বুধবার ● ২৭ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা মামলায় ৭ আসামির মৃত্যুদণ্ড : খালাস-১
হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা মামলায় ৭ আসামির মৃত্যুদণ্ড : খালাস-১
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা বহুল আলোচিত গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলা মামলায় ৭ আসামিকে (আট আসামি) মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।
আজ বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এ আদেশ দেন।
মামলার ৭ আসামি হলেন-জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। এদের মধ্যে কেউ পলাতক নেই।
এরআগে এদিন সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে প্রিজন ভ্যানে কারাগার থেকে তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়।
গত ১৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এরপর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রায় ঘোষণার এদিন ধার্য করেন।
চার্জ (অভিযোগ) গঠনের পর থেকে মোট ৫২ কার্যদিবসে সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্কসহ সব কার্যক্রম শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে পৌঁছে। জঙ্গি হামলার তিন বছর চার মাস ২৬ দিন পর চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. গোলাম ছারোয়ার খান (জাকির) বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। তাই সব আসামির শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে দুই পুলিশসহ দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দু’জনের মৃত্যু হয়।
এছাড়া হামলায় অন্তত ৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ডে’ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। অভিযানে এক জাপানি ও দুই শ্রীলংকানসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।
জঙ্গি হামলার ঘটনায় ওই বছরের ৪ জুলাই গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর এ চার্জশিট দাখিল করেন। ঘটনায় জড়িত ‘চিহ্নিত’ বাকি ১৩ জন এরই মধ্যে বিভিন্ন অভিযানে নিহত হওয়ায় তাদের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়।
এরপর গত বছরের ২৬ নভেম্বর এ মামলায় আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর শেষ হয়।
গত ৩০ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতের কাছে আট আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। এরপর চলতি মাসের ৬ নভেম্বর এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চান। আর ১৭ নভেম্বর এ মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়। মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।
আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হলি আর্টিজানে হামলা: আদালত
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক মজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে তথাকথিত জিহাদ কায়েমের লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিপন্ন করার জন্য জনমনে আতঙ্ক তৈরি ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তামিম চৌধুরীর পরিকল্পনায় নব্য জেএমবি সদস্যরা গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলা চালায়। তারা নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে গ্রেনেড, আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো চাপাতি দিয়ে ১৭ জন বিদেশি ও ৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে। অনেককে গুরুতর আহত ও জিম্মি করে।
হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনা ও সমন্বয়কারী হিসেবে তামিম চৌধুরীর নাম উঠে এসেছে আদালতের পর্যবেক্ষণে। আদালত বলেন, আসামি আসলাম হোসেন র্যাশ তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উল্লেখ করে, ‘আমি তখন তামিম ভাইয়ের কাছে গুলশান বা কোনো কূটনৈতিক এলাকায় আক্রমণের উদ্দেশ্য জানতে চাই। তামিম ভাই বলে যে আমাদের সংগঠন নব্য জেএমবি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দ্বারা অনুপ্রাণিত। আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই গুলশান কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করা প্রয়োজন।’ আদালত বলেন, এ থেকে প্রতিষ্ঠিত হয় যে তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বেই হলি আর্টিজানে হামলা সংঘটিত হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ে সরকার সন্তুষ্ট: আইনমন্ত্রী
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সরকার সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। বাংলাদেশে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটলে যে দ্রুত তার বিচার করা হয়, সেটিও এই রায়ের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে প্রমাণ করা গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বলতে চাই, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। এই রায়ের মাধ্যমে আমরা সারাবিশ্বের কাছে প্রমাণ করতে পেরেছি, বাংলাদেশে এরকম হত্যাকাণ্ড ঘটলে অত্যন্ত দ্রুত তার বিচার হয়। সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সঠিক বিচার করা হয়।
রায় অনুকরণীয় হয়ে থাকবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলার বিচারের রায় অনুকরণীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
হলি আর্টিজান হামলা মামলার রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে এ কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, ‘এই রায় সন্ত্রাস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। গুলশানে হামলার ঘটনায় আমরা সন্ত্রাসীদের বিচারের মুখোমুখি করেছি। ইউরোপ-আমেরিকায় এমন ঘটনায় সবাইকে মেরে ফেলা হয়। তবে আমরা কিছু মেরেছি, আর বাকিদের বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।’