সোমবার ● ১৮ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » ঘূর্ণিঝড়ে টমেটো চাষিদের সাড়ে ৬ কোটি টাকার ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড়ে টমেটো চাষিদের সাড়ে ৬ কোটি টাকার ক্ষতি
বাগেরহাট প্রতিনিধি :: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে বাগেরহাটের ৯ উপজেলার সবজি চাষিরা টমেটো চাষের মাধ্যমে ভাগ্যবদলের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে নীরবে কাঁদছেন চাষিরা। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ প্রকৃতির মতো তাদের সব আশা-ভরসাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। শুধু বুলবুল নয়, বারবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে এ অঞ্চলের কৃষকদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড এখন নুয়ে পড়েছে। তাই কোনো সান্তনাই দেনার দায়ে জর্জারিত টমেটো চাষিদের কান্না থামাতে পারছে না।ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে টমেটো চাষ করে খরচ না ওঠায় নীরবে কাঁদছেন কোনো কোনো কৃষক।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, টমেটো এ অঞ্চলের চাষিদের একটি প্রধান অর্থকারী ফসল। প্রচুর লাভের আশায় তারা এটি চাষ করে থাকেন। সে লক্ষে এ বছর উপজেলায় এক হাজার ১০০ একর জমিতে চক্র, পানপাতা, মিন্টু সুপার, লাভলী, হাইটম ও বিউটিসহ বিভিন্ন জাতের টমেটোর চাষ করা হয়েছে। মূলত এ এলাকায় শীতকালীন টমেটোর চাষ হয়ে থাকে। এবার ফলের উৎপাদন হয়েছিল প্রচুর। বাজারেও পাকা টমেটো উঠতে শুরু করেছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে এখানের ৯০ শতাংশ ক্ষেতের টমেটো নষ্ট হয়ে কমপক্ষে সাড়ে তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বাগেরহাট কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঝড়ে ৯ উপজেলায় পাঁচ সহস্রাধিক কৃষক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আমন ধান সাত হাজার হেক্টর, পান ৩০ হেক্টর, সরিষা দুই হেক্টর, ফল ও শাকসবজিসহ ২০০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে সর্বমোট ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষকদের তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতির পরিমাণ এর দ্বিগুণেরও বেশি।
চিতলমারীর খলিশাখালী গ্রামের টমেটো চাষি কৃষ্ণপদ মজুমদার, অনিমা মণ্ডল, খড়মখালী গ্রামের আলমগীর তরফদার, পরিমল মজুমদার, শ্রীরামপুরের বিমল মণ্ডল, কৃষ্ণনগর গ্রামের বিনয় মালাকার, কালশিরার বিকাশ মণ্ডল, পাটরপাড়ার মুজিবর বিশ্বাস, সুরশাইলের ইউসুফ শেখ, মুন্না শেখ, খড়মখালীর পরিতোষ মজুমদার, লিটন সিংহ, কুরমুনির রেজাউল দাড়িয়া, দড়িউমাজুড়ির দেবদাস বৈরাগী, দিজেন বৈরাগী, বুদ্ধ বসু, অনিমেশ মণ্ডল (সাদ্দাম) ও অনুপ বিশ্বাস জানান,‘দাদা অনেক স্বপ্ন নিয়ে ক্ষেতে তিন হাজার টমেটো’র গাছ লাগিয়ে ছিলাম। কঠোর পরিশ্রম ও পরিচর্যায় গাছ গুলোতে প্রচুর টমেটো ধরেছিল। আশা ছিল এ বছর টমোটে বিক্রি করে সব ধারদেনা পরিশোধ করব। কিন্তু ঋণের টাকা তো দূরের কথা, পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচাটাই এখন দুরহ ব্যাপার। হঠাৎ করে একদিনে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে দেড় হাজার ফলন্ত টমেটো গাছ লণ্ডভণ্ড করে । এ অঞ্চলের টমেটো দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মেটায়। প্রতি বছর এখানে কয়েক লাখ টন টমেটো উৎপাদিত হয়। আগতি টমেটোতে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই তারা এ আগাম টমেটো চাষের মাধ্যমে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ তাদের সব আশা-ভরসাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। কোনো সান্তনাই তাদের কান্না থামাতে পারছে না।
এ ব্যাপারে চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার জানান, এ বছর টমেটোর ফলন ভালোই হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ফলন্ত টমেটো নষ্ট হওয়ায় চাষিদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে।বাগেরহাটকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বলেন,টমেটোউৎপাদনের জন্য সব উপাদন সময় মতো পাওয়ায় ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষিদের টমেটো উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।এ বছর টমেটোর ফলন ভালোই হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ফলন্ত টমেটো নষ্ট হওয়ায় চাষিদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে।