বুধবার ● ২০ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » গাজীপুরে কৃষকের সম্ভাবনা আদর্শ বীজতলা
গাজীপুরে কৃষকের সম্ভাবনা আদর্শ বীজতলা
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: পুষ্টিসম্পন্ন চারা হলে গাছ ভাল হয়, নিরোগ ও ভাল ফলন হয়৷ কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়৷ যথাসময়ে উত্পাদন পাওয়া যায়৷ কম জমিতে বেশি পরিমাণ ফলন হয়৷ আর এসব বিষয় নির্ভর করে আদর্শ বীজতলার ওপর৷
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কৃষকেরা আদর্শ বীজতলার সন্ধান পেয়েছেন৷ অগোছালোভাবে বীজ ছিটিয়ে সনাতন পদ্ধতির বীজতলা তৈরীর প্রক্রিয়া থেকে কৃষকেরা সরে আসছেন৷ শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে আদর্শ বীজতলার দেখা মিলেছে৷ কৃষকেরা জানিয়েছেন তাদের নতুন অভিজ্ঞতা এবং সন্তুষ্টির কথা৷
চিনাশুখানিয়া উত্তরপাড়া গ্রামের কৃষক আলী আকবর দেওয়ান (৪০), হাদিউল ইসলাম কাজী (৫৫) আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে বলেন, দুই বছর আগেও তারা সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরী করেন৷ সে বছর তারা প্রতি একরে সর্বোচ্চ ১৫ মণ ধান পেয়েছেন৷ এর আগেও একর প্রতি কখনো ৩০ বা ৫০ মণ ফলন পেয়েছেন৷
চিনাশুখানিয়া মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস ছাত্তার (৫৫), আহসান উদ্দিন ভূঁইয়া (৫৫) আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, এক একর ৫০ মণ ধান ফলাতে সার, কীটনাশক বেশি করে প্রয়োগ করতে হত৷
একই গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন (৫০), বাদল মিয়া বেপারী (৪২) আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে বলেন, গত দু’বছর যাবত বেশি পরিমাণে ফলন, কম কীটনাশক, সুস্থ সবল চারা আমাদের গতানুগতিক ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে৷
কৃষক মো. লেহাজ উদ্দিন আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে বলেন, আগে ৫ কাঠায় দেড় মণ ধানের বীজতলা তৈরী করেও আশানুরূপ ফল পাইনি৷ এখন ৫ কাঠায় ১ মণ ধানের বীজতলা তৈরী করি৷ ধঅনের চারা ভাল হয়, চারা নষ্ট হয় না৷
কৃষক ইজ্জত আলী শেখ (৬৪) আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে বলেন, পোকার আক্রমণ হলে বীজতলায় হেঁটে ওষুধ প্রয়োগ করা যায়৷ চারা শেকড়সহ উত্তোলন করা যায়৷ চারা সুস্থ্য সবল ও মজবুত হয়৷ বীজতলা ভাল হলে সবদিক দিয়েই লাভবান হওয়া যায়৷ কৃষি বিভাগের লোকজন আসলে আমরা তাদের কথায় সাড়া দিইনি৷ পরে কৃষি বিভাগের একজন নারী কর্মকর্তার অনুরোধে ২/১ জন কৃষক বীজতলা তৈরী করেন৷ তাদের সফলতা দেখে এবছর গ্রামের অধিকাংশ কৃষক আদর্শ বীজতলা তৈরী করেন৷
রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চিনাশুখানিয়া বস্নকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (এসএএও) আইরিন সুলতানা আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে বলেন, এ বস্নকে তিন বছর যাবত আদর্শ বীজতলার কাজ চলছে৷ প্রথমে কৃষকেরা এ প্রক্রিয়াটিকে সহজে গ্রহণ করেনি৷ ২/১ জন কৃষককে বুঝিয়ে সুজিয়ে বীজতলা তৈরীতে উত্সাহিত করি৷ তাদের সাফল্য দেখে অন্যরা উত্সাহিত হতে থাকে৷
তিনি বলেন, আদর্শ বীজতলার তৈরীর জন্য ১ মি: প্রস্থ ও ৩০ মিটার দৈঘর্্যরে ব্যাট আকারে সাজাতে হয়৷ বীজের পরিমাণ ও অপচয় কমানোর জন্য ব্যাট আকারে সাজাতে হয়৷ প্রত্যেক ব্যাটের মাঝখানে ছোট ছোট নালা থাকে, যাতে চারাগুলো পরিমাণমতো পানি গ্রহণ এবং প্রয়োজনে পানি ছিটিয়ে দেওয়া যায়৷ ব্যাট পদ্ধতি হওয়ায় ওষুধ স্প্রে ও পরিচর্যা করতে সুবিধা হয়৷ খোলামেলা থাকে, পোকার আক্রমণ কম হয়, চারা হৃষ্টপুষ্ট হয়, গোড়া পঁচা রোগ প্রতিরোধ হয়৷ সনাতন পদ্ধতিতে ব্যাপকভাবে ওষুধ স্প্রে করলে অনেক চারা ওষুধ থেকে বঞ্চিত হয়৷ একটি বীজের সাথে আরেকটি বীজের আঘাতের কারণে চারা দুর্বল হয়৷ তাছাড়া বস্নাস্ট রোগের প্রতিরোধ সক্ষমতা তৈরী হয়৷
এসএএও বলেন, এবছর ৪৯০ হেক্টর জমিতে আদর্শ বীজতলা তৈরী করা হয়েছে৷ এসবের মধ্যে রাজাবাড়ী ইউনিয়নের লক্ষীপুর, নিশ্চিনত্মপুর, রাজারামপুর ও চিনাশুখানিয়া উলেস্নখযোগ্য৷
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম মুঈদুল হাসান আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, আদর্শ বীজতলার চারার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে৷ রোগ আক্রমণের সম্ভাবনা থাকলে আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়৷
তিনি জানান, আদর্শ বীজতলার চারা জমিতেও বৃদ্ধি, পুষ্টি, অটুট থাকে৷ চারার বৃদ্ধি ভাল থাকায় কীটনাশক কম লাগে৷ এ প্রক্রিয়া শ্রীপুর উপজেলার সকল এলাকার কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷