শুক্রবার ● ২২ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » বড় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল ডাকাত দলের : ওসি রাউজান
বড় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল ডাকাত দলের : ওসি রাউজান
ষ্টাফ রিপোর্টার :: চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার রাবার বাগানের অভ্যন্তরে নির্ঝন বনভুমিতে অস্ত্র মেরামত করতে বসা অন্তজেলা ডাকাত দলের নেতা মোহাম্মদ আলমগীর প্রকাশ আলম ডাকাতকে রাউজান থানা পুলিশ বিপুল সংখ্যক অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে গত বুধবার গভীর রাতে রাউজান থানার ওসি কেপায়েত উল্লাহ নেতৃত্বে পুলিশ দল এই অভিযান চালাতে গেলে থানার ওসিকে চুরিকাঘাত করে ডাকাত আলম। ডাকাত দলের ছোঁড়া গুলির স্পিন্টারে এস আই সাইমুল ও কনষ্টেবল কামাল সামন্য আহত হয়েছে। সরজমিনে দেখাগেছে ওসির ডানহাতে একটি আঙ্গল মারাত্বক ভাবে কেটে গেছে।
জানা যায় অভিযানের সময় আলমের সাথে থানা অন্যান্য ডাকাতদলের সদস্যরা পুলিশের প্রতি গুলি ছুড়ে পাহাড়ে পালিয়ে যায়। পুলিশও জীবন বাঁচাতে কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়েছে বলে জানানো হয়। গতকাল বুধবার রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির সোহাগ রাউজান পৌরসভার কাউন্সিলর জমির উদ্দিন ও রাউজান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হিরুকে সাথে নিয়ে ডাকাত দলের অস্তানা পরিদর্শন করেছেন।
দুর্গম যে এলাকায় পুলিশের এই অভিযান চালিয়ে সেই এলাকাটি রাঙামাটি সড়ক পথে রাবার বাগানের অফিস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণে রাবার বাগানের অভ্যন্তরে থাকা জনৈক ঘোড়া সামছুর টিলা নামে পরিচিত। প্রায় জনবসতি শূন্য ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ঝোপের ভিতর কয়েকটি ঝুপড়ি ঘর পরিত্যক্ত আবস্থায় পড়ে রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে সেখানকার একটি ঘরে বসে ডাকাত দল দেশে তৈরী অস্ত্র মওজুত করে বসেছিল সেগুলো মেরামত করার উদ্দেশ্যে। স্থানীয় জনসাধারণ ও পুলিশের ধারণা অস্ত্র গুলো মেরামত করে ডাকাতদল এলাকায় ডাকাতিসহ বিভিন্ন ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল।
রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেপায়েত উল্লাহ বলেছেন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গভীর রাতে পুলিশ দল নিয়ে দুর্গম ওই এলাকায় অভিযান গিয়েছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। পুলিশের অভিযানের টের পেয়ে ডাকাতদলের কয়েকজন গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় ডাকাত সর্দ্দার আলমকে ঝাপটে ধরতে গেলে সে হাতে থাকা চাকু দিয়ে হামলা করে। হামলা ঠেকাতে গিয়ে চাকুর আঘাত লাগে হাতে। এতে তার একটি আঙ্গুল মারাত্বক ভাবে কেটে গেলেও তাকে পালাতে দেয়া হয়নি।
পুলিশ ও এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় দুর্ধর্ষ আলম ডাকাত রাউজান ইউনিয়নের পূর্ব রাউজান ছিদ্দিক চৌকিদার বাড়ীর আবদুস সাত্তারের পুত্র। আলম একসময় তার পিতার সাথে দিন মজুরের কাজ করলেও এক পর্যায়ে অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। নিহত সন্ত্রাসী জানে আলম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী বিধান বড়–য়ার সাথে থেকে বহু ঘটনার নায়ক বনে যায়। ১০ বছর জেল খেটে বের হওয়া এই ডাকাত আগে রাঙ্গামাটি সড়ক পথের অন্তজেলার যাত্রীবাহী বাস আটকিয়ে মালামাল লুট, ব্যাংকে নেয়ার পথে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির টাকা লুট,এলাকায় ডাকাতি খনসহ অনেক ঘটনার সাথে সে জড়িত। দুর্ধষ এই অপরাধী ২০০৪ সালে রাউজান পৌরসভার কাউন্সিলর জমির উদ্দিন পারভেজ ও তার ভাই আওয়ামীলীগ নেতা জসিম উদ্দিনের উপর অতর্কিতে গুলি বর্ষণ করে হত্যার চেষ্টা করেছিল। ওই সময়কালে চট্টগ্রামে জেলা পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতব্বর এই ডাকাতকে ধরতে অভিযানে গেলে তার উপরও হামলা করে পালিয়েছিল। জানা যায় ডাকাত আলম জোট সরকারের আমলে রাউজানের ত্রাস সৃষ্টিকারী নিহত জানে আলম ও এনডিপি ক্যাডার বিধান বড়ুয়ার অন্যতম সহযোগি ছিল। গত এক মাস ২০ দিন আগে সে ১০ বছর জেল খেটে ছাড়া পায়। থানা সূত্রে থেকে জানা যায় তার নামে খুন, ডাকাতি, হাইজ্যাকসহ বিভিন্ন অপরাধে দেড় ডজন মামলা রয়েছে।
পুলিশের উদ্ধার করা অস্ত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জাম এর সামনে থানায় দাঁড় করিয়ে ফটো উঠানোর ফাঁকে স্থানীয় সাংবাদিকগণ তার বক্তব্য জানতে চাইলে আলম বলে জেলে থাকাকালে সেখানে থাকা অনেক অপরাধীর সাথে তার পরিচয় হয়। তাকে তারা বলেছে কার কি অস্ত্র কোথায় লুকিয়ে রেখেছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতে লুকানো অস্ত্র গুলো সে সংগ্রহ করে এনেছে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর জমা করে রাখা অস্ত্র পুলিশকে দেখিয়ে দিলে সেগুলো পুলিশ উদ্ধার করেছে । ওসি’কে কেন চুরিকাঘাত করেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বলে পুলিশের পোষাক না থাকায় মনে করেছিল তার প্রতিপক্ষ কোনো গ্রুপ তাকে মেরে ফেলতে সেখানে গেছে। একারণে চুরি দিয়ে আক্রমন করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছিল।
থানায় উদ্ধার করা অস্ত্র দেখতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী জোনায়েদ কবির সোহাগ সাংবাদিকদের বলেছেন থানার ওসি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডাকাত সর্দ্দারকে ধরে রাউজানবাসীকে নিরাপদ করেছে। তাকে ধরা না হলে এসব অস্ত্র কোনো না কোনো অপরাধ কর্মে ব্যবহার করা হতো। থানা ওসি কেপায়েত উল্লাহ বলেছেন তার কাছে আরো অস্ত্র থাকতে পারে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।