শনিবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ঈশ্বরগঞ্জে চোরের ভয়ে গরু আর পরিবার নিয়ে একঘরে বসবাস
ঈশ্বরগঞ্জে চোরের ভয়ে গরু আর পরিবার নিয়ে একঘরে বসবাস
উবায়দুল্লাহ রুমি, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে গরু চোরের ভয়ে গোয়াল ঘরের পরিবর্তে দুই হতদরিদ্র পরিবার গরু পালন করছে বসতঘরে। গত এক মাস ধরে উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের দরগাপাড়া ও থুলিয়াটি গ্রামে গরুচোর আতঙ্ক বিরাজ করায় দুইটি পরিবার এক সপ্তাহ ধরে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। জানা গেছে, গত শনিবার ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যার পর থুলিয়াটি গ্রামের মৃত ফজলুল হক ফকিরের ছেলে তোফাজ্জল হোসেনের (৪০) একটি ষাঁড় গরু নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবেশী দেখে ফেলায় গরু ফেলে পালিয়ে যায় চোরের দল। এর একদিন পর একই গ্রামের সিরাজ মিয়ার গরু নিয়ে যাওয়ার সময় দেখে ফেলায় পালিয়ে যায় চোরের দল। এরপর থেকেই দুই পরিবার গরু পালন করছেন বসত ঘরে। সরেজমিন জানা যায়, পেশায় ইটভাটার শ্রমিক তোফাজ্জলের বাবা এক বছর পূর্বে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সহায় সম্বল বলতে ১৩ শতাংশের ভিটে বাড়িটুকু। স্ত্রী দুই ছেলেমেয়ে ও প্রতিবন্ধী বোনকে নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতপাত করছেন তিনি। বাবার চিকিৎসার সময় প্রায় অর্ধলক্ষ টাকার ঋণ পরিশোধের তোফাজ্জলের একমাত্র অবলম্বন অস্ট্রেলিয়ান জাতের আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার টাকা মূল্যের এই ঘাঁড় গরুটি। তোফাজ্জলের স্ত্রী ইয়াসমীন (৩০) জানান, গত শনিবার দিন সন্ধ্যার পর চোরের দল আমাদের ষাঁড় গরুটি নিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবেশী নূরনবী ঠের পেয়ে ডাক-চিৎকার দেওয়ায় পালিয়ে যায় চোর। আমরা আশায় দিন গুণছি,গরুটি বড় হলে বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করব; তাই গরুর নিরাপত্তায় আমরা বসতঘরে গরুর সাথে বাস করছি। একই বাড়ির দিনমজুর আল আমীনের স্ত্রী শেফালি বেগম (২৫) জানান, কী করব ভাই চোরের ডরে গরু আর পোলাপান নিয়া একঘরে বাস করছি। এলাকায় গরুচুরির উপদ্রব বাড়ায় গোয়ালঘরে গরু পালতে সাহস পাইনা। প্রতিবেশী দরগাহপাড়া গ্রামের সুরুজ আলী ফকির (৬৫) জানান, এলাকায় গরুচোর আতঙ্ক থাকায় আমি প্রতিরাতে দুই তিনবার উঠে গোয়ালঘর চেক করি। একই গ্রামের আব্দুস সামাদ ফকির (৪০) জানান, গত ৪ ডিসেম্বর রাতে আমার গোয়ালঘরের দরজা খোলার সময় ঠের পেলে গরুচোরের দল পালিয়ে যায়। ইউপি সদস্য ফজলুল হক ফকির জানান, গত ২ নভেম্বর রাতে গরুচোরের দল আনুমানিক ১ লক্ষ টাকা মূল্যের আমাদের দুইটি গরু নিয়ে যায়। এরপর থেকেই এলাকায় গরুচোর আতঙ্ক বিরাজ করছে। জাটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল হক ঝন্টু জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না, গরুচুরি রোধে আমি আজই থানার ওসি- এর সাথে কথা বলব। ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহম্মেদ কবীর হোসেন জানান, ওই এলাকায় গরুচুরির বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এলাকার খোঁজ-খবর নিয়ে অনতিবলম্বে গরুচুরি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি।