বুধবার ● ৬ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » হরিনাকুন্ডুর লাভজনক চাষ এখন গেন্ডারি আখ
হরিনাকুন্ডুর লাভজনক চাষ এখন গেন্ডারি আখ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গেন্ডারি আখ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেখানকার ছোট-বড় বাজারগুলোতে অসংখ্য গেন্ডারি আখের দোকান। রাস্তার ধারে ধারে বিক্রি হচ্ছে হরিণাকুন্ডুতে উৎপাদিত গেন্ডারি আখ। ৯০ দশক থেকে এই অঞ্চলে গেন্ডারি আখ খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়। ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ সহ বিভিন্ন জেলা থেকে এই আখ ক্রয় কিনে এনে ঝিনাইদহে বিক্রি করা হতো। কিন্তু ২০১২ সালের পর থেকে হরিণাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গেন্ডারি আখের চাষ হচ্ছে। গত ৪ বছরে হরিনাকুন্ডু উপজেলার এই গেন্ডারি আখের চাষ ব্যপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। হরিনাকুন্ডু উপজেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানাগেছে, এবছর প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ গেন্ডারি আখের চাষ হয়েছে। হরিনাকুন্ডু উপজেলার শহর, বাউল স¤্রাট লালনের গ্রাম হরিশপুর, দৌলতপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ গেন্ডারি আখ দাড়িয়ে আছে। পারবতীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বারী মন্ডল জানান, তিনি গত দুই বছর গেন্ডারি আখের চাষ করছেন। হরিশপুরে তার আত্মিয় গান্ডারি আখের চাষ করেন। চাষটি লাভজনক বলে শুনে তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজেও চাষ করবেন। এরপর নিজে ২০১৮ সালে ১৮ শতক জমিতে চাষ করেন। আখের বয়স ১০ মাস হলে কেটে বাজারে বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন ১৮ শতক জমিতে গেন্ডারি আখের চাষ করে তিনি একলাখ টাকা লাভ করেছেন। হরিশপুর গ্রামের গিয়ে দেখা যায় মাঠে প্রচুর পরিমানে গেন্ডারি আখ। কৃষকরা জানান, ২০১২ সালের দিকে তাদের গ্রামের নাজিম উদ্দিন রাস্তার ধার থেকে আখ ক্রয় করে খাচ্ছিলেন। এই আখের চোখ বাড়িতে নিয়ে রোপন করেন। এভাবে তাদের এলাকায় গেন্ডারি আখের চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। কুষক ইতাহার আলী জানান, বাজারে ধানের মুল্য কমে গেছে। অন্য ফসল উৎপাদন করেও কৃষক খরচ উঠাতে পারছে না। সেখানে এক বিঘা জমিতে এক লাখ টাকা খরচ করলে ৪ লাখ টাকার গেন্ডারি আখ পাওয়া যায়। অল্প জমিতে অধিক লাভ হওয়ায় এলাকার কৃষকরা বর্তমানে এই চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। হরিনাকুন্ডু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আরশেদ আলী চৌধুরী জানান, মাত্র ৪ থেকে ৫ বছরের ব্যবধানে ১৫ হেক্টর জমিতে এই আখের চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। এটা খুবই লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা এই চাষে ঝুকে যাচ্ছে। তারাও কৃষকদের এই চাষের পরমর্শ দিচ্ছেন।
ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের ঘুষ খোর নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখের দুর্নীতি তদন্তে হাই ভোল্টেজ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়। গত ২৪ অক্টোবর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের প্রশাসন অধিশাখা-১ এর উপ-সচিব মোসাঃ সুরাইয়া বেগম এক অফিস আদেশে উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটিকে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেন। মন্ত্রানালয়ের ১৫.০০.০০০০.০১৩.২৭.০০১.১০.১০৯০/১(৪) নং স্মারকে চিঠিতে বলা হয়েছে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আনীত অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত পুর্বক ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। আগামী শুক্রবারের (৮ নভেম্বর) মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের শেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহবায়ক করা হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের প্রশাসন-২ এর অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ ইয়াকুব আলী পাটওয়ারী। সদস্য সচিব করা হয়েছে সিনিয়র সহকারী সচিব তারিক হাসান। এছাড়া তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড. মোঃ মঈনুল ইসলাম। এর আগে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নন্দিতা রানী সাহা গত ২ অক্টোবর “ভুয়া কাজ ও বিল ভউচারে লোপাট ১০ কোটি টাকার বিষয়ে তদন্ত প্রসঙ্গে” শিরোনামে তার দপ্তরের ২৫.৩৬.০০০০.২১৩.২৭৫৫৯.১৯.১০৮৭ নং স্মারকে একটি চিঠি ইস্যু করেন। তদন্ত পুর্বক ৩ কর্মদিবসের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামত প্রেরণ করার জন্য নির্দেশক্রমে তদন্ত দলকে নির্দেশ দেন। গত ৭ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর আঞ্চলিক অফিসের উপ-পরিচালক নাজমুস সায়াদাত ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের ১০ কোটি টাকা লোপাটের বিষয়ে খোঁজ খবর নেন। ঝিনাইদহে অবস্থানকালে তিনি গণপূর্ত অফিসের ঠিকাদারী কাজের নথি দেখেন ও নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। উল্লেখ্য ঝিনাইদহ গনপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখ কাজ না করেই কোটি কোটি টাকার বিল উত্তোলন করেন বলে পত্রিকা ও বেসরকারী টিভি চ্যানেলে খবর প্রচার হয়। খবর ফাঁস হয়ে পড়লে জুনের আগে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল তুলে নেওয়া প্রকল্পগুলো তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করেন। ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়া ডরমেটরি ভবন, নন হেজেটেড ডরমেটরি ভবন, জেলা জজের বাসা, সাবডিভিশন অফিস ও গনপুর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর বাসাসহ বিভিন্ন অফিস মেরামত ও রং করেন। অথচ কাজ দেখিয়ে জুনের আগেই তিনি ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল তুলে নেন তিনি। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ গনপুর্ত বিভাগে গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ই-জিপি টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়। কিন্তু বিধি ভঙ্গ করে মেন্যুয়ালি নেটিফিকেশন অফ এওয়ার্ড (নোয়া) দেওয়া হয়। যা পিপি’র বিধি বহির্ভুত। প্রশ্ন উঠেছে ই-জিপি টেন্ডার আহবান করলে একজন ঠিকাদার অর্ধশত কাজ কি ভাবে পায়। এ ভাবে তিনি ২/৩টি লাইসেন্সের বিপরীতে শত শত কাজ দিয়ে কোনটি কাজ না করে আবার আংশিক কাজ করে ৯ কোটি টাকার বেশি টাকা লোপাট করেন। এ বিষয়ে কথা বলতে ঝিনাইদহ গনপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখের মুঠোফোনে (০১৮৮২-১১৫৩৮১) মঙ্গলবার বিকালে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
দলিল লেখক নাসিরের উত্থান
ঝিনাইদহ :: ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নাসির চৌধুরী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় গঠন করেন দলিল লেখক সমিতি। এরপর তিনি সরকারের প্রভাবশালীদের ম্যানেজ উপজেলা সাব রেজিস্টার কার্যালয়ে তৈরি করেন নিজস্ব বলয়। চলতে থাকে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা। এরপর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ২য় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কোটি টাকা দিয়ে নৌকা প্রতিক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় শিমলা-রোকনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান আর দলিল লেখকের তকমায় নাসির গড়ে তোলে তার বিশাল সম্রাজ্য। সরকারি হিসেবে জমির কবলা খরচ ইউনিয়নে ৯% ও পৌরসভা এলাকায় ১০% ধার্য করা। কিন্তু কালীগঞ্জ উপজেলায় জমি রেজিস্ট্রি করতে গেলে সরকারি ফি ছাড়া জমির মোট মূল্যের ৫% অধিকহারে মুল্য পরিশোধ করতে হয় সাধারণ মানুষের। যা থেকে প্রতি মাসেই তিনি কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেন। কালীগঞ্জ উপজেলা দলিল লেখকদের একটি সমিতি থাকলেও তিনি নিজ হাতে টাকা পয়সা ভোগ করেন। কেউ হিসাব চাইতে গেলে সেই দলিল লেখকের উপর নেমে আসে অত্যাচার ও লাইসেন্স বাতিলের হুমকি। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার আমিনা বেগম বলেন, ৫% অধিকহারে যে টাকা নেওয়া হয় তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক জানান, আমাদের নিজস্ব কোন বেতন নেই। জমি রেজিস্ট্রিকারী বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা কিছু টাকা নিয়ে থাকি। কিন্তু দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাসির চৌধুরী আমাদের নাম ভাঙিয়ে মানুষের কাছ থেকে শতকরা ৫% বেশি টাকা নিয়ে থাকেন। যে টাকার কোন হদিস নেই। আমরা হিসাব নিতে গেলে বিভিন্ন ভাবে ক্ষমতাসীন নেতাদের দিয়ে হুমকি ও লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়। কালীগঞ্জ উপজেলার ষাটবাড়িয়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম জানান, আমি কিছুদিন আগে জমি রেজিস্ট্রি করতে কালীগঞ্জ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে যায়। জানতাম সরকারি ফি ইউনিয়নে ৯% হারে মোট জমির মুল্যের উপর ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু এখানে আমাকে ১৪% টাকা দিতে হয়েছে। এটা বিশাল দুর্নীতি।