বৃহস্পতিবার ● ২১ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » কৃষি » মাটিরাঙ্গায় বুড়ো তরনী সেনের কান্ড দেখতে শত মানুষের ভীড়
মাটিরাঙ্গায় বুড়ো তরনী সেনের কান্ড দেখতে শত মানুষের ভীড়
অন্তর মাহমুদ,মাটিরাঙ্গা প্রতিনিধি :: মাটিরাঙ্গায় তরনী সেন ত্রিপুরা নামে ৮৫ বছরের এক বুড়োর কান্ড দেখতে প্রতিদিন ভীড় জমাচ্ছেন উত্সুখ পাহাড়ী ও বাঙ্গালীরা৷ ঐতিহ্যকে মনে প্রাণে লালন করা ও ঐতিহ্য রক্ষায় জীবন বাজি রাখা এ রকম ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী মানুষ আজ কাল দেখা যায়না৷ লোক মুখে শোনার পর ১০নং দয়া হেডম্যান পাড়া বাসিন্দাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন,তরনী সেন-ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জন্য একজন সাধারণ মানুষ হলেও তার চিন্তা ভাবনা সাধারণ নয় উল্লেখ করে তারা বলেন,তাঁর রয়েছে অদম্য ইচ্ছা শক্তি, সাহস ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য রক্ষার স্বপ্ন৷ ৮৫ বছর বয়সেও পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া স্মৃতি আর আদর্শকে আকরে ধরে ত্রিপুরা সম্প্রদায় বসবাসের ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘরে বসবাস করেছেন তিনি৷ জীবনে একটি রাতও তিনি কোন টিনশেড অথবা পাকা বাড়ীতে কাটাননি৷ বিষয়টির সত্যতা জানতে এই প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে,বুড়ো তরনী সেনের এমন সাহসি কর্মকান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ত্রিপুরা ও বাংলা মিশ্রিত ভাষায় জানান,আমার বাবা এই মাচাং ঘরে থাকছে,বাবার হাতে তৈরি এই মাচাং ঘরে আমি সারাজীবন থাকছি,আমার মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত আমি এই মাচাং ঘরটিতে বসবাস করবো এবং অক্ষত অবস্থায় মাচাং ঘরটি রেখে যেতে চাই আমার প্রজন্মের কাছে স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে৷ আমার সঞ্চিত সব টাকা পয়সা ও গরু,ছাগল সব বিক্রি করে মাচাং ঘরটি পুনরায় পুরো নির্মাণ করবোই৷ প্রায় ৫০বছরের পুরনো এই মাচাং ঘরটি আমি ১৭/১৮ বছর আগে একবার মেরামত করেছি,তখন মেরামত করতে তেমন কোন সমস্যায় পরতে হয়নি৷ বর্তমানে নতুন মাচাং ঘর তৈরি বা পুরনো মাচাং ঘর মেরামত করা সত্যিই কঠিন ব্যাপার৷ এ সময় তিনি নির্মানাধীন মাচাং ঘরটির চারপাশ দেখান উপস্থিত উত্সুখ জনতাকে৷ ৮৫বছর বয়সেও তার নির্মাণ শৈলী ও পরিশ্রমী মানুষিকতায় সকলে মুগ্ধ হয়ে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে তরনী সেনের দিকে৷ এরপর তিনি জানান,মাচাং তৈরির প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে বাঁশ ও গাছ৷ আগে অনায়াসে গোদা গাছ,ধাঁরমারা গাছসহ বিভিন্ন টেকশই গাছ পাওয়া যেত বনে ৷ রফাই,মির্তিঙ্গা,মুলি বাঁশসহ উদালগাছের ছাল পাওয়া যেত সহজেই৷ মানুষ নির্বিচারে বাঁশ ও গাছ ধবংস করার ফলে আজ মাচাং ঘর শুধুই ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী বসবাসের ঘর৷ আজকের দিনে আশ-পাশের দশ পনের গ্রামে একটিও আগের দিনের ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মাচাং ঘর আর দেখা যায় না উলেস্নখ করে তিনি,নতুন নতুন মাচাং ঘর তেরিসহ ঐতিহ্যবাহী ত্রিপুরাদের হারিয়ে যেতে বসা কৃষ্টি কালচার রক্ষায় সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন নতুন প্রজন্মকে৷ এ বিষয়ে দীন মোহন ত্রিপুরা হেডম্যান জানান, বর্তমানে বাঁশ ও গাছের দাম অনেক বেশী,একটি পরিপুর্ণ মাচাং ঘর তৈরি করতে প্রায় ৪/৫ লাখ টাকার অধিক খরচ হওয়ার পাশাপাশী রয়েছে কাঁচামাল সংগ্রহের মতো কষ্টসাধ্য ব্যাপর৷ সে জন্যে মানুষ মাচাং ঘর তৈরি করতে চায়না৷ তারপরও তিনি মাচাং ঘরে বসবাসের উপকারিতার কথা উল্লেখ করে ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী মাচাং ঘরের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷
আপলোড : ২১ জানুয়ারী ২০১৬ : বাংলাদেশ : সময় : রাত ১০.৪০মিঃ