শনিবার ● ৯ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ধেয়ে আসছে প্রবল শক্তি নিয়ে‘বুলবুল’ : আতঙ্কিত উপকূলে নদী তীরের মানুষ
ধেয়ে আসছে প্রবল শক্তি নিয়ে‘বুলবুল’ : আতঙ্কিত উপকূলে নদী তীরের মানুষ
বাগেরহাট প্রতিনিধি :: প্রবল শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় বুলবুল উপকূলে আঘাত হানবেআজ সন্ধ্যা বা তার কিছু পরে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে আতঙ্ক বিরাজ করছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ,শরণখোলা উপজেলার মংলা সমুদ্র বন্দর নদী তীরের বাসিন্দাদের মধ্যে।
২০০৭ এর ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভয়াবহতা আজও এ অঞ্চলের লোকজনকে আতঙ্কিত করে। ঝড় জলোচ্ছ্বাসে সব থেকে আতঙ্কে থাকে এ অঞ্চলের নদী তীরের মানুষ।
আজ শনিবার ৯ নভেম্বর দুপুর দুইটা পর্যন্ত কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন না পৌঁছালেও সন্ধ্যা নাগাত নদী তীরের লোকজন আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগে কোথাও বড় ধরনের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে খবর নেয়ার জন্য জেলায় ১০টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এছাড়াও ১০৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৮২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ,৬টি, মহাবিদ্যালয় ,মাদ্রাসা ২৪৫টিখোলা রাখা হয়েছে।
বুলবুলের ক্ষতি মোকাবিলায় প্রশাসন জনগণকে সচেতন করতে সার্বক্ষণিক মাইকিং করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা মাইকিং করে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলাম বলেন, বুলবুল মোকাবিলায় সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সব কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছেন। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ৩০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি খাবারের আরও প্যাকেট তৈরির ব্যবস্থা চলছে। দুর্যোগের সময় চিড়া যেহেতু বেশি প্রয়োজন হয়, তাই আমরা বাজারে কয়েকটি চিরা কলকে তৈরি রেখেছি যাতে প্রয়োজন হলে তারা আমাদের চিড়া সরবরাহ করতে পারেন। জেলায় ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগে কোথাও বড় ধরনের সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে খবর নেয়ার জন্য জেলায় ১০টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জনসাধারণকে সচেতন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা ও প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম দুর্যোগের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মোংলাতে অবস্থান করছে। নদী তীরের লোকজনকে দুপুরের আগেই আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়া জন্য অনুরোধ করেছেন। এদিকে মহাবিপদ সংকেত জারি হলেও এখনো সব জায়গায় তিনটির মধ্যে বিপদ সংকেতের একটি পতাকা উড়তে দেখা যায়। এতে করে জনসাধারণের মধ্যে নানা রকম ভিভ্রান্তের সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণ লোকজন বুঝতে পারছেনা আসলেই কত নম্বর বিপদ সংকেত চলছে।
এদিকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের পর সকল প্রস্তুতি নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকে পশুর চ্যানেলে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। রাত থেকে পণ্য ওঠানামা ও জাহাজ আগমন নির্গমন বন্ধ রয়েছে। বন্দরের উদ্ধারকারী জাহাজ এম টি ‘সুন্দরবন’, এম টি শিপসা ও এমটি অগ্নিপ্রহরী এবং কোষ্টগার্ডের সিজিএস কামরুজ্জামান, মুনসুর আলী, স্বাধীন বাংলা, সোনার বাংলা ও অপারেজয় বাংলা নামে পাঁচটি উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে উদ্ধার তৎপরতার জন্য।
ধেয়ে আসছে ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’গ্রামে গ্রামে মাইকিং আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে
বাগেরহাট :: প্রবল শক্তি নিয়ে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় বুলবুল শনিবার সন্ধ্যায় নাগাদ সুন্দরবনের উপকূল (সুন্দরবনের নিকট দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে। শনিবার সকালে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ঘোষণার পর থেকে জেলারমোরেলগঞ্জ ,শরণখোলা ও মোংলা উপজেলার গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে সতর্ক করছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজন। পাশাপাশি বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৬টি ইউনিট বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করছে লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য। পুলিশও রয়েছে সতর্ক অবস্থায়। মোরেলগঞ্জে মাইকিং করে সবাইকে সচেতন করছেন বারইখালী ইউপি সদস্য মো.মিজানুর রহমান বিপু
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জানার পর সামান্য কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছে। বেশিরভাগই অপেক্ষা করছে, চরম পর্যায়ের জন্য! এছাড়া বুলবুলের খবরে সাগরে থাকা মাছধরা ট্রলার ও নৌকা তীরে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। তবে এখনো নদীতে অনেক নৌকা ও ট্রলারকে মাছ ধরতে দেখা গেছে। এদিকে বুলবুল মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আজ শনিবার ৯ নভেম্বর সকালে বাগেরহাট দড়াটানা নদীতে দেখা যায় দুই শতাধিক মাছ ধরা ট্রলার সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছে।
ট্রলারে থাকা জেলেরা জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের খবর পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে চলে এসেছেন তারা। তবে এখনো অনেক জেলে সাগরে রয়েছেন। আসলে বঙ্গোপসাগর থেকে ঈচ্ছে করলেই চলে আসা যায় না, আসতে অনেক সময় লাগে বলে জানান তারা।
মোরেলগঞ্জ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির নাসির আহমেদ জানান, ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জানার পর থেকে আমরা এলাকায় এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বলছি।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মাসুদ সরদার বলেন, বুলবুলের প্রভাব মানুষকে জানিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য আমাদের ৬টি টিম বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করছে। এছাড়া জেলার ৫টি স্টেশনে ৮টি টিম প্রস্তুত রয়েছে। পার্শ্ববর্তী জেলাতেও কথা বলা আছে, প্রয়োজনে সেখান থেকে কিছু ইউনিট বাগেরহাটের জন্য আনা হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলাম বলেন, বুলবুল মোকাবিলায় সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সব কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছেন। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ৩০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি খাবারের আরও প্যাকেট তৈরির ব্যবস্থা চলছে। দুর্যোগের সময় চিড়া যেহেতু বেশি প্রয়োজন হয়, তাই আমরা বাজারে কয়েকটি চিরা কলকে তৈরি রেখেছি যাতে প্রয়োজন হলে তারা আমাদের চিড়া সরবরাহ করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা ও প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম দুর্যোগের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মোংলাতে অবস্থান করছে।