ক্লাসের ফাকেঁ গিয়ে পাহাড়ী পরিবেশে ঘুরতাম বন্ধু-বান্ধবী মিলে৷ মনে পরে আজও সেই সুকেশ, বিশ্বজিত, মিলন, অবিনাশ, প্রানেশ, ফরিদ, আরতি, শিল্পী, বীনা, জলি, ঝুমা সহ আরো অনেক বন্ধু-বান্ধবীদের কথা৷ যারা একসাথে তারাপুর নতুন ক্যাম্পাসে ক্লাসের ফাকেঁ প্রায়ই চা বাগানের সুনিবিড় পরিবেশে বসে আড্ডা মারতাম৷ স্রোতের টানে সময় ও গড়িয়ে যায় ৷ দেখতে দেখতে ২য় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ফেলি আমরা৷ সময় ২০০১ সালে ২০ শে ফ্রেব্রুয়ারীর কথা৷ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা ভাল নয়৷ প্রতিষ্টানের পক্ষ থেকে শিক্ষা সফর যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে৷ কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকুল না হওয়ায় কারনে ৭ দিনের শিক্ষা সফর সংক্ষিপ্ত করে ৫ দিরে করা হয়েছে এমনকি কয়েকটা তারিখ ও পরিবর্তন করা হয়েছে৷ অবশেষে ৫ দিনের সংক্ষিপ্ত সফরে আমাদের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রদীপ কুমার দে সহ আরো কয়েকজন স্যারের নেতৃত্বে দর্শনীয় স্থান ভ্রমনের জন্য সিলেট থেকে ট্রেন যোগ রওয়ানা হই৷ সিলেট থেকে চট্টগ্রাম শহরে ভালভাবেই পৌছি৷ সেখানে চট্টগ্রাম,পতেঙ্গা, বায়েজীদ বোস্তামীর মাজার, জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, ওয়ার সিমেট্রী পার্ক, কঙ্বাজার, রাঙ্গামাটি শহর, ঝুলন্ত ব্রীজ, রাজবাড়ী বিহারসহ আরো অনেক ভ্রমন উপযোগী জায়গা ঘুরে দেখি৷ প্রথমে রাজনৈতিক পরিস্থিকে ভয় পেয়ে রওয়ানা হলেও আনন্দদায়ক ভ্রমনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে নাই৷ শিক্ষা সফরে ঘুরে মনে হলো বাংলাদেশ যে এত অপরুপ সৌন্দর্য্যের লীলাভুমি তা যেন এতদিন আমাদের অজানাতেই ছিল৷ সকলে মিলে সুস্থ ও হাসিখুৃশিভাবেই সকলে আবারও সিলেট ফিরে আসি৷ আনন্দদায়ক এই ভ্রমনে জীবনের অনেকটা নতুন মাত্রা যোগ হলো সেই শিক্ষা সফর৷ দেখতে দেখতে কিভাবে যে কেটে গেল মদন মোহন কলেজের অনার্স কোর্সটা তা যেন টেরই পাওয়া গেল না৷ অনার্স কোর্স শেষ করেই অনেক বন্ধু বান্ধবী প্রয়োজনের টানে অন্যান্য জায়গায় চলে যাওয়ার কারনে সেই দীর্ঘদিনের একটি বন্ধুত্বের বাধনে যেন কিছুটা ভাটা পড়ে গেল৷ পরবতর্ীতে মাষ্টার্স কোর্স সেটা তো এক বছরের একটা ছোট কোর্স তাই খুব তাড়াতাড়ি যেন ছাত্রত্ব চলে যাওয়ার জন্য অবশেষে সেটা শেষ হয়ে গেল ৷ যাই হোক ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্টান মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবনের ইতি টেনে যেন সকল বন্ধু-বান্ধব বাস্তব জীবনের তাগিদে যার যার মত করে সুবিধাজনক স্থানে ও কর্ম জীবনে মনোনিবেশের চেষ্টায় হুমড়ি খেয়ে বসল৷ কাংখিত শিক্ষা প্রতিষ্টান ছেড়ে চলে যেতে মন না চাইলেও কি আর ছাত্রত্ব ধরে রাখা যায়৷ তখন কবিগুরুর কথায় আবারো যেন সবাই সুর মিলাতে ইচ্ছা করছিল’ যেতে নাহি দিব হায়,তবু যেতে দিতে হয়,তবু চলে যায়’ ৷ ছাত্র জীবনের শুরু থেকে নজরুল ইসলাম স্যারকে প্রতিষ্টান প্রধান হিসাবে পেলে ও পরবতর্ীতে আতাউর রহমান পীর স্যার,কৃপাসিন্ধু পাল স্যার এবং সর্বশেষ বর্তমানে যিনি প্রতিষ্টান প্রধান হিসাবে আসীন কলেজের সকল শিক্ষাথর্ীদের প্রিয় স্যার ড. আবুল ফহেত ফাত্তাহর আন্তরিক নেতৃত্বে এ শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিক্ষার মান দিন দিন অগ্রগতি হয়ে চলছে৷ এছাড়া ঐতিহ্যবাহী সেই প্রতিষ্টান থেকে জ্ঞান অর্জন করে দেশের শীর্ষ পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেৃতৃত্বদানকারী কত জ্ঞানীগুনী যে সমহিমায় প্রতিষ্টিত হয়ে েশিক্ষা প্রতিষ্টানের অবদানকে আরো সমুন্নত করেছেন তার কোন ইয়াত্তা নেই৷ তাই আমি ও নিজিকে ধন্য মনে করছি যে লক্ষ্যে ও প্রত্যাশা নিয়ে প্রাণের সেই প্রিয় বিদ্যাপীঠে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পরিবার পরিজন ছেড়ে গিয়েছিলাম জ্ঞান আহরনের জন্য সেই ইচ্ছা আমার পূর্ন হয়েছে সঠিকভাবেই৷ কিন্তু তবুও যেন বার বার মনে হচ্ছে যে আরো কিছুদিন যদি সেখানে অধ্যয়ন করে কাটানো যেত তাহলে নিজেকে আরো বেশী সমৃদ্ধশালী মনে হতো৷ যাই হোক তবু ও জীবনে যতদিন বেচেঁ থাকা হবে ততোদিন সেই প্রতিষ্টানের স্মৃতিকে লালিত করব মনের অতল গহিনে মাধুরী মিশিয়ে এই হবে ভবিষত্ অঙ্গীকার৷ তবে আজকের যারা এ স্বনামধন্য প্রতিষ্টান এ বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষাথর্ী তারা ও কালের আবর্তনে কদিন পর কোর্স শেষ করে চলে যেতে হবে৷ কিন্তু স্মৃতি তো আর ইচ্ছা করলেই মনের অতল গহিন থেকে ফেলতে পারবে না৷ কারন যে প্রতিষ্টান উচ্চ শিক্ষ দেয় যে প্রতিষ্টান জীবনের সঠিক পথের গতি দেখায় সে প্রতিষ্টানের প্রতিটি মুহুতই জীবনের অবিস্মরনীয় হয়ে থাকে৷ আজকের যারা শিক্ষাথর্ী,অভিভাবক ও জ্ঞানের আলো বিকশিতকারী শিক্ষক মন্ডলী রয়েছেন তারা যেন স্মৃতির সেই বিদ্যাপীঠকে অতীতের সুনাম ও ঐতিহ্যকে অনুসরন করে আরো সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারেন সেই প্রত্যাশা থাকল নিরন্তর৷
পরিশেষে এ শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী,বর্তমান শিক্ষার্থী ও ভবিষত্তে যারা এ শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে জ্ঞান অর্জন করবেন এবং যারা শিক্ষার আলো ছড়াবেন তাদের সকলের উদ্দেশ্যে বলবঃ ‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট,বিশ্বাস হৃদয়ে,হবেই হবে দেখা,দেখা হবে বিজয়ে” ৷
লেখক প্রভাষক হিসাব বিজ্ঞান, প্রাক্তন ছাত্র, বি,কম(অনার্স),এম,কম হিসাব বিজ্ঞান
মদন মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ,সিলেট৷
মোবাইলঃ০১৭১২-৮৫১৮৫০
ই- মেইল : [email protected]
আপলোড : ২০ জানুয়ারী ২০১৬ : বাংলাদেশ : সময় : বেলা ১২.১০ মিঃ