মঙ্গলবার ● ১৯ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাজস্থলীতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সংবাদ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত : পিসিজেএসএস
রাজস্থলীতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সংবাদ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত : পিসিজেএসএস
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: আজ ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) রাঙামাটি জেলা কমিটির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গতকাল (১৮ নভেম্বর) parbattanews.com, chttoday.com, pahar24.com, chttimes24.com, banglanews24.com, বিবিসি, প্রথম আলো, যুগান্তর, মানবজমিন, jagonews24.com, New Age, Dhaka Tribune, New Nation, জনকণ্ঠ, বাংলা ট্রিবিউন, চট্টগ্রাম প্রতিদিনসহ বিভিন্ন টিভি ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রায় একই তথ্য দিয়ে প্রকাশিত ‘রাঙামাটির রাজস্থলীতে জনসংহতি সমিতির (কোন কোন সংবাদে সন্তু গ্রুপের) দু’গ্রুপের অন্তর্কোন্দলে /সংঘর্ষে /গোলাগুলিতে পিসিজেএসএস’র ৩ সশস্ত্র কর্মী / সন্ত্রাসী নিহত’ হওয়ার সংবাদের প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির দৃষ্টিগোচর হয়।
এ সংবাদে কোন বস্তুনিষ্ট তদন্ত ও বাছ-বিচার ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের বরাত দিয়ে একতরফাভাবে বলা হয় যে, রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দা ইউনিয়নের বালুমুড়া মারমা পাড়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে পিসিজেএসএসের ৩ সশস্ত্র কর্মী বা কোন কোন সংবাদের ভাষ্যে সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। বস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের সংবাদ সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট, বিকৃত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত।
জানা যায় যে, গতকাল ১৮ নভেম্বর সকালে স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সেনাবাহিনীর সমর্থিত দলচ্যুত আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)-এর একটি গ্রুপ অস্ত্র-শস্ত্রসহ মদ্যপ অবস্থায় বান্দরবান জেলার সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ৮নং নোয়াপাড়া গ্রামে প্রবেশ করে। প্রবেশ করেই তারা এলাকার যুবক ও পুরুষদের ধরপাকড় শুরু করে এবং তাদেরকে মারপিট করতে থাকে। অবশেষে বিকাল ৪টায় সময় নোয়াপাড়ার কার্বারী (গ্রাম প্রধান) মোনারাম তঞ্চঙ্গ্যা (৫৫) ও তার ছেলে সুখমণি(শুক্রমনি) তঞ্চঙ্গ্যা (৩২) সহ চারজন গ্রামবাসীকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজনকে ছেড়ে দিলেও মোনারাম তঞ্চঙ্গ্যা ও সুখমণি তঞ্চঙ্গ্যাসহ বাকী তিনজনকে সন্ধ্যার দিকে গাইন্দা ইউনিয়ন ও রাজভিলা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বালুমুড়া স্থানে নিয়ে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
উল্লেখ্য যে, স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যোগসাজশে সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিজিবি ও প্রশাসন কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুন-খারাবি, সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজি অভিযোগ আনার অপচেষ্টাকে বৈধতা দানের হীনউদ্দেশ্যে দলচ্যুত এএলপি নামক বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠী কর্তৃক নিরীহ তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীদেরকে নৃশংস হত্যার ঘটনাকে জনসংহতি সমিতির দু’ গ্রুপের মধ্যেকার সংঘর্ষ বলে সেনাবাহিনী থেকে এসব গণমাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ করা হয় এবং তা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করে বিবিসি ও প্রথম আলোর মতো বহুল প্রচারিত সংবাদমাধ্যমসহ সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর আশীর্বাদপুষ্ঠ পার্বত্য চট্টগ্রামের তথাকথিত অনলাইন সংবাদ পোর্টালে ফলাওভাবে প্রচার করা হয়।
এমনকি ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে না গিয়ে এবং ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের উদ্ধার ও ময়না তদন্ত না করে রাঙামাটি পুলিশ সুপার ও রাজস্থলী থানার ওসিসহ পুলিশ ও প্রশাসন এ ঘটনাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ‘সশস্ত্র দু’গ্রুপের’ মধ্যে সংঘটিত ঘটনা বলে নিশ্চিত করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছে এবং সংবাদ মাধ্যমগুলো তা সঠিক মনে করে সন্ধ্যার পর পরই (ঘটনার দুই/এক ঘন্টার মধ্যে) প্রচার করতে শুরু করে। পার্বত্যনিউজ.কম তো “নিহত সন্ত্রাসীরা চলতি বছরের ১৮ মার্চ বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উপর হামলার সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে” বলেও আগাম সংবাদ দিয়েছে। মূলত গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা নিয়ে এএলপিকে দিয়ে শাসকদলের যোগসাজশে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসন নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর এই হত্যার ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে এসব সংবাদ থেকে সহজে অনুমান করা যায়। হত্যার শিকার এসব গ্রামবাসী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কোন সদস্য নন এবং তারা কোন প্রকার সশস্ত্র তৎপরতার সাথেও যুক্ত নন। আরো উল্লেখ্য যে, এসব কায়েমী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এএলপিকে দিয়ে খুন-সন্ত্রাস চালিয়ে এসব এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ করার দীর্ঘদিন ধরে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃত্বসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ মদদ ও যোগসাজশে কখনো কখনো স্থানীয়ভাবে ‘মগ লিবারেশন পার্টি’ নামে পরিচয়দানকারী এএলপি নামক বিদেশী সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সংস্কারপন্থী খ্যাত তাঁবেদার সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন, সংঘাত, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। আর সেনা-সমর্থিত এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো দ্বারা সংঘটিত ঘটনাকে দোহাই দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকসহ নিরীহ গ্রামবাসীর উপর নির্বিচারে তল্লাসী, মিথ্যা মামলা দায়ের, অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন, গ্রেফতার, হত্যাসহ ফ্যাসীবাদী কায়দায় দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে।
রাজনৈতিক হীনউদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের সরবরাহকৃত বিকৃত ও সাজানো তথ্যের ভিত্তিতে উল্লেখিত সংবাদমাধ্যমে এধরনের ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত সংবাদ প্রকাশের বিরুদ্ধে জনসংহতি সমিতি তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছে। এই ভিত্তিহীন সংবাদ প্রত্যাহার করে ঘটনার বস্তুনিষ্ট তথ্য নিয়ে যথাযথ সংবাদ প্রকাশের জন্য এসব সংবাদমাধ্যমকে আহ্বান জানিয়েছেন।