সোমবার ● ১১ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহের রোমেনার স্বাবলম্বি হওয়ার গল্প
ঝিনাইদহের রোমেনার স্বাবলম্বি হওয়ার গল্প
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: মাত্র ২০ গজ কাপড় আর একটি সেলাই মেশিন নিয়ে ১৫ বছর পূর্বে কাজ শুরু করেছিলেন রোমেনা বেগম। সুচ-আর সুতাই স্বপ্ন সেলাই করে ঘুরিয়েছেন নিজের সহ অসংখ্য অসহায় নারীর জীবন। আজ তার ঝিনাইদহ শহরে একটি বাড়ি হয়েছে, আছে একটি বিশাল বড় শো’রুম। ঢাকা, খুলনা, বরিশালসহ নানা স্থানে তার হাতের কাজের বিভিন্ন পন্য সরবরাহ হচ্ছে। তার আওতায় কাজ করে কমপক্ষে দুইশত অসহায় নারী সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে সমবায় অফিসের পরামর্শ, প্রশিক্ষন ও সহযোগিতার কারনেই। রোমেনা বেগম জানান, তিনি নিজের মতো করে কাজ করে যেতেন। কিন্তু সফলতা আনতে পারছিলেন না। ২০১৪ সালে ঝিনাইদহ জেলা সমবায় অফিসের কর্মকর্তারা তার পাশে দাড়ান। প্রথমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। এরপর নানা পরামর্শ দেন। তারা রোমেনার তৈরী বিভিন্ন মালামাল মেলার স্টলে প্রদর্শন করেন। এভাবেই তার তৈরী পন্যগুলো অল্পদিনে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। রোমেনা বেগম (৪৬) ঝিনাইদহ শহরের গীতাঞ্জলী সড়কের বাসিন্দা মোঃ ইয়াসিন আলী বিশ্বাসের স্ত্রী। ১৯৮৬ সালে তার বিয়ে হয়। এরপর এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে সংসারি হয়ে যান। আর পড়ালেখা করা সম্ভব না হলেও নতুন করে পড়ালেখা শুরু করেছেন। তার মেয়ে রুবিনা ইয়াসমিনকে বিয়ে দিয়েছেন, পুত্র রিয়াজ আহম্মেদ পড়ালেখা করছে। স্বামীর ঝিনাইদহ শহরে ছোট একটি কস্মেটিক্স এর দোকান রয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের বাসুদেবপুরে। রোমেনা বেগম জানান, বিয়ের পর তাদের সংসার চলছিল না। সেই কারনে ২০০৫ সালে স্বামী-স্ত্রী শহরে চলে আসেন। এখানে স্বামী ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু তেমন পুজি না থাকায় ব্যবসা ভালো চলছিল না। এই অবস্থায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজে কিছু একটা করবেন। ছোট বেলা থেকেই হাতের কাজের প্রতি তার ঝোক ছিল। তাই বেছে নেন হাতের কাজ। শুরু করেন নকশী কাঁথা, থ্রীপিচ, কুশন, বেডসিট, বালিশের কভার সহ নানা পন্য তৈরী। রোমেনা বেগম জানান, ২০০৪ সালে প্রথম যখন এই কাজ শুরু করেন তখন একটি সেলাই মেশিন কেনার পর কাছে পুজি ছিল মাত্র ২০ গজ কাপড় কেনার। এই দিয়ে শুরু করেন কাঁথা সেলাই কাজ। ২বছর পর তার কাছে প্রতিবেশি নারীরা আসতে শুরু করেন। যারা সমাজে অসহায়। অনেক নারী আছেন যাকে স্বামী তালাক দিয়েছেন। আবার অনেকে আছেন স্বামী আরেকটি বিয়ে করে নিয়েছেন। রোমেনা জানান, ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি বাড়িতে বসে অসহায় নারীদের নিয়ে কাজ করেছেন। এরপর ঝিনাইদহ সমবায় অফিসের কর্মকর্তারা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সমবায় থেকে রেজিষ্ট্রেশন নেন। বর্তামানে তার এই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৩৮ জন। রোমেনা সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার এই সংগঠনের মাধ্যমে বর্তমানে কালীগঞ্জে ২০ জন, যশোরে ৫০ জন, খাজুরায় ৩০ জন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক নারী কাজ করছেন। তাদের সমিতির বর্তমান মুলধন ২০ লাখ টাকা। আর সঞ্চয় আমানতের পরিমান প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা সমবায় কর্মকর্তা সৈয়দ নুরুল কুদ্দুস জানান, শুধু রোমেনা নয় তারা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেককে এভাবে প্রশিক্ষন দিয়ে স্বাবলম্বি করে গড়ে তুলেছেন। সমবায় একটা শক্তি এটা প্রমানে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
তিন দিন পর সুমনের লাশ হস্তান্তর করল বিএসএফ
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ী সুমনের লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। রোববার সন্ধ্যার দিকে তার লাশ পরিবারের সদস্যরা গ্রহন করেন। এ সময় নিহতের স্বজন, বিজিবি’র শ্রীনাথপুর কোম্পানী কমান্ডার সুবেদার কামরুল হাসান, মহেশপুর থানা পুলিশের প্রতিনিধি আওয়াল হোসেন এবং বিএসএফ এর পক্ষে পাখিউড়া ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার উপস্থিত ছিলেন। ঝিনাইদহ-৫৮ বিজিবি পরিচালক লে. কর্ণেল কামরুল আহসান জানান, ঘটনার ৬১ ঘন্টা পর বিকালে মহেশপুর সীমান্তের মেইন পিলার ৬০/১৩০ আর পিলারের নিকট ভারতের অভ্যন্তরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফ নিহতের লাশ হস্তান্তর করেছে। পরে আমরা পুলিশ ও বিজিবি’র উপস্থিতিতে লাশ নিহতের পরিবারকে বুঝিয়ে দিয়েছি। উল্লেখ্য, শনিবার (৮ নভেম্বর) ভোর ৪ টার দিকে জেলার মহেশপুর সীমান্তের লড়াইঘাট এলাকা দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে গরু আনতে যায় সুমন সহ কয়েকজন। গরু নিয়ে ফেরার সময় ভারতের অভ্যন্তরে শীলগেট নামক স্থানে পৌছালে পাখিউড়া ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ করে গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সুমন। সে মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে।
শৈলকুপায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত-২৫
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় দুটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে শৈলকুপা ও ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। রোববার সকাল ১১টার দিকে শৈলকুপা গোবিন্দপুর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দ্রুত গতিতে যাওয়ার সময় গোবিন্দপুর নামক স্থানে একে অপরকে পাশ কাটাতে গিয়ে দুই বাসের সংঘর্ষ ঘটে। এসময় একটি বাস উল্টে রাস্তার নীচে পড়ে যায়। এতে বাসের অন্তত ২৫ যাত্রী আহত হয়। শৈলকুপা হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, আহত ৪ জনকে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহে রেফার করা হয়েছে। শৈলকুপা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহবায়ক মনোয়ার হোসেন মালিথা বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠানে শৈলকুপায় আসার পথে বাস দূর্ঘটনায় ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। শৈলকুপা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, আহতদের উদ্ধার করে শৈলকুপা ও ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়েছে।
হরিণাকুন্ডুতে প্রবাসীর নিজ অর্থায়নে সড়ক সংস্কার
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার জোড়াদহ ইউনিয়নের বেলতলা, হরিশপুর ও শড়াতলা গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র গ্রামীণ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কার বা মাটি ভরাট না করায় ফসলের মাঠে যেতে পারছে না ঐ ৩ গ্রামের শত শত কৃষক। ফলে অনেক সময় ফসল ঘরে তুলতে না পারায় ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব সাধারণ কৃষক। বেলতলা গ্রামের বয়োবৃদ্ধ কৃষক মানোয়ার মিয়া, দুলাল মিয়া, আজিজুল হক ও আলফাজ উদ্দীন বলেন, গ্রামের এই রাস্তাটির মাটি ভরাট হয়নি কখনও। বার বার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরণা দিয়েও কাজ হচ্ছে না কোন। ফলে বিভিন্ন মৌসুমে আমাদের মাঠের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তরুণ যুবক জাহাঙ্গীর সবুজ, ডাবলু মিয়া ও রিজন বলেন, রাস্তাটি বর্ষা মৌসুমে সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যায়। দেখলে মনে হয় এটি একটি পুকুর। তিন গ্রামের সাধারণ মানুষের একমাত্র গ্রামীণ এ সড়কটি নিজ উদ্যোগে সংস্কারে এগিয়ে আসেন বেলতলা গ্রামের কৃতী সন্তান, হরিনাকুন্ডু প্রবাসী জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া। তিনি নিজ অর্থায়নে সংস্কার করছেন গ্রামীণ এই সড়কটি। সরেজমিনে ঐ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ঐ প্রবাসী বাবু মিয়ার নিজ অর্থায়নে আনা হচ্ছে ইট, বালু ও খোয়া। গ্রামীণ যানবাহনে সাধারণ মানুষ মাটি কেটে আনছেন গ্রামের ঐ প্রবাসীর নিজ জায়গা থেকে। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে শতাধিক সাধারণ মানুষ কাজ করছেন রাস্তা সংস্কারে। ঐ গ্রামের কৃতী সন্তান কাতার প্রবাসী বাবু মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কয়েকটি গ্রামের মানুষ এই রাস্তাটির কারণে চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষের কথা ভেবে নিজ অর্থায়নে রাস্তাটি সংস্কারের ব্যবস্থা করেছি। সাধারণ মানুষের জন্য যে কোন প্রয়োজনে তাদের পাশে থেকে সেবা করতে চাই। এলাকাবাসী বলেন প্রবাসী বাবু মিয়া একজন সমাজ সেবক, তিনি বিভিন্ন সময় সমাজের মানুষের জন্য কাজ করেন। স্কুল কলেজের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাবৃত্তি ও সমাজ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে তিনি জড়িত বলে জানান ঐ গ্রামের সাধারণ মানুষ। তাই গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র এই রাস্তাটির সংস্কারের ব্যাপারে তাকে জানানো হলে তিনি সাথে সাথেই নিজ উদ্যোগে রাস্তাটি সংস্কারের ব্যবস্থা করেন। তারা দীর্ঘদিনের অবহেলিত বেহাল এ সড়কটি নিজ উদ্যোগে সংস্কার করায় ঐ প্রবাসী বাবু মিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।