বুধবার ● ৬ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » নওগাঁ » মুখ দিয়ে ছবি আঁকছেন মাউথ প্রিন্টার ইব্রাহিম
মুখ দিয়ে ছবি আঁকছেন মাউথ প্রিন্টার ইব্রাহিম
নওগাঁ প্রতিনিধি :: হুইল চেয়ারে বসা দুই পা পুরোপুরি অবশ। তবে মাথা ও মুখ খুব ব্যস্ত। মুখে তুলি। ঘাড় ঘুরিয়ে বার বার রং নিচ্ছেন আর ছবি আঁকছেন। হুইল চেয়ারের সাথে বিশেষ উপায়ে লাগানো ক্যানভাসেগরু, গাছ, মানুষসহ বিভিন্ন ছবি আঁকছেন নওগাঁর মান্দার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। তবে সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধীভাতা ও মায়ের বিধবাভাতা দিয়ে কোন রকমে চলছে তার সংসার।
জানাযায়, দুই পা সচল ছিল। পড়াশোনা করেছেন এইচএসসি পর্যন্ত। কাজ করতেন দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে। গত ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার কারনে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে পড়ে হারিয়েছেন দুই হাত, আর পগু হয়েছে তার পা। এতে করেতার সব ওলটপালট হয়ে গেল। লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ঘটল দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় তিনি হারিয়ে ফেলেনতার দুটি হাত। চিকিৎসার খরচ পল্লী বিদ্যুৎ নিলেও নেয়নি তার ভবিষ্যৎ জীবনের দায়িত্ব। তাই নিজ চেষ্টায় তিনি ছবি আঁকা শিখে নিজের কর্মকে সবার কাছে তুলে ধরেছেন।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়ে সাভারের সিআরপিতে চিকিৎসা নেন দীর্ঘ আটব ছর। হাত নেই, পগু হয়েছে দুই পা। তবে কি হয়েছে তাতে। তবুও মুখ দিয়ে এঁকে চলেছেন এক মনে বিভিন্ন রকমের ছবি। কথা গুলো বলা হচ্ছে নওগাঁর মান্দা উপজেলার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিমের।
মুখ দিয়ে ছবি আঁকা প্রসঙ্গে ইব্রাহিম বলেন, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় সবার কাছে শুনেছেন লাভলী নামে একজন মুখ দিয়ে ছবি আঁকতেন। লাভলীর সঙ্গে তার কখনো দেখা হয়নি। লাভলীর গল্প শুনেই অনুপ্রেরণা।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে ছবি আঁকতে বসলে মাথাঘুরত। বমি করতাম। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবি আঁকতে পারতেন। বেশি ভালোলাগে প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে। তবে বর্তমানে বেশিক্ষণ ছবি আঁকতে পারেন না। একটানা ছবি আঁকলে গায়ে জ্বর আসে। শরীরের সার্বিক পরিস্থিতিও খুব একটা ভালো নেই।
বর্তমানে তিনি নিজ বাড়ির পুকুর পাড়ে বসে মুখের সাহায্যে পেন্সিল ও রঙ তুলি দিয়ে ছবি আঁকেন। উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের চককেশববাল ুবাজার নিজ গ্রামে এক বৃদ্ধা মাকে নিয়ে বসবাস করছেন মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিম। গত চার বছর যাবত তিনি তার বৃদ্ধা মায়ের অসুস্থতার কারনে নিজ বাড়ি চককেশববালু বাজারে আছেন। তিনি ভালো বাসেন গ্রামবাংলা ও প্রকৃতির ছবি আঁকতে। নিজ বাড়িতে থেকে তার মুখ দিয়ে অকংনকৃত ছবি প্রদর্শনী অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই তিনি যদি সুযোগ পান তবে তার প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়েআনতে চান।
তিনি বেশ গর্ব নিয়ে জানালেন, সিআরপিতে থাকা অবস্থায় তার আঁকা ছবি দিয়ে অনেক গুলো প্রদর্শণীহয়েছে। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের কিছ ুমানুষের সাথে পরিচয় ছিল। তাদের সাথে যোগাযোগও ছিল নিয়মিত। তাদের মাধ্যমেই ছবি গুলোআমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়েছে। ছবির দাম নিয়ে দেন দরবার তেমনএকটা করা হয় না। বেশির ভাগ সময়ই একেক জন খুশি হয়ে যা দেন, তাই নেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপুমনিতার কাছ থেকে ২০টি ছবি নিয়ে এক লাখটাকা দিয়ে ছিলেন সে কথাও জানালেন। বর্তমানে সরকার কর্তৃক প্রতিবন্ধী ভাতা ও মায়ের বিধবা ভাতা দিয়ে কোন রকমে চলছে তার সংসার।
মান্দা পরানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইলিয়াস খান বলেন, মাউথ পেইন্টার এমদাদুল মল্লিক ইব্রাহিমকে প্রতিবন্ধীভাতা কার্ড এবং তার মায়ের জন্য বিধবাভাতা কাডের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক ছবি প্রদর্শনীর ব্যাবস্থা না থাকায় ইব্রাহিমের প্রতিভাকে সে বিকশিত করতে সক্ষম হচ্ছেনা। যদি বড় পর্যায়ে কখনো তার প্রতিভাকে দেখানোর সুযোগ পান তবে তিনি এক দিন দেশের সম্পদ হয়ে উঠবেন।
মান্দা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, দুইহাত নেই তবুও তিনি মুখের সাহায্যে এঁকে চলেছেন বিভিন œরকমের ছবি। তার প্রতিভাকে সম্মান জানিয়ে বলেন, মুখ দিয়ে ছবি আঁকা যে তার একটি বিশেষ গুন তার ছবি গুলোর দিকে লক্ষ্য করলে বোঝাযায়। তবু ওমাউথ পেইন্টার ইব্রাহীমের স্বপ্ন একদিন তিনি মুখ দিয়ে ছবি এঁকে পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিতি লাভ করবেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে তার ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা এবং সরকার কর্তৃক সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।