বৃহস্পতিবার ● ১৪ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » হাওয়া ভবনের ঘণিষ্ঠ রাজ্জাক স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী
হাওয়া ভবনের ঘণিষ্ঠ রাজ্জাক স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি প্রার্থী
আবদুর রাজ্জাক :: সাত বছর পর হতে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন; নেতৃত্বের পালাবদল ঘিরে পদ প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী এ সংগঠনের শীর্ষ পদে পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন প্রায় একডজন নেতা। পদপ্রত্যাশীদের তালিকায় দলের আদর্শের প্রতি নিবেদিত ত্যাগি নেতাদের পাশাপাশি রয়েছেন বেশ কজন সুবিধাবাদি ও বিতর্কিত ব্যক্তি। তাদেরই একজন হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান কমিটির আট নম্বর সহ-সভাপতি ম. আবদুর রাজ্জাক।
বগুড়ার একটি এতিমখানায় পালিত ম. আবদুর রাজ্জাক এখন বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতির সভাপতির পদটি দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে তার দখলে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদ পেতে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি; দামি উপঢৌকন নিয়ে ছুটছেন প্রভাবশালী নেতাদের বাড়ি বাড়ি। নিজের প্রভাব-প্রতিপত্তি আরও বাড়াতেই রাজ্জাক ওঠে আসতে চান স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষপদে।
বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হলেও ম. আবদুর রাজ্জাক বিএনপি-জামাতের আমলে হাওয়া ভবনে নিয়মিত যাতায়াত করতেন বলে অভিযোগ আছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে হাওয়া ভবনের আশির্বাদে তার মালিকানাধীন পারিশা ট্রেড সিস্টেম লিমিটেড অবৈধ উপায়ে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করে। পারিশা ট্রেড সিস্টেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে স্ত্রী হোসনে আরা ছবিকে সামনে রেখে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম. আবদুর রাজ্জাক বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে হয়ে ওঠেন কোটিপতি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ভোল পাল্টে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বনে যান। স্বেচ্ছাসেবক লীগে যুক্ত হয়ে বাগিয়ে নেন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতির পদটি। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব কাজে লাগিয়ে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে পাচার করা টাকায় কানাডায় রাজ্জাক গড়ে তোলেন সেকেন্ড হোম।
কানাডার টরেন্টোর ডাউনটাউনের অভিজাত এলাকা স্কারবোরোতে ম. আবদুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রীর মালিকানায় রয়েছে ৪টি বিলাসবহুল বাড়ি। টরেন্টোতে খুলেছেন বড় একটি রেস্টুরেন্ট। বাংলাদেশের ৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নানা প্রকল্পের নাম ভাঙিয়ে ঋণ নিয়ে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন এই দম্পতি।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইউসিবিএল, এক্সিম ব্যাংক ও স্ট্যান্ডাড ব্যাংকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণখেলাপি হলেও কানাডায় ম. আবদুর রাজ্জাকের প্রাচুর্য্যের শেষ নাই। তার স্ত্রী হোসনে আরা ছবি কানাডার বেগমপাড়ায় সুপরিচিত একটি নাম। প্রায় প্রতিমাসেই তারা কানাডায় যাতায়াত করে থাকেন।
শুধু তাই নয়, ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগরীতে নির্মাণাধীন বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার ধসের ঘটনায় ১৬ জন পথচারী নিহত হয়। ওই ফ্লাইওভারের প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার অ্যান্ড পারিশা ট্রেড সিস্টেমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ম. আব্দুর রাজ্জাক। এই মর্মান্তিক ঘটনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি রাজ্জাকসহ ২৫ জন ছিলেন আসামী। পরে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব কাজে লাগিয়ে মামলার অভিযোগপত্র থেকে নিজের নাম বাদ দেওয়ার করেন ম. আবদুর রাজ্জাক।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোতে শুদ্ধি অভিযান চালানো হলেও ম. আবদুর রাজ্জাক রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার উর্দ্ধে। উপরুন্ত আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর সভাপতি পদ পেতে ব্যাপক তৎপর হয়ে ওঠেছেন ব্যবসায়িক মহলে কালা রাজ্জাক নামে পরিচিত এই নেতা। পদ পেতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের দরোজায় কড়া নাড়ছেন তিনি, উপঢৌকন হিসেবে বিতরণ করছেন বান্ডিল বান্ডিল টাকা। নিজের অবৈধ আয়-উপার্জন বাড়ানোর জন্যই ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনটি শীর্ষপদ পেতে তৎপর ম. আবদুর রাজ্জাক। অথচ স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বা যোগাযোগ রাখার প্রয়োজন কখনোই বোধ করেননি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের হাইব্রিড এই নেতা।