বুধবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » পাবনা » চাটমোহরে জমি নিয়ে সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত-১০
চাটমোহরে জমি নিয়ে সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত-১০
পাবনা প্রতিনিধি :: পাবনার চাটমোহরের বড় শালিখা এলাকায় বিরোধ পূর্ন জমি নিয়ে সংঘর্ষে আজ বুধবার সন্ধ্যায় ২ পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়েছে।
এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ২ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। আহতরা হলেন, পুলিশের এএসআই ওয়াসিম (৩৫), কনস্টেবল আলমগীর হোসেন (৩০), বড় শালিখা এলাকার মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে উম্মে সৈয়দা মুর্শিদা (২০), আঃ বাতেনের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন (৪৬), হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী সোহাগী খাতুন (২০),হাবিবুর রহমানের মেয়ে কনা (২৬), ইমন আলীর ছেলে রফিক আলী (৩৯), মৃত কাশেম আলীর ছেলে হোসেন আলী (৩০) । আহতদের চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যান্য আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয় হয় ।
এলাকাবাসী ও থানা সূত্রে জানা গেছে, বড় শালিখ এলাকার মৃত ইমান আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন কায়েম গং ও মৃত দিরাজ প্রাঃ ছেলে মোসলেম, আমজাদ ও জামাই হাবিবুর গং এর মধ্যে ৫ শতাংশ জমি নিয়ে দীর্ঘ দিন বিরোধ চলে আসছিল। বুধবার বিকেলে উভয়পক্ষ উত্তেজিত হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের কথা না শুনে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েপরে।
চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ নাসির উদ্দিন জানান, ঘটনায় পুলিশ সহ ১০/১২ জন আহত হয়েছে। আমরা পরিবেশ শান্ত করতে বাতেন প্রামানিকের ছেলে সাদ্দাম (৩০) ও হাফিজুর রহমানের ছেলে সোহেল আলী (৩৫) কে আটক করেছি। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।
চলনবিল অঞ্চলে বিনাহালে রসুন চাষ নিয়ে ব্যস্থ নারীরা
পাবনা প্রতিনিধি :: চলনবিলের দু্িক্ষণ অঞ্চল জুড়ে চাটমোহর, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম বিনাচাষে কৃষক রসুনের আবাদ করেন। বিলের পানি কার্তিকের শেষে নদীতে নেমে যায়। অগ্রাহায়নের শুরুতে বিলের পলিমাটি শুকিয়ে ওঠে। তখন কৃষক কোন রকম হালচাষ ছাড়াই রসুন রোপন করেন। এবার ত্রুটিপূর্ণ স্লাইসগেটের কপাট খুলতে দেরী ও বাঁধের কারনে বিল থেকে পানি নেমেছে বিলম্বে। তাই রসুনের আবাদ শুরু করতে হয়েছে দেরীতে। এখন চলছে রসুন রোপনের ভরা মৌসুম। বিলের যেদিকে চোখ মেলা যায় সেদিকেই দেখা যাবে নারী-পুরুষ মিলে জমিতে লাইন ধওে বসে বসে রসুনের কোয়া রোপন করছেন। এ সময় বোনা আমন ধান কাটার পর কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যায়। এখন আর রসুন আবাদ তেমন লাভজনক না হলেও কৃষক ছাড়তে পারেনি রসুনচাষ।
সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে রসুন আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই রসুনের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। উপসহকারী কর্মকর্তা জানান, উৎপাদন খরচ বাড়লেও রসুনের দাম বড়ছে না। ফলে কৃষক লাভবান হতে পারছে না। তবুও যদি দাম বাড়ে এই আশায় প্রতিবছর কৃষক রসুন আবাদ করছে। বীজ সংরক্ষন করছে।
চাটমোহর উপলোর ছাইকোলা ইউনিয়ন দক্ষিণ পাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান সরকার জানান, এবার বীজ, শ্রমিক, সার, কীটনাশক, সেচসহ মোট করচ হবে বিঘায় প্রায় ২১ হাজার টাকা। তিনি আরো জানান, অনেক কৃষকই এখন রসুনের ভেতর সাথী ফসল হিসেবে বাঙ্গি চাষ করছেন। এতে রসুন-বাঙ্গি মিলে লাভবান হচ্ছেন।
বিনা হালে উৎপাদন পদ্ধতি ঃ ছাইকোলা বাজার পাড়ার বাসিন্দা রসুন আবাদী ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার অবসরপ্রাপ্ত আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, কার্তিক মাসের শেষে বিল থেকে পানি নেমে গেলে পলি জমা কাঁদা মাটিতে বিনা হালে/চাষে সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপন করা হয়। রোপন শেষে ধানের নাড়া(খড়) বিছিয়ে দেওয়া হয়। এরও আগে জমিতে প্রতি বিঘা ২৫-৩০ কেজি টিএসপি, ২৫ কেজি পটাশ, ২০ কেজি জিপশাম ও ২ কেজি বোরন সার প্রয়োগ করা হয়। রোপনের ২৫-৩০ দিন পর বিঘা প্রতি ১৫-২০ কেজি ইউরিয়া সার দিয়ে পানি সেচ দেওয়া হয়। ৫০ দিন পর আবার দ্বিতীয় দফা ১২-১৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়।
রোপনের ৯৫-একশো দিন পর ফালগুন মাসের ১৫ তারিখ থেকে চৈত্র মাস পুরো চলে রসুন উত্তোলনের কাজ। রসুন মাঠ থেকে তুলে এনে উঠোনে বা খোলায় চড়া রোদে শুকোনো হয়। তারপর কৃষক রসুন গাছ সমেত ঝুটি বা বিয়েনী বেঁধে ঘরে সংরক্ষন করেন।
লাভ-ক্ষতি ঃ চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোকসেদ আলী রসুন চাষে লাভ-ক্ষতির একটা হিসেব দিলেন এভাবে- একবিঘা রসুন চাষে করচ হয় ১. বীজ ১০০ কেজি ৬ হাজার টাকা ২. সার- ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ, জিপশাম ও বোরন সব মিলিয়ে ৩ হাজার টাকা ৩. শ্রমিক ৬ হাজার টাকা ৪. সেচ ২ হাজার টাকা ৫. নাড়া(খড়) ১ হাজার টাকা। মোট খরচ প্রতি বিঘায় ২১ হাজার টাকা। রসুন বর্তমানে বিঘায় উৎপাদন হচ্ছে গড়ে ১৪/১৫ মন। সে হিসেবে প্রতি মন বর্তমান মূল্য ৬ হাজার টাকা ধরে হিসেব কসলে মূল্য দাঁড়ায় প্রায় লাখ টাকা। তিনি আরো বলেন, তাঁর মানে খরচ বাদে লাভ প্রতি বিঘাতে দাঁড়াচ্ছে ৮০ হাজার টাকা।