রবিবার ● ১০ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » বাগেরহাটে আশ্রয়কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড়
বাগেরহাটে আশ্রয়কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড়
বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের শরণখোলা, মোংলা ও মোরেলগঞ্জের বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয়প্রার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
গতকাল শনিবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। রাত যতই ঘনিয়ে আসছে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা ততই বাড়ছে। কোনো কোনো জায়গায় ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
সর্বশেষ রাত ৮ টা পর্যন্ত বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, মোংলা ও রামপাল উপজেলার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় থাকলেও বাগেরহাট সদর, কচুয়া, মোল্লাহাট, চিতলমারী ও ফকিরহাট উপজেলার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয়প্রার্থী ছিল খুবই কম। এসব উপজেলার কোনো কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে কেউই যায়নি।
শনিবার রাত ৮ টার দিকে মধ্য সাউথখালী স্কুল কাম ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে দেখা যায় সাড়ে ৭শ’র বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। যা এর ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বলে জানান স্থানীয়রা। নানা বয়সী মানুষ ওই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাসাঠাসি করে রয়েছেন। পার্শ্ববর্তী চালিতাবুনিয়া আশ্রয়কেন্দ্রেরও অবস্থা একই। সেখানেও তিল ধারণের ঠাঁই নাই।
আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, জীবন বাঁচাতে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। আমি যেমন ছেলে-মেয়ে নিয়ে এসেছি। অন্যরাও তেমন বৃদ্ধ বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসছেন। তাই আশ্রয়কেন্দ্রে অনেক ভিড় হয়েছে। তারপরও বিপদের সময় একটু কষ্ট হলেও সবাই মিলে থাকছি।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার জন্য। জনসংখ্যার তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্র কম হওয়ায় একটু চাপাচাপি করে থাকতে হচ্ছে মানুষদের। এর মধ্যেও সবাই যাতে নিরাপদে থাকতে পারেন, আমরা সে অনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, জেলার ৩৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে রাত ৮টা পর্যন্ত এক লাখ পাঁচ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয় নেওয়া জনসাধারণের জন্য শুকনো খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। রাতেও কন্ট্রোল রুম চালু থাকবে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে এলো আরেক বুলবুলি
বাগেরহাট :: ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে শনিবার দিবাগত রাত ১২ টার পর মোংলার মিঠাখালী গ্রামে এটিসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপকূলীয় এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে হনুফা বেগমের কোল আলো করে জন্ম নিয়েছে নবজাতক এক শিশু কন্যা।
ঘূর্ণিঝড় ’বুলবুল’র নামানুসারে নবজাতক শিশু কন্যার নাম রাখা হয়েছে ’বুলবুলি’। নবজাতক শিশু কন্যার বাবা বায়জিদ শিকদার তার নবজাতক কন্যার নাম বুলবুলি রেখেছেন।
এ বিষয়ে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাহাত মান্নান জানিয়েছেন গর্ভধারিণী হনুফা বেগমের জন্য মোংলা পরিবার পরিকল্পনা অফিস থেকে ধাত্রী এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসক পাঠানো হয়েছিল। নবজাতক বুলবুলি এবং তার মা হনুফা বেগম সুস্থ আছেন।
এদিকে শনিবার (০৯ নভেম্বর) দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত পাওয়ার পর চর অঞ্চলের মানুষ আশ্রয়ের জন্য যখন ছুটাছুটি করছিল পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ সরকারি আবাসন প্রকল্পের ঘরে তখনই আবুল কালাম ও হুমায়রা বেগম দম্পতির প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। সদ্য জন্ম নেওয়া এই কন্যা সন্তানের নামও রাখা হয়েছে বুলবুলি আক্তার বন্যা।