শনিবার ● ৩০ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » চলনবিলের শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে
চলনবিলের শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে
পাবনা প্রতিনিধি :: মৎস্যভান্ডার বলে খ্যাত পাবনার চাটমোহরসহ বিশাল চলনবিলের উঁচু অংশের পানি শুকিয়ে গেছে। সেখানে চলছে রবিশস্যের চাষাবাদ। তবে নিচু নালা ও খালগুলোতে এখনো পানি আছে। ধরা পড়ছে শোল, বোয়াল, পুঁটি, খলশে, চেলা, ট্যাংরা, টাকি, বাইমসহ দেশীয় প্রজাতির নানা মাছ। ব্যস্ত জেলেরা মাছ ধরার ফাঁকে ফাঁকে বিলের মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করছেন। চলনবিলের এই শুঁটকির চাহিদা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। রপ্তানি করা হবে আমেরিকা, মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে। চাটমোহর উপজেলার নটাবাড়িয়া গ্রামের মৎস্যজীবী জিন্দার আলী, মিজানুর, সাইদুলসহ অন্যরা বলেন, বিল থেকে মাছ না ধরলেও পাইকারিভাবে পুঁটি মাছ কেনেন স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে। এরপর প্রতি মণ শুঁটকি তৈরি করতে তাঁদের খরচ হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। পরে সেগুলো মানভেদে প্রক্রিয়াজাত করেন। একেক মানের শুঁটকি বিক্রি করেন প্রতি মণ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকায়। তারা বলছিলেন, উৎপাদন খরচ বাদ দিয়েও প্রতি মণ শুঁটকি থেকে গড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করেন তারা। তবে এবার বিলে মাছের সংকটের কারণে অনেক চাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু চাতালে মাছ শুকানো হচ্ছে। চলনবিলের চাটমোহর উপজেলার বোয়ালমারী, ধানকুনিয়া, নটাবাড়িয়া, চরনবীনসহ অন্যান্য গ্রামের অনেকেই এখন শুঁটকির ব্যবসা করেন।
মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পাবনার বিভিন্ন বিল ও নদ-নদী থেকে প্রতিবছর প্রায় ২০০ মেট্রিক টন শুঁটকি তৈরি হয়। এর মধ্যে চলনবিল অঞ্চল থেকে পাওয়া যায় প্রায় ১৩০ থেকে ১৩৫ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।
উপজেলার কিনু সরকারের জোলার পাড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, স্থানীয় লোকজন বিল থেকে মাছ ধরার পর তা পাইকারি বিক্রি করেন শুঁটকির চাতালে। উপজেলার নটাবাড়িয়ার শুঁটকি চাতালের ব্যবসায়ী হজরত আলী হাজু জানান, চাতালে আসার পর মাছগুলোকে শুঁটকিতে পরিণত করা হয়। এরপর সেগুলো ভাগ করা হয় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে। ভালো মানের শুঁটকি বিক্রি হয় ঢাকার বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। পরে ওই ব্যবসায়ীরা আরেক দফায় প্রক্রিয়াজাত করে আমেরিকা, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, দুবাইয়ে রপ্তানি করেন। অন্যদিকে মধ্যম মানের কিছু শুঁটকি সরাসরি রপ্তানি করা হয় ভারতে। আকার ও মানভেদে শুঁটকি দামেও ভিন্নতা আছে। পুঁটি, খলশে, চেলাসহ ছোট মাছের প্রতি মণ শুঁটকি ৬ থেকে ১৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর বাইম, বোয়ালসহ বড় মাছের প্রতি মণ শুঁটকি বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়।
শুঁটকি চাতালের ব্যবসায়ীরা জানান, চলনবিল অঞ্চল থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ টন শুঁটকি দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হয়। এ অঞ্চল থেকে গড়ে প্রতি সপ্তাহে ৬০ টন শুঁটকির উৎপাদন হয়। চাতাল ব্যবসায়ীরা শুঁটকি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
চাটমোহর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বাজারে চলনবিলের মিঠা পানির শুঁটকির সুনাম আছে। শুঁটকি সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও নীতিমালা তৈরি করা গেলে এ খাত থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব।