শনিবার ● ২৩ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটিতে কারা আঙ্গুলফুলে কলা গাছ
রাঙামাটিতে কারা আঙ্গুলফুলে কলা গাছ
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: চলমান শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে রাঙামাটিতে অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনকৃত একাধিক জাতীয় রাজনীতিক দল ও অনিবন্ধীত আঞ্চলিক রাজনীতিক দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাসহ তাদের সংগঠনের সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মী রয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের বিস্তারিত তথ্য জানতে মাঠে আছে বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং দুদক।
রাঙামাটিতে গত ১০ বছরে যারা সম্পদের পাহাড় গড়েছে এবং রাতারাতি আঙ্গুলফুলে কলা গাছ বনে গেছে এছাড়া সাম্প্রদায়িক শক্তি থেকে আসা, চিহ্নিত চাঁদাবাজ, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, চিহ্নিত ভূমিদস্যু, যাদের ইমেজ খারাপ, যাদের রাজনীতি জনগণের কাছে খারাপ- এ ধরনের নেতা-কর্মীদের তালিকা সরকারের নীতিনির্ধারক নিজের তত্ত্বাবধানে তৈরি করেছেন।
ইতোমধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশেষ সংস্থার একজন কর্মকর্তা সিএইচটি মিডিয়াকে জানান, রাঙামাটিতে জুয়া, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত এমন বেশ কজনের নাম সরকার প্রধানের টেবিলে পৌছে গেছে, নির্দেশনা আসলেই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। একজন সরকারী কর্মচারী দুর্নীতির দায়ে জেলে আছে। আরো ৩০ জনের অধিক অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীর তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। এর চেয়ে বেশী তথ্য জানাতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় যারা জুয়ার ক্লাবের টাকায় নিজে চলতেন এবং সংসার চালাতেন,যারা কেবলমাত্র বনবিভাগের পারমিটের টাকার আশায় সকাল-সন্ধ্যা পর্যন্ত ফরেষ্ট অফিসে বসে থাকতেন। রাঙামাটিতে এমনও নেতা আছে টাকার অভাবে নিজের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে পারেন নাই। কিছুদিন আগেও যারা মাত্র ৫হাজার টাকার বেতনের চাকুরী করে সংসার চালাত, টো টো কোম্পানীর ম্যানেজার খ্যাত যুবকদের পকেটে কানাকড়ি ছিল না সময়ের পালা বদলে রাজনৈতিক দলের পদ ভাগিয়ে নিয়েই সে এখন লক্ষ কোটি টাকার মালিক বনে গেছে।
সরোজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, গত ১০ বছরে (২০০৯-২০১৯ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত) রাঙামাটিতে অস্বভাবিক ভাবে যাদের সম্পদ বেড়ে হঠাত আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে তাদের মধ্যে রাজনীতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, সরকারী চাকুরীজীবি, ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক, গণমাধ্যম কর্মী ও বে-সরকরী উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা।
এদের বিরদ্ধে টেন্ডারবাজি, বিভিন্ন ক্লাবে জুয়া, শুল্ক ফাঁড়ি (স্থানীয় ভাষায় অক্টোরী সমুহ) তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কমিশন বাণিজ্য, লটারী বাণিজ্য, নামে-বেনামে সরকারী অর্থ আত্মসাত, মাদক ব্যবসা, অনিয়ম-দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, কর্ণফুলী পেপার মিল (কেপিএম), ঘাগড়া কটন মিল, রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারী জায়গা দখলবাজি, বহিরাগতরা রাঙামাটি জেলায় এসে দলের পদ ভাগিয়ে নিয়েই নানা ধরনের অপরাধের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত। মুলতঃ এরা দুর্নীতি করে অনেকে শত শত কোটি টাকা কামিয়ে এখন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ।
রাঙামাটিতে বিস্ময়কর ঘটনা হচ্ছে বিভিন্ন গনমাধ্যমের প্রকাশিত সংবদে জানা যায়, “পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের জলবাযু পরিবর্তন ট্রাষ্ট ফান্ডের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন দরিদ্র দুরীকরণ ও জীবনযাত্রার নিরাপত্তা বিধান প্রকল্পের” সাড়ে ৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য।
রাঙামাটির এক বামপন্থী নেতা সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, যার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগ রাঙামাটি শহরে মানুষের মুখে-মুখে সেই ব্যাক্তি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য, হাস্যকর বিষয়।
স্থানীয়দের প্রশ্ন বিগত ১০ বছরে তারা এমন কি কাজ বা ব্যবসা করেছে যে, তারা রাতা-রাতি মাল্টিপল বিল্ডিং এর মালিক, গাড়ি মালিক একাধিক স্থানে জায়গা-জমিসহ সম্পদের মালিক বনে গেছে ? না-কি এসব দুর্নীতিবাজদের কাছে আলাদিনের চেরাগ আছে ?
একটি জাতীয় রাজনীতিক দলের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, রাঙামাটিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বা দলের পদ-পদবি ব্যবহার করে যারা দুর্নীতি করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া এছাড়া ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা এবং কেন্দ্র যারা রাজনৈতিক দল গুলোর পদে রয়েছে তাদের সবার সম্পদের হিসেব নেয়া হোক।
তারা আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটাই দাবি রাঙামাটি জেলায় দুর্নীতিতে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হোক। তাহলেই বাস্তবায়িত হবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত চলমান শুদ্ধি অভিযান।