বৃহস্পতিবার ● ৩১ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » প্রেমের ফাঁদে ফেলে যুবককে হত্যা
প্রেমের ফাঁদে ফেলে যুবককে হত্যা
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :: উত্ত্যক্তের জেরে প্রতিবেশি যুবতী প্রেমের ভান করে ফাঁদে ফেলে যুবককে নেত্রকোণা থেকে জয়দেবপুর নিয়ে নির্মমভাবে টুকরো টুকরো করে হত্যার পর হাত, পা, মাথা, কুড়িগ্রামের পুকুরে এবং দেহের খন্ডিতাংশ ট্রাভেল ব্যাগে করে ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজের পাশে ফেলে রাখা হয়। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ ওই নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার যুবক বকুল মিয়া (২৮)’র হত্যা রহস্য এবং পরিচয় উদ্ঘাটন করে করার পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার হুগলার বাবুল মিয়ার মেয়ে মোছাঃ সাবিনা আক্তার (১৯),মোঃ ফারুক মিয়া (২৫), মোঃ হৃদয় মিয়া (২০) ও মোছাঃ মৌসুমী আক্তার (২২)।
গতকাল বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন এসব তথ্য জানান। ওই নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার যুবক বকুল মিয়া নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার হুগলা বাজারের ময়েজ উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ সুপার আরো জানান, ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজের পাশ থেকে লাল ট্রলিব্যাগ থেকে উদ্ধার করা পুরুষের দেহের খন্ডিতাংশ এবং কুড়িগ্রামের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হাত পা ও মাথা একই যুবকের। উত্ত্যক্তের জের ধরে এই নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। পরে গত ২৮ অক্টোবর গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই নারীসহ ওই চারজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে সেই বকুল হত্যা রহস্য এবং তার পরিচয়। পরে আসামিরা হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পাশাপাশি লাশের পরিচয় গোপন করতে ও পুলিশের হাতে ধরা না পড়তে লাশ টুকরা টুকরা করে আলাদা আলাদা স্থানে ফেলা দেয়ার কথা স্ববিস্তারে বর্ণনা দেয়।
তিনি আরও জানান, নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় হুগলা বাজারের ময়েজ উদ্দিনের ছেলে বখাটে যুবক বকুল দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করছিলো প্রতিবেশি সাবিনা আক্তার নামে এক যুবতীকে।এনিয়ে উভয় পরিবারে ঝগড়া বিবাদ চলছিল। শুধু তাই নয়,একবার সাবিনার বাড়িঘরে হামলাও চালায় বকুলের লোকজন। এরপর গত ১৩ জুন একই গ্রামের আবু সিদ্দিকের সাথে বিয়ে হয় সাবিনার। কিন্তু বিয়ের পর বকুলের চক্রান্তে সাবিনার পরিবারে অশান্তি আরো বেড়ে যায়।
পরে বাধ্য হয়ে সাবিনা বাড়ি ছেড়ে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে তার ভাই ফারুকের বাসায় আশ্রয় নেয়। এরই এক পর্যায়ে সাবিনা কৌশল করে বকুলের সাথে প্রেমের ভান করে তার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে বকুলকে জয়দেবপুরের বানিয়ারচালা এলাকার সাবিনার ভাই ফারুকের বাসায় নিয়ে গত ১৯ অক্টোবর রাতে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এসময় বকুলের লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে পরদিন রোববার (২০ অক্টোবর) সকালে ভাই ফারুক লাগেজ ট্রলিতে করে খন্ডিত দেহ ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজের কাছে এবং সাবিনা ও তার ভাবী মৌসুমী মিলে দেহের অন্য অংশগুলো কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ফেলে রাখে।
তিনি আরও জানান, ট্রলি ব্যাগে লাশ পাওয়ার পর ২৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়েরের পর তার তদন্তভার জেলা গোয়েন্দা শাখার ওপর ন্যাস্থ করা হয়। মামলাটি তদন্তকালে কুড়িগ্রামে খন্ডিত দেহাংশের সাথে নারীদের হাতব্যাগে পাওয়া চিরকুটের সূত্র ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় ময়মনসিংহ ডিবির ওসি শাহ কামাল আকন্দের নেতৃত্বে একটি দল।
পরে গত ২৮ অক্টোবর গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুই নারীসহ ওই চারজনকে আটক করে ডিবি। পরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার কথা স্বীকার করে এবং বোনকে উত্ত্যক্ত করার জেরে তারা বকুল নামে ওই যুবককে হত্যা করেছে বলে জানায়।
প্রসঙ্গত,গত রোববার (২০ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজের পাশ থেকে লাল ট্রলিব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশের এক ট্রাফিক কর্মকর্তাকে জানায়। পরে ওই ট্রাফিক কর্মকর্তা রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি জেলা পুলিশকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বালুর বস্তা ওই দিয়ে জায়গাটি চারদিকে ঘিরে রাখে। পরে রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য বোমা ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেয়া হলে সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে সেই লাগেজ থেকে উদ্ধার করা হয় এক ব্যক্তির মাথা ও হাত-পা বিহীন একটি দেহ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য দেহাংশ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক)হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। অতঃপর ময়মনসিংহে উদ্ধার করা খন্ডিত দেহের অর্ধেকাংশ ময়নাতদন্ত করে লাশের অর্ধেকাংশ ময়মনসিংহ মেডিকেলের হিমঘরে রেখে ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
অপরদিকে একইদিন সকালে কুড়িগ্রামে উদ্ধার করা মাথা, হাত ও পা, পরে ডিএনএ টেস্টের জন্য এগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়।