রবিবার ● ১৭ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » চট্টগ্রামে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে অ্যানি বড়ুয়াসহ ৭ জনের মৃত্যু
চট্টগ্রামে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে অ্যানি বড়ুয়াসহ ৭ জনের মৃত্যু
চট্টগ্রাম :: চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা ব্রিকস ফিল্ড এলাকায় এক বাড়িতে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত সাতজনের মধ্যে একজনের নাম জানা গেছে। তিনি হলেন নুরুল ইসলাম (৩০)। তিনি পেশায় রংমিস্ত্রী। তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়ায়।
ব্রিকস ফিল্ড এলাকায় জনতা ফার্মেসির পাশে বাদশা মিয়া ভবনের পাশে বরুয়া ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে নিচতলার দুটো দেয়াল ধসে পড়ে। এতে লোকজন চাপা পড়েন।
বাদশা মিয়া ভবনের পাশের বড়ুয়া ভবন আহমদ মনজিলের বাসিন্দা জেসমিন আক্তার মলি গণমাধ্যমকে বলেন, আজ ১৭ নভেম্বর রবিবার সকাল পৌনে ৯টা থেকে ৯টার মধ্যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রথমে আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই। শব্দ শুনতে পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি। নিচে এসে দেখি বড়ুয়া ভবনের নিচতলা বিধ্বস্ত হয়েছে। আশেপাশে ভাঙা আসবাবপত্র ও কাচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। সেখানে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে আমার ভাই আ. হানিফকে দেখতে পাই।’
মলি জানান, তার ভাই আ. হানিফ টেম্পো চালক। রাতে টেম্পো চালিয়ে বাসায় ঢোকার পথে তার ভাই দেয়ালচাপা পড়েন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ফয়সাল কবির বলেন, ‘আহতাবস্থায় ২০/২২ জন হাসপাতালে এসেছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। আহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’
নিহতদের বিষয়ে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘নিহত সাতজনের অধিকাংশ মাথায় আঘাত পেয়েছেন। এ কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।’
চট্টগ্রাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান জানান, বিস্ফোরণে বাড়িটির একাংশ বিধ্বস্ত হয়েছে ও দেয়াল ধসে গেছে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের নাম-পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বড়ুয়া ভবনের নিচ দিয়ে গ্যাস লাইন গেছে। গ্যাস লাইন বিস্ফোরণের ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তারপরও দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে আমরা কাজ করছি।’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ পরিচালক হাসান শাহারিয়ার কবির মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, আহত হয়ে মোট ১৭ জন হাসপাতালে এসেছিলেন। তার মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন। মৃতদের মধ্যে ২ নারী, ৪ পুরুষ, ১ কিশোর। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১০ জন। ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে পাঁচজন, বার্ন ইউনিটে দুইজন, নিউরোলজিতে একজন, অর্থোপেডিক বিভাগে একজন ও কার্ডিওলজি বিভাগে একজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অর্পিতা নাথ (১৫) এর অবস্থা সংকটাপন্ন। এ ব্যাপারে চমেক বার্ন ইউনিটের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নারায়ণ চন্দ্র ধর গণমাধ্যমকে জানান, অর্পিতার শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালীতেও সংক্রমণ হয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর।
একই বাড়ির সন্ধ্যা রানী নাথ (৪০) ভর্তি আছেন ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (দক্ষিণ) শাহ্ মো. আব্দুর রউফ গণমাধ্যমকে জানান, গ্যাস লাইনে ত্রুটি থাকায় পুরো বাড়িটি গ্যাস চেম্বার হয়ে গিয়েছিল। অথবা ওই বাড়ির গ্যাসের চুলা খোলা ছি। বিস্ফোরক অধিদফতর ও ফায়ার সার্ভিসকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আগুন লাগার মূল কারণ জানা যাবে।
নিহতদের মধ্যে আরেকজন অ্যানি বড়ুয়া (৪০) তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার উনাইনপুরা গ্রামের বাসিন্দা এবং একই উপজেলার মেহেরআটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা।
তার স্বামী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী পলাশ বড়ুয়া গণমাধ্যমকে জানান, বাড়ির নিচতলায় বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন অ্যানি। বিস্ফোরণে ধসে পড়ে দেয়ালের একটি অংশ তার শরীরে এসে পড়ে। আহতাবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে বসে আহাজারি করছিলেন অ্যানি বড়ুয়ার স্বামী পলাশ বড়ুয়া। তাদের স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তান রয়েছে।